
২০০৬ সালে মিনিয়াপোলিস সেন্ট পল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফক্স নিউজের স্ট্যান্ড। ছবি তুলেছেন রে হোয়াইটলক। ক্রিয়েটিভ কমন্সের অধীনে লাইসেন্স করা হয়েছে।
টুইটার হ্যাশট্যাগে #ফক্স নিউজ ফ্যাক্টস আমেরিকার সংবাদ চ্যানেল ফক্স নিউজ নিয়ে বেশ মজা করা হচ্ছে, বিশেষ করে এই সংবাদ সংস্থার সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞ স্টিভ এমারসন ঘোষণা নিয়ে যে ইংল্যান্ডের শহর বার্মিংহাম অমুসলমানদের যাবার জায়গা নয়- আর তার এই মন্তব্য সরাসরি সম্প্রচার হয়।
প্যারিসের সন্ত্রাসী হামলার পর এমারসন ফক্স নিউজের উপস্থাপক জেনাইন প্রিয়রকে বলেন যে “ব্রিটেনে আদতে বার্মিংহামের মত শহর রয়েছে, যা পুরোপুরি মুসলমানদের। যেখানে কোন ভাবে অমুসলমানদের যাওয়া উচিত নয়।”
যদিও বার্মিংহামে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বাস, তারপরেও সেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। বিবিসির সংবাদ অনুসারে বার্মিংহামে বাস করা ৪৬.১ শতাংশ নাগরিক বলছে, তারা খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী, সেখানে বাস করা ২১.১ শতাংশ নাগরিক মুসলমান এবং সেখানকার ১৯.৩ ভাগ নাগরিক বলছে তারা কোন ধর্ম বিশ্বাসের অনুসারী নয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রিয়র এবং এমারসন অমুসলমানদের জন্য যাওয়ার জায়াগা নয়, এমন স্থান নিয়ে আলোচনা করছিল, সে সব এলাকাকে তারা পশ্চিমের রাষ্ট্রের মাঝে এক খেলাফতের অবস্থান বলে উল্লেখ করে। তবে এই প্রথম বার্মিংহাম শহরকে ব্রিটেনে ইসলামের চেহারা জোরালো হয়ে ওঠার প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এর আগে ডেইলি মেইলের এক প্রবন্ধে ব্রিটেনের বদলে যাওয়া চেহারার ছবি হিসেবে এই শহরকে দেখানো হয়েছে এবং বৃটেনের ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি) এই শহরকে উন্মোচন হয়নি এমন এক বহু সংস্কৃতিক পরীক্ষাগার হিসেবে অভিহিত করেছে।
তবে টুইটারে বৃটেনের নাগরিকরা এমারসনের মন্তব্য নিয়ে ঠাট্টা করেছে। আর এই কাজে #ফক্সনিউজফ্যাক্ট হাশট্যাগ ৪০০,০০০ বার ব্যবহৃত হয়েছে (টপসির সংবাদ অনুসারে), আর এর বেশীর ভাগ টুইট উক্ত চ্যানেলের মুসলমান বিদ্বেষী ভুল তথ্য প্রদান নিয়ে মজা করেছে।
Jam jars across Britain are becoming radicalised. #FoxNewsFacts pic.twitter.com/0O4Cfv1DIo
— Parvez Anwar (@pavanwar) January 12, 2015
সাড়া ব্রিটেন জুড়ে জ্যামের বোতল উগ্রবাদী হয়ে উঠেছে
In birmingham, buildings wear the burqa #foxnewsfacts pic.twitter.com/S7fMfYkUht — Malcolm Coles (@malcolmcoles) January 11, 2015
বার্মিংহামে, ভবনগুলো বোরকায় নিজেদের ঢেকে নিয়েছে
Islam's spread into outer space started many years ago, as can be seen by this inter galactic burka. #foxnewsfacts pic.twitter.com/mMRH6aTVXO
— Anas Abbas (@Anas_Abbas1) January 12, 2015
বহু বছর আগে থেকে পৃথিবীর বাইরেও ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে, যা এই আন্তঃমহাজগতিক বোরকায় অনুভব করা যাচ্ছে।
Birmingham's refuse collectors are all Bin Laden #FoxNewsFacts — DaveHill (@DaveHill) January 11, 2015
বার্মিংহামের উদ্বাস্তু সংগ্রাহকদের সকলে বিন লাদেন
In Birmingham, the local death squads go by the name of Quran Quran. #foxnewsfacts pic.twitter.com/xHXFtPUHxZ
— David Jack (@DamJef) January 11, 2015
বার্মিংহামে স্থানীয় মৃত্যুর স্কোয়াড কোরান কোরান নামে পরিচিত
BREAKING: Patriotic Americans being forced by Muslim jihadists to wear burqas and burn their crosses. #FoxNewsFacts pic.twitter.com/q8PIAeJLhG
— Barracks O'Bama (@P0TUS) January 12, 2015
তাজা সংবাদ: আমেরিকার স্বদেশপ্রেমী নাগরিকদের মুসলমান জিহাদিরা জোর করে বোরখা পড়াতে বাধ্য করছে।
queen of england forced to convert to islam. seen here in her hijab. #foxnewsfacts pic.twitter.com/tl1GsZ8G4g — daley blind (@b4dderman) January 12, 2015
ইংল্যান্ডের রানীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে। দেখুন তিনি কেমন হিজাব পড়েছেন।
Concrete proof of the Islamification of Birmingham? #foxnewsfacts pic.twitter.com/t8fnD6gKX8
— Rob Sinclair (@RSinclairAuthor) January 12, 2015
