- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আইএসআইএসকে ঠেকাতে সৌদি আরব ৬০০ মাইল দীর্ঘ এক “মহা প্রাচীর” নির্মাণ করতে যাচ্ছে

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরাক, সৌদি আরব, তাজা খবর, নাগরিক মাধ্যম, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ
Photo taken in Saudi Arabia by Flickr user Edward Musiak on Jan 13 2013. CC- BY.2.0 [1]

১৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে, সৌদি আরবে এই ছবি তুলেছেন ফ্লিকার ব্যবহারকারী এডোয়ার্ড মুজিয়াক। সিসি-বাই ২.০।

আজ সৌদি আরব উন্মোচন করেছে ইরাক থেকে নিজেকে আলাদা করতে এবং আইএস–এর হামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তারা দুই দেশের মাঝে ৬০০ মাইল লম্বা এক প্রতিরক্ষা দেওয়াল তৈরীর পরিকল্পনা করছে।

দি টেলিগ্রাফ [2] নামক সংবাদপত্রের মতে এই “বিশাল প্রাচীরে” যুক্ত থাকবে একটি দেওয়াল এবং একটি পরিখা (খাল) যা এই ওয়াহাবি রাষ্ট্রকে আইএসআইএস-জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা করবে, যারা এখন “সীমান্তের ওপারের ইরাকের বেশীরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করেছে” এবং তাদের মূল লক্ষ্য হিসেবে নজর এখন চূড়ান্তভাবে সৌদি আরব দখলের প্রতি, যে দেশটির মক্কা ও মদিনার দুটি পবিত্র মসজিদের অবস্থান।

গত সপ্তাহে সৌদি শহর আরার থেকে ৪০ কিলোমিটার এবং ইরাকের শহর আল নুখাইয়েব থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে সূওয়েফ সীমান্ত চৌকীতে আইএসআইএস-এর এক আত্মঘাতি বোমা হামলায় সৌদি আরবের উত্তর অঞ্চলের সীমান্তে পরিচালিত সেনা অভিযানের কমান্ডার জেনারেল ওউদাহ আল-বেলাউয়ি এবং দুজন সৌদি সেনা নিহত হয় [3]

অনেকে মনে করে ইসলামিক স্টেটস বা আইএসআইএস এর আদর্শ এবং তহবিলের পেছনে রয়েছে সৌদি আরব। পাকিস্তান থেকে ফাররুখ হোসাইনি দ্রুত উল্লেখ করেছে:

সৌদি আরব বিশাল এবং প্রচণ্ড সুরক্ষিত এক প্রাচীর তৈরী করতে যাচ্ছে- এমন এক দানবকে তার থেকে দূরে রাখার জন্য, যা তার নিজের সৃষ্টি।

লেবাননের নাগরিক তালা একই ধরনের এক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছে :

অর্থ জব্দ করা এবং ওয়াহাবী মতাদর্শের শিক্ষা প্রদান বন্ধ করার বদলে আইএসআইএসকে দূরে রাখার জন্য সৌদি আরব এক বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করতে যাচ্ছে।

এবং ফিলিস্তিনের জাভা থেকে নুরান উল্লেখ করছে:

আইএসআইএস-এর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সৌদি আরব এক ৬০০ মাইল দীর্ঘ প্রাচীর নির্মাণ করতে যাচ্ছে? তাহলে অবশেষে তারা উপলব্ধি করল যে তাদের সৃষ্টি এবার তাদেরকে ধরতে আসছে।

আইএসআইএস নিজেদের মত করে ইসলামকে উপলদ্ধির করে, যা ওয়াহাবি মতাদর্শ থেকে উদ্ভূত, যে মতবাদ সৌদি আরবেরও রাষ্ট্রীয় মতাদর্শ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ইসলামিক স্টেটস ইন ইরাক এন্ড সিরিয়ার নামে পরিচিত এই সংগঠনটি গত বছরের জুন মাসে তার নাম পাল্টে ইসলামিক স্টেটস রাখে, যার প্রধান একজন খলিফা, তার নাম আবু বকর আল বাগদাদি। ১৪০ জন প্রখ্যাত সুন্নী আলেমের [11] একটি দল এক খোলা চিঠির মাধ্যমে আইএসআইএস-কে জবাব প্রদান করেছে, যে চিঠিতে তারা এই সংগঠনটিকে বলছে যে তাদের ইসলামিক রাজ্য নামটি ব্যবহার করার কোন অধিকার নেই, কারণ স্বয়ং নিজেরা নিজেদের এক রাষ্ট্র বা খেলাফতের দাবী করছে, আর তারা নির্মম ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ সাধন এবং নির্যাতন করছে যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধে, নিউজউইক লিখেছে [12]:

সৌদি কর্মকর্তারা এই বিষয়ে কোন কথা বলতে আগ্রহী নয়, কিন্তু যে সমস্ত বিশেষজ্ঞরা সৌদি আরবের ভেতর থেকে এই সমস্ত ঘটনাবলীর এগিয়ে যাওয়াকে পর্যবেক্ষন করছে, তারা বলছে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ক্রমশ আইএসআইএস-এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকার বিষয়টি উক্ত সংগঠন উপভোগ করছে, যারা দেখছে যে শিয়া দ্বারা পরিচালিত সরকার যেমন ইরান এবং অন্যান্য শিয়া পরিচালিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলা গোষ্ঠীগত সংঘর্ষে আইএসআইএস সত্যিকারের এক বিজয়ী। সৌদি অনেক নাগরিকের কাছে আইএসআইএস ধর্মীয় এবং সরল ইসলামের প্রতীক, যেখানে তারা বিশ্বাস করে যে সৌদি রাজপরিবার এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত যে তাদের আর পরিশুদ্ধ করা সম্ভব নয়।

এখন, বছরের পর বছর ধরে সিরিয়ায় বাসার আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদপন্থী-দের দ্বারা পরিচালিত যুদ্ধের প্রতি নিন্দা জানালেও তাদের প্রতি অন্ধ এই রাজ্যের নেতারা এখন নিজের দেশে আইএসআইএস-এর প্রতি সমর্থন বাড়তে থাকার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হতে শুরু করেছে।

অনেকে এই কারণে বিস্মিত যে কি ভাবে এক প্রাচীর সৌদি আরবকে সেই শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করবে, যার বাস স্বয়ং “ঘরের ভেতরে”।

ইয়েমেন থেকে, হাইকাল বাফানা আমাদের চীনের মহাপ্রাচীর [13] এবং কি ভাবে তা বেইজিং-এর পতন ঠেকাতে ব্যার্থ হয়েছিল, সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

চীনের মহাপ্রাচীর? হ্যাঁ, এটি মোঙ্গলদের থামাতে ব্যার্থ হয়েছিল? বেশ, আইএসকে দূরে রাখাতে সৌদি আরব এক মহাপ্রাচীর নির্মাণ করতে যাচ্ছে।

এবং শাহমি এনালিস্ট উপসংহার টেনেছে এভাবে:

আমি যতটা ভেবেছে, তাদের মাধ্যম তার চেয়ে ভীতিকর।

একই সাথে সৌদি আরব তার উত্তরের প্রতিবেশী ইয়েমেনের সীমান্ত জুড়ে ১,০০০ মাইল লম্বা এক প্রাচীর নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে।