- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আফগানিস্তানে ভাষা রাজনীতির প্রত্যাবর্তন

বিষয়বস্তু: আফগানিস্তান, জাতি-বর্ণ, নাগরিক মাধ্যম, ভাষা, রাজনীতি
Afghanistan_provinces_pashto

Afghanistan's provinces written in Pashto. Tajiks and other Dari-speaking ethnic minorities fear that the language will dominate theirs as a result of Pashtun political power. Wikipedia image.

আফগানিস্তানের প্রাক্তন নিহত রাষ্ট্রপতি বুরহানুদ্দিন রাব্বানীর ছেলে এবং বর্তমানে নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালাহউদ্দিন রাব্বানী আফগানিস্তানের সংসদে পশতু ভাষায় পূর্বানুমোদিত ভাষন দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি সবচাইতে বেশি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন তার নিজ গোত্র দারি ভাষার লোকজনের নিকট থেকে। মাতৃভাষার পরিবর্তে পশতু ভাষায় ভাষন দেওয়ায় তাঁরা মনে করেন সালাউদ্দিন রাব্বানী তাঁদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

সংবিধান অনুযায়ী পশতু ও দারি হল আফগানিস্তানের দুটি সরকারি ভাষা। আফগান শাসকদের মধ্যে বিগত দুই শতকে – হাবিবুল্লাহ কালকানি এবং বুরহানুদ্দিন রাব্বানী ছিলেন জাতিগতভাবে পশতুন। পশতু অপেক্ষা দারি ভাষা অর্থাৎ স্থানীয় ফার্সীভাষার ব্যবহার লিখিতরূপেই বেশি ব্যবহৃত হয়। দেশের বিভিন্ন অ-পশতু জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দারি ভাষার প্রচলন বেশি। প্রধান তাজিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীও দারিভাষায় কথা বলে। রাব্বানী এ গোষ্ঠীরই একজন।*

২৭ জানুয়ারির ভাষণের পরপরই আফগানিস্তানের জাতীয় কংগ্রেস পার্টির প্রধান জাতিগতভাবে তাজিক আব্দুললতিফ পেদরাম আফগানিস্তানের নতুন  কোয়ালিশন সরকারের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট লিখেন। তাঁর এই পোস্টটি বহুল প্রচারিত [1]। তিনি আফগান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এ সরকার “অবৈধ” এবং “অসাংবিধানিক”। সালাউদ্দিন রাব্বানী “ ফার্সি সংস্কৃতি ও [তাঁর] মাতৃভাষার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনি আরও বলেন     

Abdullatif Pedram. Photo from his Facebook page

আব্দুললতিফ পেদরাম। ছবি তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে প্রাপ্ত

وقتی آقای صلاح الدین نیمه ی اول سخنرانی اش را به زبان پشتو متبرک می سازد،معنایش این است که زبان پشتو زبان اول این سرزمین است. نمایندگان کشورهای خارجی هم بر همین اساس به یقین می رسند. نام این کار خیانت به زبان مادری وفرهنگ غنامند فارسی است در روایات است که امام ابو حنیفه (رح)گفته بود میشود به این زبان نماز خواند.(دکترسروش) نامش تسلیم طلبی و بی همتی است. من به همه ی زبان های وطنم احترام می گذارم و آنهارا دوست میدارم منجمله زبان پشتورا. اما بحث عدالت خواهی چیزدیگری است زبان فارسی اکثریت زبانی است.

সালাউদ্দিন যখন তাঁর ভাষনের প্রথম অংশ পশতুতে শুরু করেন তখন মনে হচ্ছিল এ দেশের প্রথম ভাষা পশতু। এর উপর ভিত্তি করে বিদেশি দেশসমূহের প্রতিনিধিরাও একই উপসংহারে উপনীত হবেন। এটা [তাঁর] মাতৃভাষা ও সমৃদ্ধ ফার্সি সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা…… পশতুসহ আমার দেশের সকল ভাষাকেই আমি সম্মান করি ও ভালবাসি। কিন্তু এ বিষয়টি হচ্ছে নীতিগত। ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা হল ফার্সি (আফগানিস্তানে)।

