স্বল্প ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, জাপানে ম্যাকডোনাল্ডের জন্য বিশাল সমস্যার তৈরী করেছে

McDonalds sponsors sumo

ম্যাকডোনাল্ড, জাপানের সুমো কুস্তি প্রতিযোগিতার স্পন্সর । ছবি গোয়াইডিওন এম. উইলিয়ামস-এর, এট্রিবিউশন ২.০ জেনেরিক (সিসি বাই ২.০)।

যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে ধর্মঘট চলতে থাকায় আলুর স্বল্পতার মত সমস্যার কারণে জাপানের ম্যাকডোনাল্ড এখন থেকে স্বল্প পরিমাণ পরিমাণ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিক্রি করতে যাচ্ছে। এ ঘটনা এই চেইন রেস্তোরাঁর ক্রমশ কমতে থাকা গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্ক এবং বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে, যে রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে আলুর স্বল্পতা হচ্ছে এ রকম আরেক উদাহরণ, যে দেখাচ্ছে জাপানে এই ফাষ্ট ফুড চেইনের একটা নির্দিষ্ট হারে পতন ঘটছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের বন্দরে এক ধর্মঘট শুরু হয়েছে যার ইতি ঘটার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, আর এ কারণে ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরা তার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিক্রির ক্ষেত্রে রেশন ব্যবস্থা পুনরায় চালু করেছে:

আজকে থেকে আপনারা জাপানের ম্যাকডোনাল্ডে কেবল স্বল্প পরিমাণ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিনতে পারবেন।

কিছু সময়ের জন্য সেট মিল বা সকল নির্ধারিত খাবার কেবল স্বল্প পরিমাণ ফেঞ্চ ফ্রাই সহকারে পরিবেশন করা হবে, স্বল্প পরিমাণে এই খাবারটি সরবরাহ করার কারণে সামান্য মূল্য ছাড় দেওয়া হবে।

#স্মলফ্রাই(#ポテトS বা স্বল্প পরিমাণ আলু ভাজা) হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে জাপানিরা সীমিত পরিমাণ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-প্রদানের বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে:

আজ থেকে আপনারা ম্যাকডোনাল্ডে কেবল স্বল্প পরিমাণ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিনতে পারবেন। আসলে বিষয়টি দুর্দান্ত, কারণ ম্যাকডোনাল্ড নিয়মিত যে পরিমাণ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিক্রি করে তা পরিমাণে অনেক বেশী, আর এখন আমরা প্রতি সেট খাবারের সাথে ৫০ ইয়েন (প্রায় ৩৮ টাকার মত) ছাড়া পাব!

অন্যেরা খাবারের পরিমাণ কমার ঘটনায় খুব একটা উৎসাহিত নয়:

সম্প্রতি আমি ম্যাকডোনাল্ডে গিয়ে আর খাবার খাই না, আর নিছক নিরুৎসাহিত করা নিষ্প্রভ স্বল্প পরিমাণ ফ্রাই, আমাকে সেখানে আর ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না।

জাপানে, ম্যাকডোনাল্ডের এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিপর্যয় দেশটিতে এই রেস্তোরাঁর ক্রমাগত সমস্যায় পতিত হবার বাস্তবতাকে তুলে ধরছে, একই দিনে, এখন থেকে বছর খানেক আগে আগস্ট ২০১৩-এ ম্যাকডোনাল্ড হোল্ডিং জাপানের প্রধান হিসেবে সারাহ ক্যাসানোভা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে আসার পর থেকে এই বিপর্যয়ের শুরু, যে কোম্পানিটি জাপানের ৩২৮০টি আউটলেট বা শাখা পরিচালনা করে।

কানাডার আদি বাসিন্দা ক্যাসানোভা ২২ বছর ধরে সুনামের সাথে ম্যাকডোনাল্ডে কাজ করে আসছে। এর আগে ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ম্যাকডোনাল্ড জাপানের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং মার্কেটিং হেড হিসেবে ক্যাসানোভা জাপানে কাজ করে গেছে। জাপানে সে একোহো হারাদার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল। একদা অ্যাপেলের নির্বাহী হারদা এক দশক ধরে জাপানের মত দেশে ম্যাকডোনাল্ডকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে, আর এই কাজে সে জাপানে ব্যবসা গুরুর সুনাম অর্জন করে।

তবে, তার বিদায় নেবার ঠিক আগের বছরটায় জাপানে ম্যাকডোনাল্ডের বিক্রির নাটকীয় পতন ঘটে আর এর কারণ ছিল একই সাথে অন্য প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া এবং জাপানের বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যার ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া।

ম্যাকডোনাল্ড জাপানের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর মধ্যে ক্যাসানোভা কয়েক ধাপে বেশ কয়েকটি ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার মধ্যে টিনজাত খাবারের সঙ্কট অর্ন্তভুক্ত ছিল। এই ঘটনা প্রতিষ্ঠানের প্রতি গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধারায়, জাপানি অনুভূতির দিক থেকে এর উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল, ক্যাসানোভা গ্রাহকদের কাছে যথাযথ ভাবে ক্ষমা চাইতে ব্যর্থ হয়। জাপানে গ্রাহকদের কাছে বেশী দামে খাবার বিক্রি করার কারণেও ম্যাকডোনাল্ড সমালোচিত।

খাদ্য কেলেঙ্কারির এই ঘটনার পর থেকে, অনেক গ্রাহক আর ম্যাকডোনাল্ডে ফিরে আসেনি। যেটি জাপানে এই কোম্পানি পরিচালনায় প্রথম বারের মত ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে এক আবদান রাখে। অক্টোবর ২০১৪-এর শেষে কোম্পানি প্রদত্ত এক বিবৃতি অনুসারে, এ বছর শেষে জাপানে ম্যাকডোনাল্ডের বছর শেষে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৯.৪ বিলিয়ন ইয়েন (৮৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), যার বিপরীতে গত বছর কোম্পানি মোট লাভ করেছিল ১১.৫ বিলিয়ন ইয়েন (১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

জাপানে এই রেস্তোরাঁর ফ্রেঞ্চাইজির মালিকেরা হতাশ, লাভ যে ক্রমশ ক্ষতিতে পরিণত হচ্ছে তারা শুধু এ কারণে হতাশ নয়, সাথে ক্যাসানোভার নেতৃত্বে ম্যাকডোনাল্ড যে ভাবে চলছে তার কারণেও হতাশ, যার কারণে ফ্রেঞ্চাইজির সাথে ব্যবসা পরিচালনায় বিভ্রান্তি এবং ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল তৈরী হয়েছে, যারা সবার আগে এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

সাময়িকভাবে রয়্যালিটি বা ম্যাকডোনাল্ডকে খাবারের স্বত্ব প্রদান করা মূল্য কমিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ফ্রেঞ্চাইজদের শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই ক্ষতি অব্যাহত থাকবে, সেখানে ফ্রেঞ্চাইজিদের ক্ষেত্রে বিক্রির এই পতনের হারে ইতি ঘটার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং বাজার পরিস্থিতি যাই হোক না কেন ম্যাকডোনাল্ড আশা করছে যে ফ্রেঞ্চাইজিরা তাদের প্রাপ্ত রয়্যালিটি প্রদান করে যাবে।

নিক্কি শিম্বুন-এ যেমনটা সংবাদ প্রদান করা হয়েছে, ফ্রাঞ্চাইজির একজন এই বিষয়ে একটি উক্তি করেছে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে:

「フランチャイズオーナーの私たちには売り上げ目標を出させておきながら、会社が赤字の業績予想を出すのはどういうことか」 

যখন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ম্যাকডোনাল্ড ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষতির মুখে থাকবে, তখন কি ভাবে আপনারা ফ্রেঞ্চাইজির মালিকদের রয়্যালিটি প্রদান করে যেতে বলছেন?

