#আমি২৬তমঃ মালয়েশিয়ানদের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করছে খোলা চিঠি

The Department Complex of Malaysia's Prime Minister. Flickr photo from pratanti (CC License)

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দাপ্তরিক ভবন। ফ্লিকার থেকে পাওয়া প্রাতান্তির ছবি।

মালয়েশিয়াতে ২৫ জন সাবেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা দেশটিতে ইসলামিক আইন প্রয়োগ করা সম্পর্কে একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনার আয়োজন করতে সরকারকে জোরালো সুপারিশ করে একটি খোলা চিঠিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিটি ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। বিশেষ করে যারা মনে করেন, মুসলিম-শাসিত মালয়েশিয়াতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা জেগে উঠছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের অভ্যন্তরের ক্ষমতাবান নেতৃবৃন্দ দেশটিতে আরও ব্যাপক এবং শক্তভাবে ইসলামিক আইনের বাস্তবায়ন করতে আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা চালাতে সফল হয়েছেন। ইসলামের প্রতি হুমকি বলে বিবেচিত যেকোন কিছুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদকেও তাঁরা কাজে লাগিয়েছেন।  

শাসনের বিভিন্ন প্রেক্ষিতে শরিয়া আইনের অতিরঞ্জিত এবং অনুচিত প্রয়োগ ঘটানো হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। আর এ সম্পর্কিত বেশ কিছু ইস্যু তারা চিঠিটিতে তুলে ধরেছেনঃ

আমরা বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছি, যেখানে তাদের বিচার ব্যবস্থাকে ছাড়িয়ে ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রুপকে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে দাবি করতে দেখা যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফতোয়া জারি করা হচ্ছে, যা কেন্দ্রীয় সংবিধানের পরিপন্থী এবং তা শুরার গণতান্ত্রিক [সিদ্ধান্ত গ্রহণ] এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়ার শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে থাকে। এই পরিস্থিতিতে ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী এনজিওগুলোর উত্থানকে ইসলাম বিরোধী, রাজতন্ত্র-বিরোধী এবং মালয়-বিরোধী ভিন্নমতাবলম্বী কণ্ঠস্বর হিসেবে দোষী বলে দাবি করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো যুক্তিযুক্ত আলোচনা সৃষ্টি করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে এবং দ্বন্দ্বের মীমাংসাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বিরুদ্ধ মতামতের যেকোন কাউকে চুপ করিয়ে দিতে রাজদ্রোহ আইন একটি অবিরত হুমকি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

“দেশটিতে ইসলামিক আইনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে উন্মুক্ত এবং প্রাঞ্জল বিতর্ক ও বক্তৃতাকে সমর্থন জানাতে” “ব্যক্তিগত নেতৃত্বের প্রমাণ দিতে” প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আরও বলেছেনঃ

মুসলমান হিসেবে আমরা ইসলামিক আইণের প্রয়োগ চাই। এমনকি নাগরিক আইনের চেয়ে বেশি করে আমরা ইসলামিক আইন চাই। নির্ভুল বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ মান অর্জন করতে আমরা ইসলামিক আইন চাই। কারন এটি ন্যায় বিচারের প্রতিফলন দাবি করে। ইসলামিক আইনের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যারা ইসলামের নামে কাজ করেন, তাদেরকে অবশ্যই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা দেখানোর দায় বহন করতে হবে। আর আমরাও যেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা দেখতে পাই।

চিঠিটি দ্রুত বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে অন্যান্য “সংযমী” ব্যক্তিদের উদ্বুদ্ধ করেছে। অবসরপ্রাপ্ত এই ২৫ জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার প্রতি সর্বমোট ৯৩ টি এনজিও সমর্থন জানিয়েছে। মালয়েশিয়ান বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু, শিখ এবং তাওবাদ সম্প্রদায় কাউন্সিলগুলোও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। তারা খসড়া চিঠিটি উত্থাপনের জন্য এই গ্রুপের প্রশংসা করেছেন। 

