“শক্তিশালী এক নারী প্রবক্তা” হিসেবে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তেলকুবের সৌদি বাদশাহ-এর মৃত্যুতে বিলাপ করছে

London, United Kingdom. 7th January 2015 -- Flags at half mast on the roof of the Ministry of Defence which has had close ties to Saudi Arabia -- Flags on UK Government buildings were at half mast to mourn King Abdullah, head of the controversial theocratic regime in Saudi Arabia, who died. Saudi Arabia's human rights record has been regularly criticised by campaigners. Photograph by: Andy Thornley. Copyright: Demotix

৭ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অবস্থিত দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-এর ছাদে অর্ধ নমিত পতাকা, যে সংস্থা সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী- যুক্তরাজ্য সরকার সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে দেশটির সকল সরকারি ভবনের পতাকা অর্ধনমিত রেখেছিল, যিনি দিব্যতন্ত্র বা এক ধর্মীয় অনুশাসনে চলা সৌদি আরবের বাদশাহ ছিলেন, উক্ত দেশটির এই অনুশাসন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিয়মিত রূপে সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করে আসছে। ছবি এন্ড্রু থরনলেই-এর। কপিরাইট ডেমোটিক্সের।

তাদের বাদশাহ-এর মৃত্যুতে বিশ্ব জুড়ে সৌদি দূতাবাস সমূহ পশ্চিমা নেতাদের খানিকটা বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে, “ শুধু শুনতেই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে”।

বিদ্রূপাত্মক লেখক কার্ল শাররো-এর করা এই টুইটটি শুনতে আপাতদৃষ্টিতে মোটেও মনে হয় না যে এর মধ্যে দিয়ে ২৩ জানুয়ারি, ২০১৫-এ মৃত্যু বরণ করা সৌদি বাদশাহকে দারুণ ভাবে প্রশংসা করা হচ্ছে, দৃশ্যত যেমনটা তার প্রতি করা হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টিন লাগার্দ, নিজের চার কন্যাকে গৃহে আটকে রাখা এই সদ্য প্রয়াত এই সৌদি বাদশাহকে “ শক্তিশালী নারী প্রবক্তা” হিসেবে অভিহিত করেন, সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে প্রদান করা সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এক বিবৃতিতে ভদ্রমহিলা আরো যোগ করেন :

তিনি ছিলেন এক বিশ্বনেতা, কেবল সৌদি আরবে নয়, সারা বিশ্বে যার ভক্ত রয়েছে। তিনি দৃঢ়ভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং এই লক্ষ্যে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্বদেশে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন পরিবর্তন সাধন করেন যা সৌদি আরবের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। তিনি সমৃদ্ধ এক সৌদি আরব রেখে গেছেন।

হোয়াইট হাউস প্রদত্ত বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা বলেন “বাদশাহ আবদুল্লাহ তার প্রজাদের শিক্ষায় নিজের লক্ষ্যকে উৎসর্গ করেছিলেন এবং বিশ্বের ঘটনাবলীর সাথে তিনি অনেক বেশী পরিমাণ নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন”। এদিকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার এক টুইটে বাদশাহকে “সম্মানিত এক নেতা” হিসেবে উল্লেখ করে বাদশাহ-এর প্রতি শোক নিবেদন করেছেন।

বাদশাহ আবদুল্লাহ ছিলেন জ্ঞানী এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্র তার এক বন্ধুকে হারিয়েছে আর সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্ব এক সম্মানিত নেতাকে হারিয়েছে।

তবে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত এবং অদ্ভুত বার্তাটি আর কারো কাছ থেকে নয়, এসেছে অভিনেত্রী লিন্ডসে লোহানের কাছ থেকে, সংবাদ অনুসারে যে প্রথমে আরবী ভাষায় এক বার্তা সহ ইনস্টাগ্রামে বাদশাহ-এর ছবি পোস্ট করে পরে তা মুছে ফেলে, যে বার্তায় লেখা ছিল “আমি তোমাকে ভালবাসি” এবং “তুমি আমার পৃথিবী”। .

বেশ কিছু আরব রাষ্ট্র শোক প্রকাশে এক বিশেষ দিনের কথা ঘোষণা করে। উল্লেখ যে স্কটল্যান্ড ব্যতিত যুক্তরাজ্যের সকল সরকারি ভবনে ইউনিয়ন জ্যাক নামে পরিচিত দেশটির জাতীয় পতাকা এমন কি অর্ধ নমিত অবস্থায় দেখা যায়।

সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ–এর মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য যুক্তরাজ্যের জাতীয় পতাকা অর্ধ নমিত রাখা হয়।

এ ভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন যুক্তরাজ্যের অনেকের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করে, যার মধ্যে সংসদ সদস্য সারাহ ওয়ালাস্টোন (@ ড্রওয়ালাস্টোন এমপি) অর্ন্তভুক্ত, যিনি টুইট করেছেন :

অর্ধ নমিত অবস্থায় ইউনিয়ন জ্যাক উড়ছে যা বড় এক প্রতীকী বিষয়। সৌদি আরবে যে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, আমার নামে তাক এই সম্মান প্রদান নয়।

ইংরেজ লেখিকা এবং রাজনীতিবীদ লুইস মেনেশ এর সাথে যোগ করেছে:

এমন এক মানুষের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করা কোন ভাবে গ্রহণযোগ্য নয় যে নারীদের চাবুক মারার হুকুম দিয়েছে, যাদের সে গাড়ি চলাতে দেয়নি, যার আমলে আভিভাবক আইন পাশ করা হয়েছে এবং যে তাদের অনাহারে রেখেছ।

মানবাধিকার কর্মী পিটার টাটচেল লিখেছে:

ডেভিড ক্যামেরোন এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রতি লজ্জা যারা সৌদি স্বৈরশাসনকে সম্মানিত এবং স্বৈরশাসক বাদশাহ আবদুল্লাহকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করল।

এই রক্ষণশীল রাজ্যে নারীদের গাড়ি চালানোর এবং “অভিভাবকের” অনুমোদন ছাড়া দেশ ত্যাগের অনুমতি নেই, আর দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড ভয়াবহ যার মধ্যে রয়েছে সৌদি ব্লগার রাফি বাদাউয়িকে প্রকাশ্যে চাবকানোর ঘটনা, যার বিরুদ্ধে “অভিযোগ” সে অনলাইনে এক গণ বিতর্ক মঞ্চ স্থাপন করেছে এবং “ইসলামকে অপমান” করেছে।

বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা এবং কর্মকর্তা বাদশাহ আবদুল্লাহ-এর শ্রদ্ধা প্রদর্শনে দলবেঁধে রিয়াদে গিয়ে হাজির হয়েছেন। ২৫ জানুয়ারিতে প্রিন্স অফ ওয়েলশ এবং ডেভিড ক্যামেরোন সৌদি রাজধানীতে গিয়ে হাজির হয়।

প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহ-এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে প্রিন্স অফ ওয়েলশ এবং প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরোন রিয়াদের এসে পৌঁছেছেন।

এবং সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা তার সফর সংক্ষিপ্ত করে ফেলেন।

বাদশাহ সালমান বিন আব্দুলআজিজ ও প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা মঙ্গলবার সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন।

বাদশাহ আবদুল্লাহ-এর উত্তরসূরি হয়েছেন তার সৎ ভাই, ৭৯ বছর বয়স্ক সালমান বিন আব্দুল –আজিজ আল সাউদ, যিনি তার পূর্বসূরির মৃত্যুর দিন তার টুইটার একাউন্ট @এইচআরএইপিসালমান থেকে পাল্টে @কিংসালমান করে ফেলে।

পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা, আবদুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজের প্রতি যেন দয়া করে এবং তাঁকে পুরস্কার প্রদান করে এবং তার মৃত্যুর মত এক অপূরণীয় ক্ষতিতে সৌদি নাগরিকদের সাহায্য করে।

৯০ বছর বয়স্ক আবদুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজ, ২০০৫ সালে তার সৎ ভাই ফাহাদ বিন আব্দুলআজিজ-এর মৃত্যুর পর ক্ষমতা আসীন হয়েছিলেন, এখন তার মৃত্যুতে তার আরেক ভাই ৭৯ বছর বয়স্ক সালমান বিন আব্দুলআজিজ ক্ষমতা আরোহণ করেছে। তারা সকলেই বাদশাহ আব্দুলআজিজ-এর সন্তান, যিনি ১৯৩২ সালে সৌদি আরব রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং বছরের পর বছর সিংহাসনে আসীন ছিলেন। আব্দুলআজিজ-এর ৪৫ জন সন্তানের মধ্যে ৩৬ জন বেঁচে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থা পর্যন্ত জীবিত ছিল, যাদের আবার নিজেদের সন্তান সন্ততি রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .