
আইএসআইএস তাদের দুটি প্রচারণামূলক ভিডিওতে নিজেকে আবদুল্লাহ নামে পরিচয় দেওয়া একটি ছেলেকে বীর হিসেবে তুলে ধরেছে। ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া প্রথম ভিডিওর ছবি।
১৩ জানুয়ারি তারিখে স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেটস-এর প্রচার মাধ্যম শাখা আল হায়াত (প্রচার মাধ্যমে যাকে প্রায়শ আইএস আইএস হিসেবে উল্লেখ করা হয়) একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দুজন ব্যক্তি সম্ভবত যারা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে তারা ছদ্মবেশী এফএসবি (রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা) গুপ্তচর, যাদের সিরিয়ায় অবস্থিত আইএসআইএস-এর উগ্রবাদী শিবিরে প্রবেশের জন্য পাঠানো হয়েছিল। ঘটনাক্রমে এই দুই ব্যক্তিকে এক কিশোর গুলি করে হত্যা করে।
অনলাইনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই নিয়ে বিতর্ক করছে যে এই ভিডিও কি আসল নাকি কোন এক ভাবে সাজানো ছিলঃ
এই ভিডিওর শেষ দৃশ্যে যে কিশোর উক্ত মানুষটিকে হত্যা করে দৃশ্যত সে সেই একই কিশোর যাকে এর আগের আল হায়াতের প্রকাশিত এক ভিডিওতে নিজেকে কাজাখস্তানের আবদুল্লাহ বলে পরিচয় দিতে দেখা যায়, এটি এমন এক তথ্য যা এই ভিডিওর নির্মাতা এক আতঙ্ক ধরানো পুরোনো কাহিনীর সাথে এই ফুটেজ যুক্ত করে, এবং তারপর ক্যামেরার অন্ধকার হয়ে যায়।
এই ভিডিও রুশ ভাষায় নির্মাণ করা হয়েছে এবং এতে ইংরেজি ও আরবী সাবটাইটেল বসানো হয়েছে, যার শুরু দৃশ্যত আইএসআইএস-এর শক্ত এক ঘাটিতে রুশ গুপ্তচরের প্রবেশের নিন্দা জানানোর মধ্যে দিয়ে:
নবীর করা হিজরাত-এর এলাকায় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং জিহাদ শুরু হবার পর থেকে, এর শত্রুরা ভেবেছে তারা ইসলামিক স্টেটসের এলাকায় গুপ্তচর এবং দালাল পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু আল্লাহ্ তাদের প্রচেষ্টা কলঙ্কিত করেছে এবং তা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এর পরের উপস্থাপিত অংশ হচ্ছে রুশ গোয়েন্দা বিভাগ নিযুক্ত দুই চরের স্বীকারোক্তি।
অভিযুক্ত দুজনের মধ্যে প্রথম জনের নাম জামবুলাত মামায়েভ, দাবী করা হয়েছে যে কাজাখ এই ব্যক্তি এফএসবি-এর হয়ে কাজ করত। তার সাক্ষাৎকার রয়েছে যে ফুটেছে, সেখানে ধারণ করা মুহূর্তে শব্দের ক্ষেত্রে কিছুটা শূন্যতা রয়েছে, দৃশ্যত যা সবচেয়ে গুরুত্বর্পূণ বিষয়। উক্ত ব্যক্তিকে তার নাম উচ্চারণ করতে বলায় তা মামায়েভ-এর মত শোনায়নি- আইএসআইএস-এর ধারণা-সম্ভবত সে ব্যক্তি তার লক্ষ্যের খুব কাছে এগিয়ে গিয়েছিল। তাকে, এফএসবির যে ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সে তার নাম উচ্চারণ করেনি:
আমার লক্ষ্য ছিল শাম [সিরিয়া] যাওয়া এবং (-) কাছাকাছি যাওয়া এবং এই বিষয়ে এফএসবিকে জানানো। এবং একই সাথে আমাদের দায়িত্ব ছিল রাশিয়া থেকে আসা যোদ্ধাদের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেগুলোকে রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া।
দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে সের্গেই আশিরভ (আসিমভ), তাকে যে নিয়ন্ত্রণ করতে উক্ত ব্যক্তিকে ইলদার বলে উল্লেখ করে এবং জানায় যে প্রাক্তন এক মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত করা সত্ত্বেও তাকে “মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করতে” বলা হয়। সবশেষে সে অন্যদেরকে বিনীত অনুরোধ জানায়, যেন রাশিয়াকে থামানোর জন্য তারা এ রকম কাজ না করে:
আর আমি সরাসরি তাদেরকে আমার বার্তা পাঠাতে চাই যারা এখানে আসতে এবং গুপ্তচগিরি করতে চায়। আমি তাদের বলব, দেরি হয়ে যাওয়ার আগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।
কতটা আসল?
