উপরের ছবিতে যে ছোবড়া দিয়ে বানানো টব দেখা যাচ্ছে সেটি ছোবড়ার আঁশ বা নারকেলের ছোবড়া দিয়ে বানানো হয়েছে, যা নারকেল ছিলে ফেলার পর অবশিষ্ট হিসেবে রয়ে যায়। ছোবড়া হচ্ছে নারকেলে মাঝে থাকা এক প্রাকৃতিক আঁশ, যেগুলোকে ভেতরে শক্ত কাঠামো থেকে আলাদা করে ফেলে হয় যা এটি নারকেলের বাইরে আবরণের অংশ। এগুলো দিয়ে মেঝেতে বিছানোর পাপোশ, দরজায় ঝোলানোর পাপোশ, ব্রাশ, তোষক, পাকানো দড়ি এবং হাতে বোনা গালিচা বানানো যায়।
নারকেলের যে বাইরের আবরণ এবং তার অবশিষ্ট অংশের এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে এই ছোবড়ার আঁশ, যাকে ছোবড়ার শাস বা গুঁড়া হিসেবে অভিহিত করা হয়, যা পরিবেশে সহজে বিনষ্ট হয়ে যায় বা পচনশীল। ছোবড়ার গুঁড়াকে এক সময় বর্জ্য বা কাজে লাগানো যায় না এমন এক উপাদান হিসেবে দেখা হত, কিন্তু এখন এটিকে মাটির গুণ ফিরিয়ে আনার কাজে লাগানো হচ্ছে। এখন মাটির উপরে রোপণ সহায়ক স্তর তৈরী এবং মাটি ছাড়াই প্রাকৃতিক খনিজের পুষ্টির মাধ্যমে চাষের এক উপাদান হিসেবে ছোবড়ার গুঁড়ার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে, যার এক উদাহরণ হচ্ছে এগুলো উক্ত ছোবড়ার পাত্রের ভেতরে ব্যবহার করা। যদি জৈবিক কোন জীবাণু ব্যবহার করে ছোবড়ার আঁশটাকে কৃত্রিমভাবে পচানো হয়, তাহলে ৩০ দিনের মধ্যে তা শতভাগ জৈবিক সারে পরিণত হবে, যা উক্ত গাছটিকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে।
ছোবড়ার দিয়ে বানানো টব ব্যবহার করার মাধ্যমে এটিতে জন্মানো চারাগাছ টব সহ সরাসরি বাগানে বপন করা সম্ভব আর এর মাধ্যমে এক হিসেবে ১০০ মিলিয়ন প্লাস্টিকের টব বাঁচানো সম্ভব, যার শেষ পরিণতি হচ্ছে আবর্জনার স্তূপে।
ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রচুর নারকেল গাছ (Cocus nucifera) জন্মে, তবে ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা এবং ফিলিপাইনে মূলত এর বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকে নারকেলে ছোবড়া রশি এবং জাহাজের পাল টানানোর দড়ি বানানোর কাজে ব্যবহার হত এবং ভারত ও আরব দেশগুলোতে এখনো যা দেখা যায়।
এই ইউটিউব ভিডিও প্রদর্শন করছে কি ভাবে নারকেল ছিলে তা থেকে এর ছোবড়া আলাদা করা হচ্ছে:
ভারত বিশ্বের ৬০ শতাংশ নারকেলের ছোবড়ার থেকে তৈরী আঁশের সরবরাহকারী। বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর যে নারকেলের ছোবড়া প্রস্তুত হয়, তার ৯০ শতাংশ উৎপন্ন হয় ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। ২০১১১-১২ সালে ছোবড়ার আঁশ রপ্তানি করে ভারত ২২০ কোটি রূপি (প্রায় ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে এবং উপসাগরীয় দেশগুলোয় এর চাহিদার কারণে দেশটি এর রপ্তানি পাঁচগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ছোবড়ার আঁশ-এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক আবিষ্কার হচ্ছে ছোবড়ার টব,সবুজ উদ্যানের শুরু করতে চায় এমন যে কেউ যে সম্পদের প্রতি আগ্রহী হবে।
Seed Germination Cup or COCO POT : Coir pots are made from coir fiber blended with or without natural rubber…. pic.twitter.com/9NslaI0ySR
— Apex Coir (@ApexCoir) November 12, 2013
বীজের অঙ্কুরোদগম পেয়ালা অথবা নারকেলের টবঃ নারকেলের ছোবড়া থেকে ছোবড়ার টব বানানো হয়েছে যার প্রাকৃতিক রাবার যোগ করা হয় অথবা হয় না
এই ছোবড়ার টবে গাছ লাগানোর পর, এর শেকড় ছোবড়ার ভেতরে প্রবেশ করতে পারে, কাজে এই টব এবং গাছের চারা দুটোকেই একই সাথে মাটিতে পুতে ফেলা সম্ভব- প্লাস্টিকের টব এবং এই কাজে যে ঘাম ঝরানো হয়েছে তা নষ্ট হবে না।
গ্লোবাল ভয়েসেস-এর লেখক শুভাশিস পানিগ্রাহী ফেসবুকে লিখেছে:
ছোবড়া দিয়ে বানানো চারাগাছের টব এক নতুন রপ্তানিযোগ্য পণ্য। বিস্ময়কর ভাবে বেশ সস্তা এই পরিবেশ বান্ধব উপাদান ভারতে তেমন একটা বাজার পায়নি। ছোবড়ার আঁশ এই সমস্ত টবে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দুই বছর বা এরকম সময়ে, যখন চারার শিকড় টবের ভেতর প্রবেশ করতে শুরু করে, তখন এটিকে সরাসরি নিয়ে মাটিতে পুতে দিলেই কাজ সমাপ্ত। কি দারুণ পরিচ্ছন্ন এক চিন্তা!
ছোবড়া দিয়ে বানানো টবের সুবিধা হচ্ছে পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক নার্সারির টব, ফ্লাট বা চারা রাখার স্থান ও পাত্রের বদলে এগুলোকে ব্যবহার করা যায়। যদিও সেগুলো হালকা, টেকসই এবং সেগুলোকে রিসাইকেল করা যায়, তবে সাধারণত এগুলো আবর্জনা উড়ে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এখন অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। পরিবেশের জন্য উপযোগী এমন উপাদান যেমন ছোবড়ার টবে চারাগাছ রোপণ ক্রমশ সহজলভ্য হয়ে উঠছে বিশেষ করে যখন প্লাস্টিক এবং রাবারের পরিবেশের উপর তৈরী করা প্রভাব নিয়ে উদ্যান রচয়িতাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।