অনেকেই তাঁর সাথে একমত পোষন [2] করেছেনঃ

ﺟﻨﺎﺏ ﺩاﻛﺘﺮ ﺻﺎﺣﺐ ﺩﻗﻴﻖ ﻓﺮﻣﻮﺩﻳﺪ ﺑﭽﻪ ﻫﺎﻱ ﻛﻪ ﻫﻮﻳﺖ ﺧﻮﺩ ﺭا ﻣﻮﺭﺩ ﻣﻌﺎﻣﻠﻪ ﻗﺮاﺭ ﺩﻫﺪ ﭼﻪ ﺗﻮﻗﻊ اﺯ اﻥ ﺩاﺷﺖ.

প্রিয় ডঃ আপনি ঠিকই বলেছেন। যারা নিজেদের পরিচয় নিয়ে ব্যবসা করে তাঁদের কাছ থেকে আপনি আর কী আশা করতে পারেন?

অনেকেই পেদরামের জাতিয়তাবাদের সমালোচনা করেছেন। আহমেদ ওয়ালি হাকিমি সমালোচনা [3] করে বলেনঃ

جناب پدرام حیف تحصیل وعمرگران بهایتان که به این پوچ وبیهوده میگذرانی تو خاین ملی هستی تو شخص مریض هستی خداکند مریضی شما ساری نباشد

জনাব পেদরাম, এটা খুবই দুঃখজনক যে আপনি আপনার শিক্ষা ও মূল্যবান জীবনকে অর্থহীন (আলোচনায়) কাজে লাগাচ্ছেন। আপনি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আপনি একজন অসুস্থ……

ফজল আজিজি নামের একজন আলোচক নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বৈত নাগরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন [4]। এ দ্বৈত নাগরিকতা তাঁকে তার নতুন পদায়নে ভূমিকা রেখেছেঃ

باید به زبان انگلیسی صحبت میکرد .تابعیت انگلیس داشت.

তাঁর আসলে ইংরেজিতেই কথা বলা ভাল কারন তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক।

 আফগান সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী [5] বাস্তবতা হল  ২৬ জানুয়ারি দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ রাব্বানীর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের অনুমোদন দিয়ে ২৭  জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যোগদানের জন্য তার পথকে  সুগম করে দিয়েছে । আফগান রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনির মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই সংসদের নিম্নকক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন। কারন, তাঁদের অনেকেই দ্বৈত নাগরিক।

জাতিগতভাবে পশতুন গনি এবং তার রাষ্ট্রপতি পদের প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়েই এ বছরের শুরুতে নির্বাচনের [6] জন্য জাতিগত বৈচিত্রপূর্ণ মোর্চাগঠন করেছেন। কউদারনস্বরূপ বলা যায় তিনি  বিখ্যাত নর্দান এলাইয়েন্সের কমান্ডার আহমেদ শাহ মাসুদের [7] ভাই তাজিক বংশোদ্ভূত আহমেদ জিয়া মাসুদ [8]কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর দলভুক্ত করেছেন। গনির প্রতিদ্বন্দ্বী অর্ধেক – পশতুন অর্ধেক- তাজিক  আবদুল্লাহ আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে আব্দুলগনির পক্ষ নেওয়ায় অনেক তাজিক আহমেদ জিয়া মাসুদের সমালোচনা করেছেন। ২০০১ সালে আহমেদ শাহ মাসুদের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ, আহমেদ শাহ মাসুদের নিকটতম বন্ধু ছিলেন।

২০১১ সালে রাব্বানী তুরস্কে নিযুক্ত আফগান রাস্ট্রদূত ছিলেন। তাঁর মরহুম পিতার জোরালো তাজিক সংযোগায়ন ছাড়াও তাকে বিদেশি শিক্ষায় শিক্ষিত একজন টেকনোক্র্যাট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পশতুভাষায় ভাষন শুরু করে তিনি জাতিগত ও ভাষাগত প্রভেদ কমাতে গিয়ে বরং তাকে আরও উসকে দিয়েছেন।

* আফগানিস্তানের মানচিত্রের জন্য এখানে [9] ক্লিক করুন। নোট এ মাণচিত্র অনুমানের ভিত্তিতে তৈরিকৃত।