বার্মিংহামের ইসলামিক করণের এক মজবুত প্রমাণ
British children are able to purchase these little confectionary mosques at any corner shop. #foxnewsfacts pic.twitter.com/hDcMYpvT8i
— Jack Tindale (@JackTindale) January 11, 2015
বৃটেনের যে কোন কোনার দোকানে দেশটির শিশুরা এই সকল ছোট্ট মসজিদ আকারে বানানো কেক কিনতে পারবে
ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহামের আমেরিকা গবেষণার অধ্যাপক স্কট লুইস বিবিসিকে বলেন যে এমারসনের মন্তব্য হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নাগরিকের কাছে আবেদন রাখবে। সেখানে “আমরা বনাম তারা”, কেউ কেউ এমন ধরনের বিষয় শুনতে চায়;যদি সততার সাথে বলি তাহলে বিষয়টি হচ্ছে আমেরিকা বনাম বাকী বিশ্ব, এটা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান নাগরিক বনাম– তারা; যারা সাদা নয় এবং যারা এক ভিন্ন মতে অবস্থান করে।
ফক্স নিউজ, যার প্রতিষ্ঠাতা রুপার্ট মার্ডক, বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে দুর্নাম রয়েছে। অতীতে এর উপস্থাপকরা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আফ্রিকান-আমেরিকান প্রভাষককে মাদক পাচারকারীদের সাথে তুলনা করে এবং এরিক গারনারের মৃত্যুতে যারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিল, তাদের ক্ষেত্রে এই সংস্থাটি এই উদ্বেগ ছড়ায় যে, এই সব বিক্ষোভকারীরা হয়ত বড়দিন উৎসবকে মাটি করবে।
এই ঘটনার পর এমারসন ফক্স নিউজে করা তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আবার সে একই সাথে বলে যে জনতার ক্ষোভে পতিত হওয়া যেন “ওয়াটারবোর্ডেড (অপরাধীর মুখে পানি ঢেলে শাস্তি প্রদান করা) হওয়া”। সিআইএ নামক সংস্থার ডিসেম্বর প্রদান করা রিপোর্ট পরপর সে তার এই মন্তব্য করল, যে রিপোর্টে বলা হয়েছে আমেরিকার নিরাপত্তা রক্ষীরা অন্যদের নির্যাতন করা এক পদ্ধতি হিসেবে ওয়াটারবোর্ড নামক শাস্তি ব্যবহার করে, যা আরো জোরালো জিজ্ঞাসাবাদের এক ধরন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে রেডিও ৪-এর সাথে কথা বলার সময় এমারসন বলে যে আমি চাই না নাগরিকরা এ বিষয়ে এই দাবী করুক যে উগ্রবাদী ইসলাম বলে কিছু নেই।
একই সাথে এমারসন বলে যে তিনি বার্মিংহাম শিশু হাসপাতালে ৫০০ পাউন্ড দান করতে চান।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী আইটিভি নিউজকে বলেছেন যে এমারসন “পরিষ্কারভাবে বলা যায় সে পুরোপুরি এক নির্বোধ”। তিনি বার্মিংহামকে “বিশ্বমানের এক অসাধারণ শহর” হিসেবে উল্লেখ করেন, যে শহর “ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের নাগরিকদের কাছে এনেছে। ৩,২০০ জন নাগরিক এক দরখাস্তে স্বাক্ষর করে, যে দরখাস্তে এমারসনকে সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। মারিয়াম স্নাপে, যিনি এই দরখাস্তের উদ্যোক্তা, তিনি বিবিসিকে বলেন” এই ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে আমেরিকার নাগরিকরা তার এই কাহিনীটি দেখেছে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বিষয়টি বিশ্বাস করে যাবে।
তার ওয়েবসাইটে এমারসন নিজেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুসন্ধান প্রকল্পের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা ইসলামের নাম ব্যবহার করা এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দল হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসবাদীদের বিষয়ে গড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্য সংগ্রহশালা এবং ইন্টেলিজেন্সি।
এরপর তিনি রবার্ট ব্লিটজারের কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি এফবিআই-এর প্রাক্তন সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ প্রধান, যে তাকে পেশার প্রশংসা করেছে। স্টিভ অনেক অনেক বছর ধরে সন্ত্রাসবাদের ধরন অনুসন্ধানে সুতীক্ষ ভাবে কাজ করে আসছে… সে অসাধারণ এক সেবা প্রদান করেছে ।
ফক্সের সেই একই সংবাদ সাক্ষাৎকারে, এমারসন একই সাথে উল্লেখ করে যে আসলেই লন্ডনের এমন কিছু অংশ রয়েছে, যেখানে আসলে মুসলমান ধর্মীয় পুলিশ রয়েছে, যারা আসলে যে কাউকে পেটায় এবং আসলে ভালভাবে জখম করে, যদি তারা মুসলমান রীতি, মুসলমান ধর্মীয় রীতিতে পোষাক না পড়ে। সে বলেছে যে যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে মুসলমান পাহারাদার বিষয়ে সে যে মন্তব্য করেছেন তার থেকে সে “একচুল” পরিমাণ নড়বে না।