
তিজানা আইন বাস্তবায়নে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানোর উদ্দেশ্যে তৈরী করা এর একটি ছবি ইন্টারনেটে দ্রুত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, সাথে যে প্রশ্নটি সকলের জিজ্ঞাস্য ছিল, কেন তিজানা আইনটিকে গ্রহণ করা হচ্ছে না? এক অজানা শিল্পী এই ছবিটি এঁকেছে।
আগস্ট ২০১৪-এর শুরুতে ১৫ বছর বয়স্ক তিজানা জুরিচকে ঘৃণ্যভাবে হত্যা করা হয়, যা সার্ব সমাজকে এত গভীরভাবে আঘাত করে যে নাগরিকরা এই ঘটনায় পুনরায় মৃত্যুদণ্ডের মত শাস্তি প্রয়োগের আহ্বান জানায়। তবে ইগোর জুরিচ, ঘটনার শিকার এই কিশোরীর পিতা, নাভি সাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এক সমাধান তৈরী করেছে, অনেক যাকে উত্তম এক সমাধান বলে মনে করছে।নিজের কন্যার এই করুণ মৃত্যুর পর,সার্ব সরকারের কাছে জুরিচ এক নতুন আইনের প্রস্তাব করে, যে আইনের প্রয়োগ হয়ত তার মেয়ের জীবন বাঁচাতে পারত।
প্রস্তাবিত নতুন এই আইনটিকে “তিজানা আইন” নামে অভিহিত করা হচ্ছে এবং আগস্ট ২০১৪-এ এটি উপস্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু সার্ব সরকার এখন পর্যন্ত এই আইনটি পাস করেনি, এমনকি এই নিয়ে সংসদে আলোচনাও করেনি। এর প্রায় চার মাস পরে স্যোশাল নেটওয়ার্ক #পোডরজি (একে সমর্থন কর) নামক হ্যাশট্যাগে ভরে যায় এবং ব্যবহারকারীদের স্যোশ্যাল নেটওয়ার্কে তৈরী করা ছবি একই প্রশ্ন করছে:“কেন এখনো তিজানা আইন পাস করা হচ্ছে না”?
Koliko jos dece treba da strada da bi ste usvojili Tijanin zakon? Ili je pravo pitanje cije dete ? #podrzi pic.twitter.com/ccpTJp2TuY
— Bobana48 (@Bobana48) December 15, 2014
তিজানা আইন চালু করার জন্য আর কতগুলো শিশুকে মরতে হবে? আর এক সঠিক প্রশ্ন, কার সন্তানকে?
এই নতুন আইনে খুব সাধারণ এক প্রস্তাব রাখা হয়েছে যে পিতামাতা বা অভিভাবক যখনই কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক কোন সন্তানের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ প্রদান করবে, সাথে সাথে পুলিশ তার অনুসন্ধান শুরু করবে এবং সার্বিয়ার উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন অপরাধ দমন বিভাগও দ্রুত এই অনুসন্ধানের সাথে যুক্ত হবে। উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন অপরাধ দমন বিভাগও, পুলিশকে নিখোঁজ সেই অপ্রাপ্তবয়স্ক এই ছেলে বা মেয়ের মোবাইল ফোনের অবস্থান জানাবে,সাথে সাথে মোবাইল ফোনের আশেপাশের অবস্থানও তুলে ধরবে, যা হয়ত এই সমস্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে।
তিজানা জুরিচের ঘটনায় যার বিরুদ্ধে তাকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, সে আদালতে স্বীকার করেছে যে সে এই ঘৃণ্য অপরাধ করেছে। ঘটনাক্রমে পুলিশ অপরাধীর মোবাইল ফোনের অবস্থান চিহ্নিত করার মধ্যে দিয়ে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে, কিন্তু তা তারা করে তিজানার মৃত্যুর পর।যে দিন সন্ধ্যায় তিজানাকে অপহরণ করা হয়, সে সময় তার মোবাইল ফোন তার সাথেই ছিল এবং তার অপহরণ ও খুনের যে সময়, তার মাঝে হয়ত তিজানার ফোনের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল। অন্তত তত্বগত ভাবে ধরে নেওয়া যায়, যদি এমন আইন থাকত, যার কারণে পুলিশ সাথে সাথে মাঠে নেমে পড়ত এবং উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন অপরাধ দমন পুলিশ বিভাগ সময় মত মোবাইল ফোনের অবস্থান চিহ্নিত করত,তাহলে হয়ত তিজানার জীবন বাঁচানো সম্ভব হত। তিজানা আইনে কর্তৃপক্ষকে ঠিক এই ধরনের দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জুরিচ জন সম্মুখে নাগরিকদের প্রতি সংসদের উপর চাপ সৃষ্টিতে তাকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছে, এতে তিনি উল্লেখ করেন যে তার মেয়ের মৃত্যুর পর এই আইনে বাস্তবায়ন তার জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিজানার পিতা ইগোর জুরিচ একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, যেখানে লেখা রয়েছে “তিজানা আইন বাস্তবায়নে আমাকে সাহায্য করুন”। প্রস্তাবিত এই আইনের সমর্থনে শুরু হওয়া অনলাইন প্রচারণায় প্রথম যে সব ছবি প্রকাশ হয়েছে এটা তার মধ্যে অন্যতম এবং স্যোশাল মিডিয়ায় এটা ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।
যখন কেউ কেউ বলছে এই ধরনের ঘটনার জন্য সার্বিয়ার বিদ্যমান আইন যথেষ্ট, তখন মনে হচ্ছে অনেকে বিদ্যমান আইন এবং তার প্রয়োগ নিয়ে অসন্তুষ্ট। #পোডরজি নামক আন্দোলন টুইটার এবং ফেসবুক উভয় জায়গায় জোরালো ভাবে বিদ্যমান। তিজানা আইন নিয়ে যে আন্দোলন সে বিষয়ক ছবি সংগ্রহে এবং তার সমর্থনে ১৪ ডিসেম্বর তারিখে তৈরী করা ফেসবুক পাতা একদিনে ৫০০০-এর কাছাকাছি সমর্থক সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। প্রস্তাবিত এই আইনকে সমর্থন করছে এমন ডজন খানেক ব্যবহারকারীর কাছ থেকে এই পাতা ছবিও সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় এবং প্রতি ঘণ্টায় এখানে নতুন নতুন ছবি পোস্ট করা হচ্ছে।