বাক স্বাধীনতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গুগল, সনি পিকচার্সের দি ইন্টারভিউ-নামক চলচ্চিত্রটির মুক্তি প্রদান করেছে, যেটিতে অভিনয় করেছে সেথ রোগেন এবং জেমস ফ্রাঙ্কো, আর এটি গুগল প্লে ও ইউটিউবে ভাড়া পাওয়া যাবে এবং স্ট্রিমিং করা যাবে।
এই মাসের শুরুতে, একটি হ্যাকার দলের হুমকির মুখে সনি তাদের এই রাজনৈতিক কমেডি ধাঁচের এই চলচ্চিত্রটি সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা হলগুলো মুক্তি প্রদান স্থগিত করে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যে হুমকিকে উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পৃক্ত বলে দাবী করেছে। হ্যাকারের এই দল নিজেদের দি গার্ডিয়ান অফ পীস (শান্তির রক্ষাকর্তা) নামে অভিহিত করে। তারা সনির কাছে দাবী জানায় যেন দি ইন্টারভিউ নামক চলচ্চিত্রটিকে সিনেমা হল থেকে উঠিয়ে নেয়, যে চলচ্চিত্রকে তারা “সন্ত্রাসবাদের চলচ্চিত্র” বলে অভিহিত করছে, যে সমস্ত চলচ্চিত্রে এই ছবি মুক্তি পাবে সেগুলোকেও দলটি হুমকি প্রদান করেছে। দি ইন্টারভিউ চলচ্চিত্রে রোগেন এবং ফ্রাঙ্কোর চরিত্র হচ্ছে সিআইএ-এর দ্বারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে সাংবাদিকতা পেশার ছদ্মাবরণে মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে হত্যা করা।
হ্যাকিং-এর এই অভিযোগ উত্তর কোরিয়া অস্বীকার করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছে এক যৌথ তদন্তের প্রস্তাব করেছে। স্বাধীনভাবে কাজ করা কয়েকজন বিশেষজ্ঞও প্রশ্ন তুলেছে, এই হামলার ঘটনায় যে প্রমাণ পাওয়া গেছে তা উত্তর কোরিয়াকে অভিযুক্ত করার জন্য যথেষ্ট কি না। সনির এই হ্যাকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা সংবাদ সংস্থা সিএনএন-কে বলেন, তিনি সন্ত্রাসবাদের মদদ দাতার তালিকায় উত্তর কোরিয়ার নাম পুনরায় যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছেন (২০০৮ সালে এই তালিকা থেকে উত্তর কোরিয়ার নাম ছেটে ফেলা হয়)।
গুগলের প্রধান আইন কর্মকর্তা ডেভিড ড্রামমন্ড, গুগল ব্লগে লিখেছেন:
সনি,গত বুধবার গুগল সহ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে জিজ্ঞেস করে যে আমরা কি তাদের চলচ্চিত্র “দি ইন্টারভিউ” অনলাইনে মুক্তি দিতে পারব কি না। আমাদেরও একই রকম চিন্তা ভাবনা ছিল, আর আমরা এই বিষয়ে সাহায্য করার জন্য উদগ্রীব ছিলাম- যদিও যা ঘটেছিল, তার সকল কিছুর প্রেক্ষাপটে, সবার আগে আমাদের মাথায় এসেছিল নিরাপত্তার ভাবনা।
নিশ্চয় ঘটনাটি এই আশাকে পরীক্ষা করছিল যে, চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়, সেক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু ঘটতে পারে। কিন্তু সকল বিষয় আলোচনার পর, সনি এবং গুগল একমত হয় যে, আমরা বাইরে অবস্থান গ্রহণ করে বসে থাকতে পারি না এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে অন্য কোন দেশের বাকস্বাধীনতার নির্ধারক হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারি না (যদিও এই কন্টেন্টটিকে হয়ত খুব বিচিত্র মনে হতে পারে)।
কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুসারে সকাল দশটায় (পিএসটি বা-প্যাসিফিক স্টান্ডার্ড টাইম) আপনারা গুগল প্লে এবং ইউটিউব মুভিজ-এ, “দি ইন্টারভিউ” চলচ্চিত্রটি ভাড়া নিতে বা কিনতে পারবেন। একই সাথে এক্সবক্স ভিডিও কাস্টমার-এ চলচ্চিত্রটি পাওয়া যাবে এবং www.seetheinterview.com-লিঙ্কের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি দেখতে পাওয়া যাবে।
Watching #TheInterview on you tube pic.twitter.com/Epe88QpR3x
— Howard Fineman (@howardfineman) December 24, 2014
ইউটিউবে দি ইন্টারভিউ চলচ্চিত্রটি দেখছি
এই উদ্যোগটিকে উক্ত চলচ্চিত্রের দুই জনপ্রিয় তারকা স্বাগত জানিয়েছে:
Merry X-mas MERICA! !!!!!THE INTERVIEW IS LIVE!!!!!! !!!Watch it here!!! http://t.co/oQ7YpBZXhY Thank you SONY!!!!!!!!
— James Franco (@JamesFrancoTV) December 24, 2014
শুভ বড়দিন আমেরিকা! দি ইন্টারভিউ আলোর মুখ দেখল!!!!!! !!!http://www.theinterview-movie.com , এই লিঙ্কের মাধ্যমে ছবিটা দেখুন!!! সনিকে ধন্যবাদ!!!!!!!!
You wanna watch The Interview?? You can RIGHT FUCKING NOW!! Go to http://t.co/IRhW7juZWn. Thanks Sony for making it happen. Booyah.
— Seth Rogen (@Sethrogen) December 24, 2014
দি ইন্টারভিউ ছবিটি আপনি দেখতে চান? তাহলে আপনি ঠিক এই মুহূর্তে তা দেখতে পারেন!! http://www.theinterview-movie.com। লিঙ্কের মাধ্যমে, মুক্তি প্রদানের ঘটনাকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য সনিকে ধন্যবাদ ।দারুণ।
I need to say that a comedy is best viewed in a theater full of people, so if you can, I'd watch it like that. Or call some friends over.
— Seth Rogen (@Sethrogen) December 24, 2014
আমি বলতে চাই, সিনেমা হলে ভরা দর্শকদের মাঝে একটি কমেডি ছবি উপভোগ্য, তাই যদি আপনি পারেন এভাবে দেখুন, আমি এভাবে দেখব, অথবা কয়েকজন বন্ধুকে এই চলচ্চিত্র দেখার আহ্বান জানাব।
দি গ্লোব এন্ড মেইল-এর উর্ধ্বতন মিডিয়া বিষয়ক লেখক সাইমন হোপ্ট যদিও কিছু খারাপ সংবাদ প্রদান করেছে:
Poor @SethRogen: #TheInterview won't be eligible for an Oscar. @TheAcademy rules preclude online premieres: http://t.co/AeAkVgM7TP
— Simon Houpt (@simonhoupt) December 24, 2014
অসহায় সেথ রোগেনঃ দি ইন্টারভিউ অস্কারের যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না। একাডেমি পুরস্কার নামে পরিচিত অস্কার অনলাইনে প্রথমেই চলচ্চিত্র মুক্তি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
কিন্তু একটি অস্কার অর্জন হয়ত কেবল প্রদর্শন শুরু এমন এক চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে অনেক দূরের এক ভাবনা, তবে চলচ্চিত্রটিকে তেমনভাবে কেউ মূল্যায়ন করছে না:
I likely won't see #TheInterview anytime soon. But I wanted the freedom to make this choice. pic.twitter.com/UC90mxhlU0 via @CNNWire
— Jeffrey Guterman PhD (@JeffreyGuterman) December 24, 2014
সৌভাগ্যক্রমে খুব শীঘ্রই আমার দি ইন্টারভিউ নামক চলচ্চিত্রটি দেখা হচ্ছে না। তবে এই পছন্দের ক্ষেত্রে আমি আমার স্বাধীনতা চাই।
Great that there is debate on freedom in film. Just too bad it was prompted by such a mediocre movie. #TheInterview
— Gitesh Pandya (@giteshpandya) December 24, 2014
বিষয়টি দারুণ যে স্বাধীনতার মত বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্রেও বিতর্ক তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি খুব বাজে যে সাধারণ মানের এক চলচ্চিত্র এই বিষয়টি তুলে ধরেছে।
১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে দি গার্ডিয়ান নামক দলটি যে সমস্ত সিনেমা হলে দি ইন্টারভিউ প্রদর্শিত হবে সেগুলোতে তাদের “সন্ত্রাসী হামলা” চালিয়ে যাবার হুমকি প্রদান করে। সাথে সাথে রোগেন এবং ফ্রাঙ্কো প্রদর্শনীতে সবার সামনে উপস্থিত হয়ে এই চলচ্চিত্রের প্রচারণা চালানোর ধারাবাহিক কর্মসূচি বাতিল করে,অন্যদিকে সনি তার টিভি বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নেয়। ঠিক এর পরেরদিন সনি নিরাপত্তাজনিত কারণে উত্তর আমেরিকার প্রধান প্রধান সব সিনেমা হল থেকে এই চলচ্চিত্রের মুক্তি প্রদর্শন প্রত্যাহার করে নেয়। ২৩ ডিসেম্বর তারিখে সনি ঘোষণা প্রদান করে যে সীমিত আকারে কয়েকটি স্বাধীন সিনেমা হলে দি ইন্টারভিউ–এর মুক্তি প্রদান করা হবে। ২৪ ডিসেম্বর তারিখে ইউটিউব এবং গুগলপ্লে-তে ছবিটি মুক্তি পায়।
@piersmorgan You'll pay for #TheInterview with your credit card and they'll hack u and steal your information.
— Michael (@mikeztyme) December 24, 2014
যদি আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ডের টাকা দিয়ে দি ইন্টারভিউ ছবিটি কেনেন তাহলে তারা আপনার ক্রেডিট কার্ড এবং আপনার সকল তথ্য হ্যাক করে নেবে।
সনি পিকচার্স, নভেম্বর ২০১৪ তারিখে দি গার্ডিয়ান অফ পিস-এর এক ব্যাপক সাইবার হামলার শিকার হয়। হ্যাকাররা সনির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলে, তারা সনির শত শত হাজার হাজার নিজস্ব নথি এবং ইমেইল চুরি করে এবং সাথে হুমকি প্রদান করা এক বার্তা রেখে যায়। দি গার্ডিয়ান নামক হ্যাকাররা বলছে যদি সনি স্টুডিও তাদের পরিকল্পনা অনুসারে দি ইন্টারভিউ-এর মুক্তি প্রদান করে তাহলে তারা এই সব নথি জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেবে। এছাড়াও তারা সনির কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে ভয়ঙ্কর এবং আতঙ্ক তৈরী করা ছবি দিয়ে প্রদান করা হুমকি রেখে যায় যেখানে লেখা ছিল “ কেবল আপনি একা নন, সাথে আপনার পরিবার বিপদে পড়বে”।
জুন ২০১৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক “দয়ামায়াহীন” কর্মকাণ্ডের হুমকি প্রদান করা হয়, যদি সনির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং উক্ত চলচ্চিত্রের পরিবেশক কলম্বিয়া পিকচার্স চলচ্চিত্রটি মুক্তি প্রদান করে তাহলে এই কর্মকাণ্ড ঘটানো হবে। কলম্বিয়া পিকচার্স, চলচ্চিত্রটি মুক্তির পরিকল্পনা ১০ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে ২৫ ডিসেম্বরে নিয়ে যায়, সংবাদ পাওয়া গেছে যে উত্তর কোরিয়ার কাছে চলচ্চিত্রটি যেন আরো গ্রহণযোগ্য হয়, সে ভাবে এটিকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।