এলিওট হিগিন্স যিনি ব্রাউন মোজেস ব্লগ-এর প্রতিষ্ঠাতা, সে প্রথমে ধারণকৃত এই ভিডিও-র ব্যাপারে তার সন্দেহ প্রকাশ করে:
Watched that new ISIS video frame by frame but I don't see an impact nor any blood.
— Eliot Higgins (@EliotHiggins) January 13, 2015
আইএসআইএসএর নতুন ভিডিওটির প্রতিটি ফ্রেম দেখালাম, কিন্তু তাতে আমি না দেখলাম এর কোন এক প্রভাব, না দেখলাম কোন রক্ত।
Before changing his mind:
There does appear to be some blood coming out the the 2nd victims nose just as it fades to black, so it could be genuine (unfortunately) — Eliot Higgins (@EliotHiggins) January 13, 2015
দেখে মনে হচ্ছে আটককৃত দ্বিতীয় ব্যক্তির নাক থেকে খানিকটা রক্ত বের হয়ে এসেছে যা অন্ধকারে মিশে গেছে, তাহলে এটা হয়ত সত্যিকারের এক ভিডিও (দূর্ভাগ্যজনক ভাবে)।
আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারী এর জবাবে যৌক্তিক মন্তব্য করেছে:
@EliotHiggins If they are so keen to show that a child did this, why the tricky camera angles and edits. Why not just go for it?
— DariusBazargan (@DariusBazargan) January 13, 2015
এলিওট হিগিন্স, যদি তারা একজন শিশু এই কাজটি করেছে এই বিষয়টি দেখাতে এতটাই আগ্রহী, তাহলে ক্যামেরায় কেন কৌশল এবং আর এই ভিডিওতে এত সম্পাদনা করা হয়েছে। তাহলে কেন কারুকাজ ছাড়া তা উপস্থাপন করা হল না?
পরিচয় গোপন রেখে ভিড.মিতে আপলোড করা ভিডিওর নীচে করা মন্তব্যে একই ধরনের প্রশ্নবোধক ভাব ছিল, যদিও মন্তব্যের রুক্ষ স্বর ভিডিও শেয়ার করা ওয়েব সাইটের স্বরের সাথে সম্পৃক্ত ছিল :
ওহে হেরে যাওয়া মানুষ, ওই লাথি এতটাই অস্তিত্বহীন যে এটা এমনকি বৃথা যায়নি। এই ধরনের কোন প্রযুক্তি নেই যে শিশুরা এই বন্দুক দিয়ে গুলি করতে পারে এবং এমনকি পেছনে ধাক্কা না খেয়ে কেউ এর তাক ঠিক রাখতে পারে না। গোল্লায় যাওয়া ভুয়া ভিডিও! দয়া করে কি কেউ এই করুণা উদ্রেক করা এই চলচ্চিত্র নির্মাতা কোম্পানিকে বরখাস্ত করবে। গোল্লায় যাক! তারা সবসময় এই কাজটা করে।
সকল দৃষ্টি রাশিয়া এবং কাজাখস্তানের দিকে।
সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন আইএস আইএস-এর হুমকি নিয়ে কথা বলেছেন এবং তিনি সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাসার আল আসাদের প্রতি সমর্থন প্রদান করেছেন যে অতীতে আইএসআইএস বিরোধী। কিন্তু অনেকে বিশ্বাস করে যে যেমনটা ভাবা হয় আইএসআইএস-এর হুমকি নিয়ে রাশিয়া সেই পরিমাণ উদ্বিগ্ন নয়, তবে দেশটি প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রে তার প্রভাব আরো জোরোলো করার জন্য আইএসআইএস ভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এখন