“বিশিষ্ট২৫” এর সাথে একাত্মতা দেখাতে অনেক মালয়েশিয়ান #কামিজুগা২৫ (আমরাও ২৫) শিরোনামের টুইটার হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করছেন। পরিবর্তন ডট ওআরজি ওয়েবসাইটটিতে একটি কামিজুগা২৫ অনলাইন আবেদনপত্র বিলি করা হয়েছেঃ

আমরা নীরবে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না এবং তা উচিৎ নয়। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভিন্নমত প্রকাশ, বুদ্ধিদীপ্ত বক্তৃতা এবং মতামত এবং যারা চ্যালেঞ্জ করবেন তাদের অন্যায় বা নিষ্ঠুর শাসন দিয়ে দমিয়ে রাখা এবং বিপরীত অবস্থানের সমর্থনকে দমিয়ে রাখার অস্ত্র হিসেবে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অপব্যবহার করতে দিতে পারি না। এটা অন্যায় এবং আমাদের বিভক্ত করতে আমাদের বিশ্বাসের ব্যবহারকে আমরা কখনও সহ্য করতে পারি না।

আরও জনপ্রিয় একটি অনলাইন পিটিশন “#২৬ তম হিসেবে একাত্মতা প্রকাশ করতে এক সাথে দাঁড়িয়ে” এর মাধ্যমে ২৫ জনের দলটির গৃহীত পদক্ষেপটিকে সমর্থনের জন্য “আমি #২৬তম” নামক হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করেছে।

‘আমি ২৬ তম’ থেকে ‘#কামিজুগা২৫’, সংযমীদের কণ্ঠ উচ্চ স্বরে ধ্বনিত হচ্ছে।   

একটি অনলাইন সংবাদপত্র মালয় মেইল অনলাইনের জাস্টিন অং গ্রুপের এই পদক্ষেপটিকে সাহসী এবং যথাযথ বলেছেনঃ

এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ, কেননা এমন একটি সময়ে পদক্ষেপটি নেয়া হয়েছে যখন যেকোন কিছু এবং সবকিছু রাজবৈরী অথবা অসংবেদী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে যখন জনগন বিরক্তি বা অসন্তোষের কারন দেখতে তাদের সঠিক পথের বাইরে চলে যায়, যেখানে কারও কোন সংকল্প নেই অথবা এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পদক্ষেপটি যথাযথ। কারন, দেশটিতে অনেক ভাগ রয়েছে। ধর্ম নিয়ে আরও বেশি কঠোর নিয়ম কানুন গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে এই ভাগগুলো প্রকাশিত হয়ে উঠছে।

জুরাইরি এআরও মালয় মেইল অনলাইনের একজন সাংবাদিক। কয়েকজন মালয়েশিয়ান ২৫ জনের গ্রুপের প্রতি কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনিও সেই প্রশ্নগুলো করেছেনঃ

এখন কেন? মালয়েশিয়া যখন এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছে তখন তাঁরা কেন তারা সোচ্চার হলেন না?

তারা যখন প্রশাসন ব্যবস্থার অংশ ছিলেন, তখন তারা কতটা সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন? তারা কি তাদের অনুশোচনা থেকে কথাগুলো বলছেন?

তবে সরকারের কাছে পাঠানো তাদের চিঠিটির গুরুত্ব এবং প্রভাবও তিনি শনাক্ত করেছেনঃ

রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে বিকল্প অভিমত দেয়ার মাধ্যমে তারা শুধুমাত্র এতে অংশগ্রহণই করছেন না বরং তাদের পদক্ষেপের কারনে তাদের অভিমতগুলোকে তারা আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছেন।

প্রসিদ্ধ ২৫ জনের মত কেউ যখন আওয়াজ তোলেন, তখন তারা একটি বার্তা পাঠান যে এই অভিমতগুলো শুধুমাত্র গ্রহণযোগ্যই নয়, বরং এগুলোকে সমর্থন দেয়ার মত অনেক শিষ্টাচারসম্মত জনগন আছেন।

খোলা চিঠিটি সমাজে ধর্ম এবং শাসনতন্ত্রের ভূমিকা সম্পর্কে একটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আশা করা যায়, মালয়েশিয়াতে ইসলামিক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এটি সংস্কারের বিধিবদ্ধকরা আইনকে উদ্বুদ্ধ করবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .