- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

রাষ্ট্রপতি কাবিলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় কঙ্গোয় ৩৬ জন নিহত হয়েছে এবং দেশটিতে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, কঙ্গো ডে. রিপাবলিক, তাজা খবর, দুর্যোগ, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, প্রতিবাদ, মানবাধিকার, রাজনীতি

Screen Shot 2015-01-25 at 2.56.29 AM

১৯ জানুয়ারি তারিখে কিনশাসায়, কঙ্গোর পুলিশ নির্বাচনী আইন সংশোধনের বিরোধিতাকারীদের আয়োজিত বিক্ষোভ [1] নির্মমভাবে ছত্রভঙ্গ করে দেয়, যে আইনের বলে রাষ্ট্রপতি জোসেফ কাবিলা তার মেয়াদ শেষেও ক্ষমতা অধিষ্ঠিত থাকতে পারবে। ৩৫ জন বিক্ষোভকারী, যার বেশিরভাগই ছাত্র এবং একজন পুলিশ এই ঘটনায় নিহত হয়েছে [2]।দেশটির গোমা শহরেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে এই শহরেও হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি কাবিলা দেশটির আইনকে পাশ কাটিয়ে পরোক্ষভাবে তার ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ বৃদ্ধির উপায় খুঁজছে, উল্লেখ্য যে আগামী বছর তার ক্ষমতায় থাকার মেয়াদের পরিসমাপ্তি ঘটবে। তিনি এখন সাড়া দেশ জুড়ে এক জরিপ পরিচালনা করছেন যার সমাপ্তি ঘটতে তিন বছর লাগবে, আর-এর মাধ্যমে কাবিলা তার ক্ষমতায় টিকে থাকার উপায় অনুসন্ধান করছে। সংবিধানের প্রতিবন্ধকতার কারণে কাবিলা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারবে না,তবে সংশোধিত আইনে যতক্ষণ না জরিপের কাজ শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাবিলা কোন বাঁধা ছাড়াই রাষ্ট্রপতির পদে আসীন থাকতে পারবেন। এই বিক্ষোভ শুরু হবার কিছুক্ষণের মধ্যে, মোবাইল ইন্টারনেট এবং টেক্সট মেসেজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় [3],সাথে শহরের বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সংঘর্ষ চলাকালীন সময় বেশ কিছু ছাত্রদের আবাসস্থলে অগ্নি সংযোগ করা হয়।

কাবিলা প্রশাসন যুক্তি প্রদান করছে যে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাষ্ট্রপতি এবং সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ভোটারদের তালিকা হালনাগাদ করা গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির অত্যন্ত প্রভাবশালী ক্যাথলিক চার্চ বিরোধী দলের এই অনুরোধের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যেন পরিকল্পিত নির্বাচনী সূচিতে কোন পরিবর্তন আনা না হয়। প্রস্তাবিত সংস্কার নিয়ে বর্তমানে সংসদে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

১৯ জানুয়ারিতে কিনইনফোস –এর গ্রহণ করা নিচের এই নাগরিক ভিডিও, বিক্ষোভকারীদের সড়ক অবরোধের প্রচেষ্টার ফলে রাজধানী শহরের যে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সে দৃশ্য তুলে ধরেছে:

পল এনসাপু, যিনি কিনসাসায় অবস্থিত আফ্রিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, তিনি সরকারের গ্রহণ করে এই কঠোর পদক্ষেপে হতবাক [4]:

যে সমস্ত নাগরিক নিহত হয়েছে, তাদের বেশীর ভাগের ক্ষেত্রে বলা যায়, তারা শান্তিপূর্ণ এক বিক্ষোভের আয়োজনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আমরা আশা করি না যে, সরকার বিদ্রোহীদের সাথে যে ধরনের আচরণ করে, এই বিক্ষোভকারীদের প্রতিও সেই একই আচরণ করবে।

গত সপ্তাহে যা ঘটেছে, নিচের ভিডিওতে তার সরাংশ তুলে ধরছে :

ইদা সাওইয়ের, যিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামক সংস্থার গবেষক, সে এর সাথে যোগ করেছে [5], নাগরিকদের নিজেদের ভাবনাকে প্রকাশ করার যে অধিকার রয়েছে, এই ধরনের নিপীড়ন তার ক্ষেত্রে এক অসঙ্গতি তুলে ধরে:

কঙ্গোর নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে, যার ফলে ভয়াবহ প্রাণহানীর মত ঘটনা ঘটেছে। নাগরিকদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে দেওয়া উচিত এবং নিহত অথবা গ্রেফতার হবার আতঙ্ক ছাড়াই তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেওয়া উচিত।

সিপেজে আফ্রিকার কর্মসূচি সমন্বয়ক ভ্যালেন্টিন যুক্তি প্রদর্শন করেছেন যে ইন্টারনেট ও এসএমএস আদান প্রদান বন্ধ করে দেওয়া কঙ্গোর সংবিধানের মৌলিক অধিকার হরণ [3]

ইন্টারনেট সেবা এবং মেসেজ আদান প্রদান এবং ওয়েব সাইট বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে কঙ্গোর সরকার দেশটির নাগরিকদের যোগযোগ এবং বার্তা আদান প্রদান এবং তথ্য পাওয়ার মত মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করল

জ্যাসন স্টের্না, তার ব্লগ কঙ্গো সিয়াসা ব্লগে ব্যাখ্যা করছে কেন এই সমস্ত বিক্ষোভের ক্ষেত্রে এক ভিন্ন অনুভূতি কাজ করে [6]:

কঙ্গোতে, ২০১১ সালের থেকে এখন ছাত্ররা দেশটির রাজনীতিতে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই বিক্ষোভের কেন্দ্র হচ্ছে কিনসাসা বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএনআইকিন), যা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশের হামলার শিকার হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ৩০,০০০ হাজার এবং দেশ জুড়ে এর শত শত হাজার হাজার ছাত্র রয়েছে। বুকাভাতেও, গতকাল আয়োজিত বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সম্মুখসারিতে ছিল। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক উৎসাহ প্রায়শ স্থিমিত হয়ে আসত, বিশেষ করে যখন ছাত্র নেতারা গণ্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে যেত। কিন্তু মনে হচ্ছে এবার কিছু ভিন্ন ঘটনা ঘটছে।

২০০১ সালে কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি লরা কাবিলা প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হওয়ার পর তার ছেলে জোসেফ কাবিলা দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করে। কঙ্গোর আইনে বিক্ষোভের সময় কঙ্গোর নিরাপত্তা প্রদান করা এবং নাগরিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পুলিশের। যদি পুলিশ এই দায়িত্ব সামলাতে হিমসিম খায় তাহলে পুলিশ প্রধান কঙ্গোর নিয়মিত সামরিক বাহিনীর প্রতি সাহায্যের আহ্বান জানাতে পারে।