জাপানের এক ব্যবসা বিষয়ক ব্লগার পর্যবেক্ষণ করেছে:

しかし、フランチャイズオーナーらは、
「いずれは支払わなければならない」、
「実際はただ借金を負っただけ」と言う…

…「客足を回復する起爆剤にはならない…」と
見るFCオーナーの存在も。全店舗の7割近くをFC店が占め、
販売の中心は完全にFC店に移っている現状では、
消費者のみならず、FCのオーナーたちの信頼も
取り戻す必要があるのではないでしょうか。

বিষয়টি হচ্ছে এই যে, সকল দায় কাঁধে নিয়ে জাপানের সকল ফ্রেঞ্চাইজি মালিককে আগামী দিনগুলোর রয়্যালিটি প্রদানে একমত হতে আহ্বান জানানো হচ্ছে…

…ফ্রেঞ্চাইজিরা দেখতে পাচ্ছে যে বিগত কয়েক বছরে যে সমস্ত গ্রাহক ম্যাকডোনাল্ড ছেড়ে চলে গেছে তাদের কারোর আর খুব শীঘ্রই ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। জাপানে যে সমস্ত ম্যাকডোনাল্ডের স্টোর রয়েছে তার ৭০ শতাংশ ফ্রেঞ্চাইজি দ্বারা পরিচালিত। জাপানে ম্যাকডোনাল্ডের বিক্রি তাদের ফ্রেঞ্চাইজিদের উপর নির্ভরশীল। জাপানে যিনি ম্যাকডোনাল্ড পরিচালনা করবেন তাকে শুধু গ্রাহকের হৃদয় জয় করলেই হবে না, সাথে তাঁকে ফ্রেঞ্চাইজিদের হৃদয়ও জয় করতে হবে।

নিক্কির প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ফ্রাঞ্চাইজির মালিকদের ক্ষেত্রে কেবল লাভের পরিমাণ কমে আসা কিংবা জোর করে রয়্যালিটি আদায় করার চেয়ে বড় হতাশার কারণ রয়েছে:

今回、FCオーナーを取材する中で感じたのは、オーナーたちが日本マクドナルドに対して強い愛着を持ち、誇りを持って働いているという点だ。

なぜか。実はオーナーの中には元社員から独立した人が多く、日本マクドナルドの創業者である藤田田・元社長の「現場主義」に共感し、「マクドナルドに育てられた」という思いを強く抱いている。そのため、ここ数年の現場の実情と乖離した本社の施策が出てくるたびに、疑問を抱きながらも従わざるを得ないという苦渋を噛みしめていたようだ。

যখন এই কাহিনী নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে এবং ফ্রেঞ্চাইজিদের সাথে কথা বলা হয়েছে, একটি অনুভূতি ছিল স্পষ্ট: ফ্রাঞ্চাইজির মালিকরা ম্যাকডোনাল্ড জাপানের প্রতি এক শক্তিশালী ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ এবং কোম্পানির সাথে তারা তাদের কাজে গর্ব অনুভব করে।

এর অন্যতম এক কারণ হচ্ছে ম্যাকডোনাল্ডের অনেক ফ্রেঞ্চাইজি মালিক এক সময় ম্যাকডোনাল্ডের কর্মচারী হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং নিজেরা এর মালিক হয় এবং নিজেদের রেস্তোরাঁ পরিচালনা শুরু করে। হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে গ্রহণ করা ম্যাকডোনাল্ড জাপানের আদি মূল দর্শন হচ্ছে “নিচ থেকে ব্যবস্থাপনাকে উপলব্ধি করা”, যেখানে ফ্রেঞ্চাইজিরা বিশ্বাস করে যে তারা হচ্ছে সেই এক ব্যাবসায়ী, ম্যাকডোনাল্ড যা তাদের বানিয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক বছর সমূহে ঘটা প্রতিটি ঘটনা এই বিষয়টি নির্দেশ করছে যে জাপানের ম্যাকডোনাল্ডের হেড অফিসে কর্মীরা তাদের এই রেস্তোরাঁ চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিনের বাস্তবতা থেকে যতই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, ফ্রেঞ্চাইজির অধিকারীদের ততই কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়াই তাদের তিক্ততাকে হজম করতে হচ্ছে।

আরো একবার বয়স্ক জনসংখ্যাকে ধন্যবাদ, আরো কাণ্ডজ্ঞান সম্পন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সাধারণ এক ভুল ব্যবস্থাপনাকে ধন্যবাদ, ম্যাকডোনাল্ড যা জাপানে একদা যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতির পতাকা বহন করত, সে দেশটিতে এখন উক্ত প্রতিষ্ঠান এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে।

একই স্থানে ৩০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসার পর ম্যাকডোনাল্ডের চোয়ো রিঙ্কান স্টোর ১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে বন্ধ হয়ে যায়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .