ক্রিকেট পাগল দেশ ভারত। সেখানকার রাস্তাঘাটে প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়- “চমৎকার ড্রাইভ খেললেন শচিন টেন্ডুলকার [2]“। মানুষজনও দীর্ঘদিন ধরে এসব শুনে অভ্যস্ত। তবে এখন অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। আজকালকার বাচ্চারা “এলানের [3] চমৎকার ফ্রি কিক” অথবা “রজার ফেদেরার [4] নিখুঁত ভলি”-এর মতো কথার সাথে ভালোভাবেই পরিচিত হয়ে গেছে। যদিও এতদিন ভারতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা নিচে আর সব খেলা চাপা পড়ে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) এর কথাটাই ধরা যাক। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত আইএসএল এশিয়ার এক নম্বর দর্শকপ্রিয় প্রতিযোগিতার [5] আসন করে নিয়েছে। আর বিশ্বে পঞ্চম দর্শকপ্রিয়। আবার টেনিসের কথাই ধরুন। আগে এই খেলার নাম খুব বেশি মানুষ জানতোই না। এখন এটি অনেক জনপ্রিয় একটি খেলা।
তো কী পরিবর্তন এসেছে? ভারতে ক্রিকেট কি তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে? না কি, অন্য খেলাগুলো অল্প সময়ের জন্য জনপ্রিয়তা পাচ্ছে?
ফুটবল খেলার কথা যখন আসে, তখন ভারতকে “ঘুমন্ত দৈত্য” (স্লিপিং জায়ান্ট) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফুটবল খেলায় দেশটি ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক আসরে চতুর্থ স্থান পেয়েছিল। তাছাড়া এশিয়ান গেমসে দু'বার স্বর্ণ বিজয়ী হয়েছে। তবে এসব সাফল্য সত্ত্বেও ভারত ফুটবল খেলায় ঘুমন্ত দৈত্য হিসেবেই আছে। আর এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে চেয়েছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ আসর। এজন্য তারা রবার্ট পিয়েরেজ, লুইস গার্সিয়া, ডেভিড ট্রেজেগুয়েত, নিকোলাস আনেলকা, ডেভিড জেমস এবং জোয়ান ক্যাপডিভিলার মতো সাবেক তারকা খেলোয়াড়দের এনেছে। এসব নামীদামী তারকা খেলোয়াড়দের নিজেদের মাঠে খেলতে দেখে নেটিজেনরা তাদের উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেননি।
Football-mad Goans queue up for #ISL [6] semifinals tickets at 6:30am. They go on sale at 10am. http://t.co/LiFlKchbcs [7] pic.twitter.com/fK2dR28ZyO [8]
— Nigel Britto (@NigelBritto) December 13, 2014 [9]
টিকেট ছাড়বে সকাল দশটায়। অথচ ফুটবল পাগল মানুষেরা সেমিফাইনালের টিকেট কাটতে ভোর সাড়ে ছয়টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।
The fireworks in the #ISL [6] matches are awesome,wish some happened on the grounds too.
— Esha Banerjee (@eshabanerjee) December 14, 2014 [10]
আইএসএল ম্যাচের আতশবাজি চমৎকার। আশা করি মাঠেও এরকম কিছু ঘটবে।
Sushanth Mathew killed it. What a beauty! The best goal I've seen so far #KERvCHE [11] #ISL [6] Indian Super League
— Aakash Singh (@AakashhSingh) December 13, 2014 [12]
সুশান্ত ম্যাথু এটা করেই ফেলছে। কী চমৎকার গোল। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে আমার দেখা সবচে’ সেরা গোল।
উত্তর আমেরিকার এমএসএল, জাপানের জে লিগ, অস্ট্রেলিয়ায় এ লিগ যেভাবে হয়, এটাও সেভাবে করা হয়েছে। ধারনাটা খুব সাধারণ- দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে আন্তজার্তিকমানের খেলা শুরু করতে খেলার ভঙ্গি, দক্ষতা এবং জ্ঞান তাদের ভিতরে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই পদ্ধতি নিশ্চিতভাবেই এমএলএস এবং এর কোম্পানিদের সাহায্য করেছিল। তারা বছরের পর বছর আন্তর্জাতিক খেলায়, এমনকি বিশ্বকাপেও ভালো করেছিল। আইএসএলেও টিপি রেহেনেশ, অর্ণব মণ্ডল এবং সুভাষ সিংয়ের মতো [13] ভারতীয় খেলোয়াড়রা সেরা খেলোয়াড়দের বিপরীদে নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়ে দিতে পেরেছেন।
খেলার যতোদিন গেছে, ততো দর্শক বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে খেলায় প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। এ থেকে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ [14]নিয়ে আশাবাদী হওয়া অমূলক নয়।
এ তো গেল ফুটবলের কথা। এবার আসি টেনিসে। ভারত টেনিসে ইতোমধ্যে সম্ভাবনার আলো ছড়াতে শুরু করেছে। চলতি বছরে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার টেনিস লিগ (আইপিটিএল)-এ বিপুল দর্শক সমাগম হয়েছিল। তাছাড়া তাদের রয়েছে মহেশ ভুপতি [15] এবং লিয়েন্ডার পেজের [16]মতো দু'জন তারকা টেনিস খেলোয়াড়। তারা দ্বৈত টেনিসে ১২বার গ্র্যান্ড স্লাম পদক জিতেছেন। যদিও ভারত একক টেনিসে তেমন খ্যাতিসম্পন্ন খেলোয়াড় তৈরি করতে পারেনি।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ভারত অন্যান্য দেশের মতো ফ্যাঞ্চাইজি টেনিস চালু করেছে। এ বছরে রজার ফেদেরার, নোভাক জেকোভিক, সেরেনা উইলিয়ামস, মারিয়া শারাপোভা, আনা ইভানোভিক, টমাস বারডিসের আন্তর্জাতিক টেনিস তারকারা ভারতের মাঠে খেলেছেন।
— Atul Dev (@errows) December 6, 2014 [17]
অ্যালান উইলকিনস কী করতে পারেন তা দেখাচ্ছেন। ঈশ্বর ফেদেরারকে রক্ষা করুন।
The @IndianAces [18] team bench celebrate @Gael_Monfils [19] victory in the super shoot out against @tsonga7 [20] in Delhi. #IPTL [21] pic.twitter.com/FGll81FgWP [22]
— AmMaD (@AmmadZahid) December 6, 2014 [23]
দিল্লিতে সঙ্গার বিরুদ্ধে সুপার শটে গোয়েল মুনফিলস বিজয়ী হওয়ার পর ইন্ডিয়ানআর্ক টিমের সদস্যরা উল্লাস করছেন।
অনেক সমস্যা সত্ত্বেও আইপিটিএল আসরের খেলাগুলো চমৎকারভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে সবচে’ বেশি যেটা হয়েছে, সেটা হলো এই আসরের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।
শুধু তাই নয়, জনপ্রিয়তা পাবার সাথে সাথে ম্যানিলা, নয়া দিল্লি, সিঙ্গাপুর এবং দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ইন্ডিয়ান আর্ক বিজয়ী হয়েছে। সবচে’ আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই আসর দর্শকদের মনোযোগ কেড়েছে এবং টেলিভিশনের রেটিং-ও বেড়েছে। টেনিসে ভারতীয়দের আগ্রহ ধরে রাখতে শুধু এই ধরনের আসরের আয়োজন করাই যথেষ্ট নয়। টেনিসের অবকাঠামোও নতুন করে করতে হবে। তবে আসবে বাধাহীন সাফল্য।
এখানেই কিন্তু শেষ নয়। ভারত ২০১৭ সালে অনৃষ্ঠিতব্য ফিফা অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের [24] আয়োজন করবে। তাছাড়া হকি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ২০১৪ [25] প্রতিযোগিতাও আয়োজন করেছে ভারত। এই প্রতিযোগিতা মাত্র কয়েকদিন আগে ভূবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খেলাধুলার বিশ্ব ভেনু হিসেবে ভারত “ঘুমন্ত দৈত্য” হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবল এবং টেনিসের মতো খেলায় ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা এই আশাবাদকে আরো উজ্জীবিত করেছে।