নাগরিকরা চেয়ার ছুঁড়ে মারছে এমন ছবিতে নেপালি টুইটার জগৎ ভরে গেছে। এর জন্য নেপালের এক সংসদ অধিবেশনের একটি বিখ্যাত ঘটনাকে ধন্যবাদ, যে অধিবেশনে সংসদের মাওবাদী সদস্যরা তাদের চেয়ার ছুঁড়ে মেরেছিল। নেপালের টুইটার ব্যবহারকারীরা চেয়ার আছড়ে ভেঙ্গে ফেল (#স্মাশচেয়ারচ্যালেঞ্জ) নামক চ্যালেঞ্জ শুরু করেছে, অনলাইনের এক ব্যাঙ্গাত্মক আন্দোলন, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সংসদ সদস্যরা যাতে এক খসড়া সংবিধান তৈরী করে জন্য চাপ প্রয়োগ করা।
নেপাল বর্তমানে এক অন্তবর্তীকালীন সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যা গ্রহণ করা হয়েছিল ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে। মে ২০১০-এ, আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সংবিধান প্রণয়নের তারিখ ঘোষণা করা হয়, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে মতানৈক্য থাকায় সংসদ, বেশ কয়েকবার সংবিধান প্রণয়নের নির্ধারিত তারিখের পরিবর্তন ঘটায়।
মে ২০১২-এ, প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই সংবিধান তৈরীতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে দেশটির সাংবিধানিক সংসদ ভেঙ্গে দেয়, যার ফলে চার বছর ধরে সংবিধান রচনার ইতি ঘটে এবং কার্যত দেশটিকে আইনগত শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ১৯ নভেম্বর ২০১৩ সালে দেশটিতে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং রাজনৈতিক নেতারা এক বছরের মধ্যে একটি খসড়া সংবিধান রচনার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। সাম্প্রতিক তম সংবিধান রচনার শেষ সময় ছিল ২২ জানুয়ারি- কিন্তু ২০ জানুয়ারি তারিখে নেপালের সংসদে এক সংঘর্ষ সংঘঠিত হয় যেখানে মাওবাদী ও মাধোশী সংসদেরা মিলে শাসক দলের সদস্যদের সাথে এক হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।
নেপালের টুইটার ব্যবহারকারীরা যথেষ্ট পরিমাণ এই ধরনের ঝগড়া দেখেছে এবং এই বিষয়ে নিজেরাই কিছু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ব্রজেশ খানাল এক লেখক, প্রাবন্ধিক এবং চিত্রনাট্যকার, তিনি তার এই টুইটটি লিখেছেন:
कुर्सी उचालेर #SmashChairChallange ह्यास्ट्याग राखेर १०:४५ देखि फोटो अपलोड गर्ने योजना छ। सबैलाई सहभागी हुन अनुरोध, तयार गर्नुस् फोटो
— braZesh khanal (@brazeshk) January 23, 2015
সকাল ১০.৪৫ মিনিটে #স্ম্যাশচেয়ারচ্যালেঞ্জ হ্যাশট্যাগে ছবি আপলোড করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সকলকে এতে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আপনার ছবি নিয়ে আপনি তৈরী থাকুন।
খানাল নিজে এক চেয়ার আছড়ে ভাঙ্গছে এমন এক ছবি আপলোড করার পর সে তার নিজের টুইটার অনুসরণকারীদের এই কাজটি করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে:
#SmashChairChallange #DraftConstitution. I challange @YunaBaral @smadixit @bhaskargyawali @SomeshVerma @aakarpost pic.twitter.com/RWXHU1dpB7
— braZesh khanal (@brazeshk) January 23, 2015
খসড়া সংবিধান রচনার দাবীতে আমি ইউনা বরালা, সামা দীক্ষিত, ভাস্করগয়াওয়ালি, সোমেশ ভার্মা এবং এএককারপোস্ট টুইটার একাউন্টকে চেয়ার আছড়ে ভাঙ্গার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।
নাগরিকরা তার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে টুইটারে এটি দারুণভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
নবীন কাঠিওয়াড়া, যিনি রিপাবলিকা নামক একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক, তিনি টুইট করেছেন:
#SmashChairChallange I have accepted it. Now your turn @yopeshp @niraj_1974 @iBshnu @sigdelumesh pic.twitter.com/6jRFjzYwmc
— Navin Khatiwada (@NavinKhatiwada) January 23, 2015
আমি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম, আর এখন ইয়োপশপ, নিরাজ _১৯৭৪, আইবিষ্ণু, সিগডেলুমেশ টুইটার একাউন্টের পালা।
নারায়ন ওয়াগলে, এক প্রতিথযশা লেখক এবং সাংবাদিক, তিনি এই সোশ্যাল মিডিয়া আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন, সাংবাদিক গিরিশ গিরি টুইট করেছে:
@narayanwagle को ‘कुर्सी तोड आन्दोलन’ मा ऐक्यवद्धता #SmashChairChallenge pic.twitter.com/QSJjci30Tr
— Girish Giri (@Birgunj) January 23, 2015
চেয়ার আছড়ে ভাঙ্গ নামক আন্দোলনের প্রতি নারায়ন ওয়াগলের সমর্থন।
এদিকে যখন স্যোশাল মিডিয়ার অনেক অনুসরণকারী তাদের নিজেদের চেয়ার ছুঁড়ে মারার ছবি পোস্টে ব্যস্ত ছিল, তখন অনেকে মনে করছে যে প্রতীকী অর্থে চেয়ারের বদলে নেতাদের ছুঁড়ে মারা উচিত।
উমেশ উপাধ্যায় এক সফটওয়্যার ডেভলাপার, তিনি টুইট করেছেন:
#SmashChairChallange Is an option 2 invoke some minds but until we don't #SmashNetas ,there won't be any #DraftConstitution or prosperity.