কাজাখস্তান এই ভিডিও দিয়ে কি করবে সেটি আরেকটি বিষয়। প্রাথমিক ভাবে দেশটি এই কারণে বিব্রত যে আইএসআইএস দেখাচ্ছে কাজাখ শিশুরা তাদের এক উগ্রবাদী শিবিরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে, আস্থানা এখন এই ধারণার পাল্টা ধারণা তৈরী করবে যে, তার এক নাগরিক সেই একই শিবিরকে পরিশুদ্ধ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, যদিও সে অন্য এক দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে।
যদি কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতি নুরসুলতান নাজারবায়েভ ইন্টারনেটের কুবচন সাথে পরিচিত হতেন, তাহলে তিনি হয়ত উগ্রবাদী দলগুলোকে তার দেশকে তাদের খুশিমতো পরিচালনা করার জন্য অভিযুক্ত করতেন।
তাজা সংবাদ, ১৪ জনুয়ারি গ্রিনিচ মান সময় অনুসারে সকাল ৮.৫০ মিনিট: সের্গেই আসিমভ নামের এবং দেখতে এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেছে–কিন্তু তার মুখে দাড়ি আছে- তার একই সাথে ফেসবুক এবং রুশ স্যোশাল নেটওয়ার্ক সাইটে ভিকোনটাকটে একাউন্ট রয়েছে।
ফেসবুকে তার আরেক নাম হচ্ছে আবদুল্লাহ ইবনে নিকোলাই, যা এক বন্ধনীর মাঝে রেখে বোঝানো হয়েছে, তার নামটি ভিডিওতে উচ্চারিত নামের মত শোনাচ্ছে। সেই ২০১১ থেকে আসিমভের প্রোফাইল দৃশ্যত সুপ্ত রয়েছে, এটি এমন এক সময় যখন থেকে আইএসআইএস-এর উত্থান লক্ষ্য করা যায়। তার
প্রোফাইলে আসিমভ লিখেছে (নভেম্বর ২০১০):
я думаю отом чтоб попасть по милости Аллаха в рай и чтоб он простил меня за все мой грехи
আমি বেহেশতে আল্লাহর অনুগ্রহ পাবার কথা চিন্তা করছি, আর তিনি আমার সকল পাপের জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন।
একই সাথে তিনি জানান যে তিনি এক ব্যবসা শুরু করতে চান, কিন্তু তার কিছু ঋণ আছে। তিনি তার জন্ম নিবন্ধনে কাজানকে তার জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা রাশিয়ার আধা স্বায়ত্ত্বশাসিত এলাকা তাতারস্থানের রাজধানী। তার ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতে একটি কিশোরের ছবি রয়েছে যে একটি বইয়ে চুম্বন করছে দৃশ্যত যেটিকে এক কোরআন শরীফ বলে মনে হচ্ছে, অন্য ছবির মধ্যে রয়েছে বাঁদুরে বা বালাকালাভ টুপি ( চোখ এবং মুখ ছাড়া সব ঢাকে এমন টুপি) পরা ব্যক্তির ছবি যে ছবিটিকে দেখে মনে হচ্ছে আরোপিত এক ছবি এবং অন্য এক গ্রাফিকসের শিরোনাম “ রমজান মাসে তুরস্ক”।
২০১৩ সালে আসিমভকে রুশ স্যোশাল নেটওয়ার্ক সাইট ভিকোনটাকটে ব্যবহার করতে দেখা যায়, যেখানে তাকে তাতারস্থান এবং এশিয়ায় গাড়ি পরিবহন সেবার এক বিজ্ঞাপন প্রদান করতে দেখা যায়।
ভিডিওতে নিজেকে জামবুলাত মামাইয়েভ বলে দাবী করা ব্যক্তি সম্বন্ধে গ্লোবাল ভয়েসেস বিশেষ কোন তথ্য পায়নি।