- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

উন্মোচিত রেঙ্গুন নামক ফেসবুক পাতা “বার্মার গল্প বলছে, একজন একজন করে”

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মায়ানমার (বার্মা), নাগরিক মাধ্যম, ভ্রমণ, শিল্প ও সংস্কৃতি
rangoon seamstress [1]

আমি পুরোনো কাপড় সেলাই করে করে, আর আমার স্বামী রিকশা চালিয়ে যে আয় করি তা দিয়ে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। আমি প্রতিদিন ২০০০ কিয়াট আয় করি, আমি পুরোনো কাপড় কিনি, সেগুলোকে ঠিকঠাক করি এবং সেগুলোকে বাজারে বিক্রি করি। আমাদের তিনটি ছেলেমেয়ে আছে আর তাদের ভরণপোষণের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি। দেখুন আজকের দিনে ২০০০ কিয়াট একটি পরিবারের প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়, যদিও উপেক্ষিত ওই সব রাজনীতিবিদেরা তা বলে থাকে। ছবি “উন্মোচিত রেঙ্গুন” নামক ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

মায়ানমারের একদল কিশোর একটি ফেসবুক পাতা সৃষ্টি করেছে যার নাম দেওয়া হয়েছে “উন্মোচিত রেঙ্গুন [2]” (রেঙ্গুন রিভেলড), যা দেশটির অন্যতম বড় শহর ইয়াঙ্গুন [3]-এর সাধারণ নাগরিকের জীবনের প্রতি এক নিবিড় নজর প্রদান করেছে, যা এক সময় মায়ানমারের রাজধানী ছিল।

মায়ানমার অতীতে বার্মা নামে পরিচিত ছিল অপরদিকে ইয়াঙ্গুনকে এক সময় রেঙ্গুন নামে ডাকা হত। থাউ হেতেত এবং জেউই পাইং হেতেতের উদ্যোগে তৈরী করা “উন্মোচিত রেঙ্গুন” ফেসবুক পাতা ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দাদের ছবি তুলে ধরা ও তাদের জীবন সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদানের মাধ্যমে “বার্মার গল্প বল, একজন একজন করে”-এই বিষয়টির উপর আলোকপাত করছে।

যখন গ্লোবাল ভয়েসেস ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা এই দুই কিশোরকে জিজ্ঞেস করে যে অনলাইন এই প্রকল্পের পেছনে কোন বিষয়টি তাদের ক্ষেত্রে উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করেছে, তখন এই দুই কিশোর বলে যে তারা চায় তাদের পাঠকেরা সাধারণ বার্মিজ নাগরিকের জীবন ভালভাবে উপলব্ধি করুক। এর সাথে তারা যোগ করেছে:

আমরা, গরীব নাগরিক এবং যারা প্রতিদিনের জীবনে সংগ্রাম করে যাচ্ছে তাদের কণ্ঠস্বর ধারণ করতে চেয়েছি।

এমন অনেক বিদেশী নাগরিক রয়েছেন যারা মনে করেন যে মায়ানমারের পরিস্থিতির দারুণ উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তারা যে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে না তা হচ্ছে এখানে কখনো কখনো এমনকি আগের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর কিছু কিছু ছবি মায়ানমারে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে যেমন নীচে প্রদর্শিত এক রিকশাওয়ালার ছবি :

rangoon brothers [4]

ছবি “উন্মোচিত রেঙ্গুন” নামক ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

ছবি প্রদর্শনের সাথে সাথে এর বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে আসা ব্যক্তির বক্তব্য এখানে প্রদান করা হয়েছে:

আমার এক যমজ ভাই রয়েছে যে দেখতে হুবহু আমার মত কিন্তু খুব চালাক। ক্লাশ নাইনে আমি তিনবার ফেল করি, আর আপনার দেখতে পাচ্ছেন এর ফলে এখন রিকশা চালাচ্ছি, আর পাশাপাশি আমি আমার ভাইকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যখন আমি কঠোর পরিশ্রম করছি, তখন আমরা ভাই যতটা পারে ততটা মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে। একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় সে চারটি বিষয়ে সবার চেয়ে সেরা ফল অর্জন করেছে।

