
শোকাবহ সেই ঘটনার পর জেইনহোউম মর্গের সামনে বিপর্যস্ত সমর্থকেরা। “এই ছবি প্রচণ্ড বেদনাদায়ক” টুইট করেছে @হিবাজাদা। যে টুইটারে এই ছবি প্রদর্শন করে।
কায়রোর বিমান বাহিনী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক ফুটবল খেলার সময় সেখানে প্রবেশের উদ্দেশ্যে যখন মিশরীয় পুলিশ দর্শকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে সে সময় প্রায় ৪০ জনের মত ব্যক্তি নিহত হয়।
স্যোশাল মিডিয়ায় নেট নাগরিকদের প্রদর্শন করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে পুলিশ দর্শকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে, যারা ধাতব বেড়ার পেছনে ভীড় করে সমবেত হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে পুলিশ খুব কাছ থেকে জনতাকে লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি করে এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে, রোববারের এই ঘটনায় দৌড়ে পালাতে গিয়ে অনেকে পদদলিত হয়েছে- যে অভিযোগ মিশর সরকার অস্বীকার করেছে। এই ঘটনায় কত জনের মৃত্যু ঘটেছে এই নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। আল জাজিরার এই সংবাদ বলছে যে অন্তত ৪০জন নাগরিক নিহত হয়েছে, অন্যদিকে ডেইলি নিউজ ইজিপ্টের এই সংবাদ জানাচ্ছে ২২ থেকে ২৮ জনের নিহত হওয়ার সংবাদ।
স্যোশাল মিডিয়া এই বেদনাদায়ক ঘটনাকে “গণহত্যা” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে মিশরীয়রা আর্তনাদ করছে যে মিশরীয় রক্ত কত না সস্তা হয়ে গেছে এবং কি ভাবে মিশরীয় পুলিশদের এই ধরনের “অপরাধের” জন্য কখনো দায়ী করা হয় না।
মিশরীয় নাগরিকদের প্রতি অনেকটা তাচ্ছিল্য করে, যখন স্টেডিয়ামের বাইরে সমর্থকরা খুন হচ্ছিল তখন স্টেডিয়ামে জামালেক বনাম এনএপপি-এর মাঝে খেলা চলছিল।
মিশরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মতে আল্ট্রাস হোয়াইট নাইট নামে পরিচিত জামালেক সমর্থকদের টিকেট ছাড়া স্টেডিয়ামে প্রবেশের চেষ্টা থেকে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
এরহাব এক সমর্থকের ছবি প্রদর্শন করেছে যে এই ঘটনায় নিহত হয় কিন্তু তার কাছে খেলার টিকেট ছিল।
إسلام عماد ربنا يرحمه و يجعل مثواه الجنه و الغريبه يا أخي معاه تذكره pic.twitter.com/gpD0rgLeNH
— ♛ الريــس إيهــاب ♛ (@drhouba) February 9, 2015
ইসলাম ইমাদ, তার আত্মা শান্তিতে ঘুমাক। বিষয়টি বিস্ময়কর যে তার কাছে টিকেট ছিল
কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সমর্থকেরা নিহত হয়েছে। অনেকে এই ছবিটি প্রদর্শন করেছে পরে যা ছড়িয়ে পড়ে, যে ছবি মন্ত্রণালয়ের দাবীকে সন্দেহের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
#محلب: نرفض اتهام #الداخلية بقتل مشجعي #الزمالك ؟!
فعلا شايفين حتى الصورة بتقول ايه ؟
#مجزرة_الدفاع_الجوي pic.twitter.com/QMvsN976xA
— ناشط مش سياسى (@AhmedKhatab89) February 9, 2015
মিশরের প্রধানমন্ত্রী মাহলেব: “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে সমর্থকদের নিহত হওয়ার অভিযোগ আমরা অস্বীকার করছি”,
সত্য, এমনকি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এই ছবি কি বলছে।
“ভিড়ের চাপে” সমর্থকদের মৃত্যু ঘটেছে সরকারের এমন যুক্তি খণ্ডনে অমর সেই একই ছবি প্রদর্শন করেছে।
Min of Interior says they died because of overcrowding.