— Umesh Upadhayaya (@UmeshUpadhayaya) January 23, 2015
চেয়ার আছড়ে ভাঙ্গা কারো মনের জগতে নাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় এক উপায়, কিন্তু যতক্ষণ না আমরা আমাদের নেতাদের তুলে আছাড় মারব, ততক্ষণ পর্যন্ত খসড়া সংবিধান পাওয়া যাবে না, কিংবা দেশে সমৃদ্ধ আসবে না।
রিপাবলিকার সাংবাদিক রুদ্র পানজেনিয়ার মত কেউ কেউ এমনকি রাস্তায় বিক্ষোভকারী নাগরিকদের ধরে এভাবে তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছুক:
I am not for #SmashChairChallange, but for #SmashPeopleChallange who are protesting in the road and blocking road even today ‘tinka baje’
— Rudra Pangeni (@rudrapangeni) January 23, 2015
চেয়ার তুলে আছাড় মারার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই, তার তার বদলে যারা রাস্তায় বিক্ষোভ করে এবং এমনকি বেলা তিনটার সময় রাস্তা বন্ধ করে রাখে তাদের তুলে আছাড় মারতে চাই।
সংসদে ভাঙচুর করা এবং হামলা চালানো, সেখানকার আসবাব ধ্বংস করার ঘটনা, একই সাথে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে;নেট নাগরিকরা এই বিষয়ে একমত যে সংসদ সদস্যদের আচরণ দেশটির জন্য দারুণ বিব্রতকর।
শঙ্কর দাহাল টুইট করেছে:
These are our lawmakers, who vandalized CA this morning. #nepal pic.twitter.com/ytid9xUiW6
— Shankar Dahal (@Dahal_Shankar) January 20, 2015
এই হচ্ছে আমাদের আইন প্রণেতা, যারা আজ আমাদের সংসদে ভাঙচুর চালিয়েছে।
কিনার টিমিলিসিনা এক সঙ্গীত অনুরাগী, সে টুইট করেছে:
World Famous in short period of time… #canepal #Nepal #smashchairchallenge pic.twitter.com/SBvYAWBpYY
— Kinar Timilsina (@Kinar2049) January 24, 2015
স্বল্প সময়ে বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে যাওয়া…
আজ সংসদ সচিব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে এই ভাঙচুরের ফলে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ তিন মিলিয়ন নেপালি রূপি (১ ডলার= ৯৮.৪৬ নেপালি রূপি)। তবে এখনো এই বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়নি যে সংসদ সদস্যদের বরখাস্ত করা হবে নাকি তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে, এদিকে নেপালের স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা চেয়ার আছড়ে ভাঙ্গ চ্যালেঞ্জ সমর্থনে ব্যস্ত রয়েছে।
এক স্যোশাল মিডিয়া অনুসারী টুইট করেছে:
#SmashChairChallange लेखेर एउटा कुर्सी उचालेको फुटो नराखे सम्म सोसाइटिमै नपरेला झै पो भो त!!
— मौन (@laconic77) January 24, 2015
মনে হচ্ছে যতক্ষণ না একটা চেয়ার তুলে আছাড় মেরে তা ভাঙ্গার ছবি পোস্ট করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছি না।