“উন্মোচিত রেঙ্গুন”-এর মাধ্যমে থাউ হেতেত আশা করছে যে রিকশাওয়ালারা অলস এই প্রচলিত ধারণা ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব হবে,যেখানে বাস্তবতা হচ্ছে এই সমস্ত রিকশাওয়ালাদের অনেকে তাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকে।

নীচে ইয়াঙ্গুনের কয়েকজন বাসিন্দার ছবি প্রদর্শন করা হল, যাদের জীবন কাহিনী ফেসবুকের পাতায় তুলে ধরা হয়েছে:

rangoon woman [5]

ছবি “উন্মোচিত রেঙ্গুন” নামক ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

আমার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেছে আর এটি এই দেশের প্রেক্ষাপটে একটা খারাপ ঘটনা। এমনকি যদিও আমি আমার জীবন অতিবাহিত করার জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করি, তারপরে লোকজন আমার নিন্দা করে। কখনো কখনো তারা আমাকে মোটে-সো-মা বলে ডাকে, এটা একটা নিন্দনীয় শব্দ যার মানে হচ্ছে “পুরুষ খেকো নারী”। মনে হয় মেয়েদের যেন নিজের ইচ্ছে বলে কিছু নেই।

rangoon father and son [6]

ছবি “উন্মোচিত রেঙ্গুন” নামক ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

আপনার ছেলের সঙ্গে কাটানো আপনার সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত কোনটি? আমার এ রকম কোন আনন্দদায়ক মুহূর্ত নেই। যখন আমি তার পাশে থাকি, তখন আমার মন শান্তিতে ভরে যায়।

rangoon street vendor [7]

ছবি “উন্মোচিত রেঙ্গুন” নামক ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

যখন আমার কাছে অনেক ক্রেতা আসে তখন আমার মন আনন্দে ভরে যায়, কারণ যদি আমি বেশী বিক্রি করতে না পারি তাহলে আমার মালিক বকাবকি শুরু করে দেয়। কাজের সন্ধানে আমি মাগওয়া জেলার এক ছোট্ট শহর থেকে ইয়াঙ্গুনে এসে হাজির হয়েছি। এখন আমি আমার পিতামাতার কাছ থেকে অনেক দূরে বাস করছি যাদেরকে খাবার বিক্রি করে আমি টাকা পাঠাই।

rangoon rope vendor [8]

ছবি “উন্মোচিত রেঙ্গুন” নামক ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

৩০ বছর ধরে আমি এই রশি বয়ে বেড়াচ্ছি। আমি মায়ানমারকে বদলে যেতে দেখেছি আর এটাই আমি আবিষ্কার করেছি। শিক্ষা অর্জন খুব গুরুত্বপূর্ণ। হে শিশু তোমাদের শিক্ষা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। এখন থেকে মন দিয়ে লেখাপড়া কর যাতে ভবিষ্যতে কষ্ট করতে না হয়। জীবনে এরকম কোন বড় ভুল করোনা।

rangoon washer [9]

ছবি “উন্মোচিত রেঙ্গুন” নামক ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

আমি খাবারের দোকানের লিনেন কাপড় (শণের তৈরী কাপড়) এবং টেবিলের আচ্ছাদন পরিষ্কার করি। আমার ধারণা আমি সে কাজটা করি যেটি আর অন্য কেউ করতে ইচ্ছুক নয়।

rangoon trishaw driver [10]

ছবি “উন্মোচিত রেঙ্গুন” নামক ফেসবুক পাতার সৌজন্যে

জীবনে সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত আসে কখন ঘরে?
যখন আপনার স্ত্রী সন্তান ধারণ করে
সবচেয়ে বেদনার মুহূর্ত কোনটি বটে?
যখন কোন শিশুর মৃত্যু ঘটে।