লাল রঙের তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) নেপালে রান্নার কাজে ব্যবহার হয়, যা হঠাৎ করে দেশটির রাজধানী কাঠমুন্ডু এবং অন্যান্য এলাকায় সবচেয়ে কাঙ্খিত বস্তুতে পরিণত হয়েছে, যার জন্য এর দুষ্প্রাপ্যতা দায়ী।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এলপিজি গ্যাসের সঙ্কট শুরু হয় এবং ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। নেপালের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তেল সংস্থা (ন্যাশনাল অয়েল কর্পোরেশন)–এর সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রহণ করা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ সত্ত্বেও, গ্রাহকেরা সহজে রান্নার গ্যাস পাচ্ছে না এবং চোরা বাজারে এর দাম আকাশছোঁয়া।
নেপালের গৃহস্থালিতে জ্বালানী কাঠ দিয়ে মূলত রান্নার কাজ সারা হয়, দেশটির ৭০ শতাংশের বেশী নাগরিক এই জ্বালানী কাঠে রান্না করে, যার পরে রয়েছে এলপিজি-এর অবস্থান, যা দেশটিতে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, রান্না ছাড়াও এলপিজি শীতকালে ঘর গরম কাজে ব্যবহার করা হয় কারণ তা বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়ে সস্তা।
এনওসি ডিলারের মাধ্যমে দেশজুড়ে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করে কিন্তু চোরা কারবারিদের মোকাবেলা করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি নিজে এখন কাঠমুন্ডু উপত্যকায় ন্যায্যমূল্যে সরাসরি সিলিন্ডার বিক্রি করছে। তবে যেহেতু বিরামহীন ভাবে এই গ্যাস ব্যবহারের কারণে সঙ্কট রয়ে গেছে। গ্যাস বিক্রেতা এবং বোতলজাত কোম্পানি প্রয়োজনীয় পরিমাণ বুলেটের (পাত্রে চাপ দেওয়ার এক নালাকার উপাদান) অভাবকে এর জন্য দায়ী করছে যেটি ভারত থেকে জ্বালানী আমদানির জন্য ব্যবহার করা হয় যা এই সঙ্কটের প্রাথমিক কারণ।
সরকার নিশ্চিত করেছে যে ভারত থেকে যথেষ্ট পরিমাণ এলপিজি-এর আমদানির আয়োজন করা হয়েছে। তবে গ্রাহকেরা দুই মাসের মজুত সীমিত এলপিজি সরবরাহ শেষে ব্যতিবস্ত হয়ে পড়েছে। অনলাইনে ব্যাঙ্গাত্মক ছবি এবং প্রতিরূপ তুলে ধরে নেপালের কার্টুনিস্ট এবং টুইটার ব্যবহারকারীর এই পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বিবিসির এক সাংবাদিক কমল কুমার টুইট করেছে :
हेरिबक्स्योस त, जनतालाई ग्यास दिन रिबन काट्ने तयारी । मन्त्री ज्यूको नाम इतिहासमा हीराकै अक्षरले लेखिने भो । pic.twitter.com/oMIJo7djQW
— Kamal Kumar (@qamalqumar) January 25, 2015
দেখুন। জনতার মাঝে গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণে ফিতা কাটার জন্য প্রস্তুত। মন্ত্রীর নাম ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
রান্নার গ্যাস পাওয়ার জন্য অসীম লম্বা এক লাইন ধরার বিষয়টিকে উল্লেখ করে নেপালের দৈনিক অন্নপূর্ণা বসু ক্ষিতিজ-এর এক কার্টুন পোস্ট করেছে।
अन्नपूर्ण पोस्ट् दैनिकमा आज प्रकाशित @basukshitiz को कार्टून.. http://t.co/rJ89Z8Bst4 pic.twitter.com/MB8KL9PvWq
— Annapurna Post (@Annapurna_Post) January 27, 2015
উক্ত কার্টুনের পুরুষটি বলছে আমার জন্য একটা দাড়ি কাটার রেজর পাঠিয়ে দিয়, মনে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে আমারা পালা আসছে না।”
পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে, সরকারে উপর চাপ প্রয়োগের জন্য নাগরিকরা সৃষ্টিশীল ধরনের কিছু প্রতিবাদ গ্রহণ করেছে।
শান্তি নেপাল ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করেছে যেটিতে দেখাচ্ছে গ্যাস পেতে যে লম্বা লাইনের সৃষ্টি হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীরা সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবী জানাচ্ছে।
http://youtu.be/fx04Po1aFo4
কালোবাজারে রান্নার গ্যাস বিক্রি হওয়ার ঘটনায় সরকার চোখ বন্ধ করে থাকায় আইন প্রণেতারা সরকারকে অভিযুক্ত করছে, তারা বলছে যে এই ঘটনার জন্য বর্তমান সঙ্কটকে অভিযুক্ত কর ভারতীয় তেল সংস্থাকে (ইন্ডিয়ান ওয়েল করপোরেশনকে) নয়।
কালোবাজারিকে অভিযুক্ত করার জবাবে কার্টুনিস্ট রাবিন্দ্রা মানাধার টুইট করেছে:
कालोबजारीले बजारको सब ग्यास खाए, परिणामः तिनका अपानवायुले उपभोक्तालाई उडाइदियो । pic.twitter.com/5LrBNLr18Q
— Rabindra Manandhar (@Robindarr) February 1, 2015
কালোবাজারিরা বাজারে সকল গ্যাস খেয়ে ফেলেছে। ফলাফলঃ তারা তাদের বায়ুত্যাগের দ্বারা বাজারের সকল ক্রেতাদের উড়িয়ে নিয়ে গেছে।
গ্যাস সঙ্কটের কারণে, রাস্তায় রান্না করার গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে চলা নাগরিকদের জন্য এক গর্বিত মূহুর্তে পরিণত হয়েছে।
সনম চিত্রকার একজন বিনিয়োগকারী, যিনি টুইট করেছেন:
can there be better romantic ride than this? #gas #nepal pic.twitter.com/g6BNV3A3nK
— Sanam Chitrakar (@ChitrakarSanam) January 30, 2015
এর চেয়ে রোমান্টিক বাড়ী গমন কি আর আছে?
এই এলপিজি উৎপীড়ন দেশটির প্রতিটি রান্নাঘরে একে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উপাদানে পরিণত করেছে। বিদ্রূপাত্মক ভাবে এই বিষয়টিকে তুলে ধরে রাজেশ কেসি টুইট করেছে:
समात, समात ! यो मान्छे मेरो भान्छा छिरेर आफ्नो खाना पकायो !! (Archived) #GasShortage pic.twitter.com/RNaka3VZ3n
— PHALANO™ (@phalano) January 28, 2015
ওকে, ধর ধর, ওই লোকটা চুপ করে আমার রান্নাঘরে প্রবেশ করে তার খাবার রান্না করে নিয়েছে।
আগে রাস্তায় রেখে যাওয়া গ্যাস সিলিন্ডার কেউ ছুঁয়েও দেখত না কিন্তু সঙ্কটের কারণে এখন সকলে একটা পূর্ণ সিলিন্ডারকে একা রেখে কোথাও যেতে ভয় পায়।
দি ক্লাউড ফ্যাক্টারির মার্কেটিং প্রযুক্তিবিদ আকার অনিল ঘিমিরে টুইট করেছে:
Define Bravery? Parking a bike, loaded with cooking gas cylinder, in Kathmandu. 😉 #Nepal pic.twitter.com/MWTRwj86AN
— Aakar Anil (@aakarpost) January 27, 2015
সাহসিকতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে চান? তাহলে কাঠমুন্ডু-তে গ্যাস ভরা এক সিলিন্ডার সহ মোটর সাইকেল কোন এক স্থানে পার্ক করে রাখুন।
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন নেপাল সাহসিকতা এবং ধৈর্য্যের সাথে এই সঙ্কট মোকাবেলা করে যাচ্ছে। আনন্দের সংবাদ হচ্ছে যে ভারত এখন নেপালে এলপিজি ও গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের চিন্তা করছে যাতে সেখানে মূল্যবান রান্নার গ্যাস সবসময় সরবরাহ করা সম্ভব হয়।