Let this picture speak for the dead #Egypt #Zamalek pic.twitter.com/uS7zAmrwJR
— Amr No 2 CC (@Cairo67Unedited) February 8, 2015
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলছেন যে ভিড়ের চাপে এরা মারা গেছে। এই ছবিটি মৃতদের জন্য কথা বলে উঠুক।
আহমেদ এল সাইয়েদ তার টুইটার অনুসারীদের অনুরোধ জানিয়েছেন যেন তারা নিজেদের উক্ত সমর্থকদের পরিস্থিতি কল্পনা করে দেখে:
تخيل انك بتجري في المكان المقفول الضيق ده بالعدد ده وبيترمي عليك قنابل غاز وخرطوش،قتلونا بالتدافع
#مجزرة_الدفاع_الجوي pic.twitter.com/Cevlj2fCTe
— ahmed el sayed (@ahmedcoman5) February 8, 2015
কল্পনা করুন আপনি এক ভিড়ে পরিপূর্ণ বদ্ধ এলাকায় দৌড়াচ্ছেন, সে সময় আপনার প্রতি টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে মারা হল এবং শটগান থেকে গুলি করা হল। তারা আমাদের [ভীড় তৈরী করে] পদদলিত করে মেরেছে।
এবং সাংবাদিক বোরজু দারাঘাই তার ২৮৬০০ টুইটার অনুসারীর কাছে খেলার সময় “পুলিশের বাজে আচরণ তুলে ধরার দারুণ একাউন্ট” তুলে ধরেছে:
Chilling accounts of police misconduct at #Egypt football game: "One died right beneath me" http://t.co/27orajvfFP pic.twitter.com/Y7A2FvCvsg
— Borzou Daragahi (@borzou) February 9, 2015
মিশরীয় ফুটবল খেলায় পুলিশের দুর্ব্যবহার তুলে ধরার দারুণ সব একাউন্ট, একজন ঠিক আমার সামনে মারা গেল।
সালমা এলওয়ারদানেই তার ৭৮,৯০০ অনুসারীকে বলছে:
مفيش بلد في الدنيا بيتقتل فيها ٣٠ بني آدم في مباراة الشرطة هي اللي مامناها كمان وتطلع الشرطة تقول نرفض تحمل المسئولية
— Salma Elwardany (@S_Elwardany) February 9, 2015
এটা এই পৃথিবীর এক রাষ্ট্র নয় যেখানে পুলিশের প্রহরায় অনুষ্ঠিত এক খেলায় ৩০ জন নিহত হয়, পুলিশ যার দায়িত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
গালাল আমর বিস্মিত:
So a police officer thought "I'll just fire some teargas. What's the worst that could possibly happen?"
#Egypt pic.twitter.com/jhwnkOqO2C
— Galal (@GalalAmrG) February 8, 2015
তাহলে এক পুলিশ কর্মকর্তা মনে করতে পারে যে আমি কয়েকটা গুলি ছুড়ব, আর এতে এমন কি খারাপ ঘটবে?
আর রাশা আবদুল্লাহ একটা প্রশ্ন করেছে-এবং এর উত্তর দিয়েছে:
At least 22 now killed by security outside the gates of a football game in Egypt. Why? Because the police can.
— Rasha Abdulla (@RashaAbdulla) February 8, 2015
মিশরে এক খেলায় প্রবেশ পথের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ২২ জন নাগরিক নিহত হয়েছে, কেন? কারণ মিশরীয় পুলিশ তা করতে পারে।
আর এই ভিডিও যা ভিড ইজি ইউটিউবে শেয়ার করেছে,তাতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করছে :
https://www.youtube.com/watch?v=gquwi1MJx3M
এদিকে, লোবনা দারউইশ এই বেদনাদায়ক ঘটনাকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে “দাঙ্গা” এবং “সংঘর্ষ”-এর মত শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছে। সে তার ৬৪ হাজার অনুসারীর কাছে টুইট করেছে:
using terms like “riots” and ‘clashes” to refer to yesterday's events is bs.People didn't get the space or time to resist. it's was one way. — Lobna Darwish (@lobna) February 9, 2015
গতকালকের ঘটনাকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে “দাঙ্গা” এবং “সংঘর্ষের” মত শব্দ ব্যবহার একেবারে অর্থহীন। ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের কাছে না ছিল প্রতিরোধের জায়গা না ছিল তেমন সময়। এটা ছিল একপাক্ষিক এক ঘটনা।
অনেকে তাদের আত্মীয়দের হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা তুলে ধরছে যারা তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর সংবাদে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে
দি ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর-এর কায়রোর সংবাদদাতা লাভলাক টুইটারে তার ১,৪৮,০০০ অনুসারীর কাছে সেই সমস্ত পরিবারের ছবি প্রদর্শন করছে যারা পরেরদিন সকালে কায়রোর মর্গের সামনে তাদের প্রিয়জনের সংবাদের জন্য অপেক্ষা করছে:
Outside Cairo's morgue, families await news of those missing since last night's match. Some too distraught to speak: pic.twitter.com/guRgKBxbik
— Louisa Loveluck (@leloveluck) February 9, 2015
গতকালের খেলার পর থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার কায়রোর মর্গের সামনে অপেক্ষা করছে। কারো কারো অবস্থা এতটাই বিপর্যস্ত ছিল যে তারা কথা পর্যন্ত বলতে পারছিল না।
এক সিরিজ টুইটে, ভদ্রমহিলা ব্যাখ্যা করছে :
Today at Zeinhom morgue, atmosphere unlike anything I've felt in at least 12 visits. Silent, angry grief from fans gathered there. #zamalek — Louisa Loveluck (@leloveluck) February 9, 2015
বিগত ১২ বছর ধরে জেইনহোম মর্গের সামনে আমি কোনদিন এতটা আজকের মত এত ভাব অস্বাভাবিক পরিবেশ দেখিনি। নীরব, ক্ষুব্ধ শোকার্ত ভক্তেরা সেখানে জড়ো হয়েছে।
#pt Several fans who had been at last night's match sat slumped against the wall. Some with heads buried in laps, others staring into space.
— Louisa Loveluck (@leloveluck) February 9, 2015
গতকালের ম্যাচের বেশ কয়েকজন সমর্থক দেওয়ালের উল্টো দিকে বসে ছিল। কারো মাথা হাঁটুতে গাঁথা ছিল, অন্যরা অনিমেষনেত্রে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।
#pt “I ask the police – where is my son? Where is he?” shouted one father, before entreating crowd to remember description of 20yr old son. — Louisa Loveluck (@leloveluck) February 9, 2015
“আমি পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলাম- আমার ছেলে কোথায়? সে কোথায়?” জনতার মাঝে তার ২০ বছর বয়স্ক সন্তানের বর্ণনা প্রদান করে তাদের কাছে অনুনয় করছিল।
তামারা আলরিফাই এক পিতার এই ছবিটি প্রদর্শন করছে যে মাত্র মর্গে তার সন্তানকে চিহ্নিত করেছে :
His only son didn't come home from a match RT @ianjameslee:"He goes to see a game & I take him from a morgue" #Egypt pic.twitter.com/MY3zDpN272”
— Tamara Alrifai (@TamaraAlrifai) February 9, 2015
তার একমাত্র ছেলে খেলা শেষে বাড়ী ফিরে আসেনি। “ সে একটা খেলা দেখতে গিয়েছিল আর আমি তাকে মর্গ থেকে বাড়ীতে নিয়ে যাচ্ছি।
মোহান্নেদ ক্ষুব্ধ এই কারণে এ রকম বেদনাদায়ক ঘটনার পরও যে জীবন এমন ভাবে বয়ে যাচ্ছে যেন কিছু ঘটেনি। সে তার ২৮০০০ টুইটার অনুসারীর কাছে অনুনয় করছে:
كان لازم في وقت الحدث يتلغي الماتش، يتلغي الدوري، يطير إتحاد الكورة، يطير وزير الرياضة، يطير وزير الداخلية، بعدين نتفاهم.
— Mohannad (@mand0z) February 9, 2015
যখন এই ঘটনা ঘটে তখনই খেলা এবং লীগ বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল এবং ক্রীড়া ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা উচিত ছিল…আর তারপর আমরা হাঁটতে পারব।
এবং সে যোগ করেছে:
حوادث زي دي بتستقيل فيها حكومات كاملة، مش وزير داخلية عامل فيها صاحب العزبة ومش عايز يتزحزح. — Mohannad (@mand0z) February 9, 2015
এই রকম এক ঘটনায় পুরো মন্ত্রীসভার পদত্যাগ করা উচিত ছিল, কেবল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নয়, যে মনে করে সে এই জমিদারির মালিক এবং এখান থেকে নড়তে অস্বীকার করেছে।
কিন্তু মোহাম্মদ আলসাফিন বলছে সকল খুনীরা একই রকম।
الي قتلو الناس في رابعة و محمد محمود و ماسبيرو و الدفاع الجوي و المنصة والتحرير هم نفس القتلة على فكرة.
— Mohammad Alsaafin (@malsaafin) February 9, 2015
যাই হোক, রাবা,মোহাম্মদ মাহমোউদ এবং মাসেপ্রো ও বিমান বাহিনী স্টেডিয়াম এবং তাহরির-এ যারা মানুষ খুন করেছে তারা সেই একই খুনি।
ফেব্রুয়ারি ২০১২-এ পোর্ট সাইদে স্টেডিয়ামের বাইরে ঘটা একই ধরনের বেদনাদায়ক এক ঘটনার পর এই প্রথম আবার সমর্থকদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল। উক্ত ঘটনায় আল আহলি ক্লাবের ৭৪ জন সমর্থক আল মাসরির সমর্থকদের হতে নিহত হয়, যারা ছুরি, বোতল, পাথর এবং আগুনের গোলা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়, যখন পুলিশ স্টেডিয়ামের দরজা বন্ধ করে দেয় তখন স্টেডিয়ামের ভেতরে খুনের এই উন্মত্ততা চলতে থাকে। এই ঘটনার পর সরকার দুই বছরের জন্য ঘরোয়া লীগ বন্ধ করে রাখে। রোববারের ঘটনার পর একই কৌশল গ্রহণ করা হয়, আরো একবার মিশর তার ফুটবল লীগ স্থগিত করে রাখে।
এদিকে, পোর্ট সাইদের এই গণহত্যার ঘটনায় করা মামলা পোর্ট সাইদের আপরাধ আদালতে মামলা চলছে, ৭ মার্চ-থেকে ১০ মার্চ এর শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে।