চীনে আলীবাবার বিপুল মুনাফা ও এর নেতিবাচক প্রভাব

Artist Wu Tun's T-shirt print. From Wu's Twitter.

শিল্প য়ু টান-এর টিশার্ট প্রিন্ট। য়ু-এর টুইটার থেকে নেয়া।

চীনে ১১ নভেম্বর অবিবাহিতদের দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটি চীনের তরুণ-তরুণীরা ঘটা করে পালন করেন। এদিনে তারা কেনাকাটায় মেতে ওঠেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তারা সিঙ্গেলস ডে-তে অনলাইনে বিপুল পরিমাণ কেনাকাটা করেছেন। আর অনলাইনে তাদের কেনাকাটার সূত্রেই ই-কমার্স সাইট আলীবাবা প্রতিবছর পত্রিকার শিরোনাম হয়। এবছরও রেকর্ড পরিমাণ পণ্য বিক্রি করে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে সাইটটি। এ বছর তারা ৯.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর এদিনে তারা ৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছিল।

আলীবাবা মাত্র দু'মাস আগে আমেরিকার শেয়ার বাজারে প্রাথমিক শেয়ার ছেড়েছে। সেখানেও রেকর্ড গড়েছে তারা। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আইপিও ছেড়েছে। আর প্রাথমিক শেয়ার ছাড়ার প্রথমদিনে দিনশেষে এর বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছিল ২৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আলীবাবার এই রমরমা অবস্থা চীনের অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছে। আর তাদের এই রমরমা অবস্থা ধরে রাখতে তারা সরকার, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মতো স্বাধীন সংগঠন এবং ভিন্ন মতো রাজনৈতিকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হয়েছে।

মার্কিন স্টক মার্কেটে শেয়ার ছাড়ার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই চায়না রুরাল লাইব্রেরি নামের একটি স্বতন্ত্র লাইব্রেরি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। এসময়ে কর্তৃপক্ষের কোপানলে পড়ে দেশটির আরো ১৯টি লাইব্রেরি বন্ধ হয়। উল্লেখ্য, চায়না রুরাল লাইব্রেরি অনলাইনে বেচাকেনা করতো। লেখাপড়া ও লাইব্রেরি প্রজেক্টের খরচ উঠে আসতো এই বেচাকেনা থেকে। চীনা কর্তৃপক্ষ মনে করে, সাধারণ নাগরিকদের এইসব প্রকল্প চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

কয়েকদিন আগে তাওবাও (আমাজনের মতো একটি সাইট) নামের সাইটটি আলীবাবা কিনে নেয়। কিনে নেয়ার পরেই তারা শিল্পী য়ু টানের অনলাইন শপ বন্ধ করে দেয়। প্রতিষ্ঠানটি তাদের একটি টিশার্টে “এখানে ভালোবাসা থাকতে পারে না” লেখাটি ছিল। চীনা ভাষায় ভালোবাসা শব্দটি শুনতে অনেকটা “আই” (Ai)এর মতো শুনায়। টিশার্টের লেখাটি একটি বিদেশী প্রচারণা কার্যক্রম থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে করা হয়েছিল। সেই প্রচারণার লাইনটি হলো: “আই এখানে থাকতে পারেন না”। সেই প্রচারণার মাধ্যমে শিল্পী, অ্যাক্টিভিস্ট আই উইউই-এর মুক্তি দাবি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে চীনা কর্তৃপক্ষ বিনাবিচারে এই শিল্পীকে ৮১ দিন আটক করে রেখেছিল। বর্তমানে উইউই চীনা নিরাপত্তার বাহিনী নজরদারিতে আছেন। তাছাড়া তার দেশ ছাড়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বী হু জিয়া রেডিও ফ্রি এশিয়ার কাছে ব্যাখ্যা করেন কীভাবে অনলাইন শপের মাধ্যমে ভিন্ন মতাবম্বলীরা নিগৃহের শিকার হচ্ছেন:

你只要是发出异见,当局一般来讲围剿你的手段基本上两方面,一个是斩断你的社会联系,让你四面楚歌,你身边的家人朋友对你避而远之,还有一个手段就是斩断你的经济来源。现在当局就是这样,他的侦查情报系统非常发达,可以获取到各种各样的信息,这些异见者他们的生活来源是从哪里来的。如果你是在中国国内获得的这些收入,他掐死你太容易了,就给你关这个网店,用不了10分钟就办妥了,你的店就给你销户了。

আপনার বক্তব্য একবার যদি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে আপনি দু'ধরনের সমস্যার মুখে পড়বেন। প্রথমত: আপনার সামাজিক যোগাযোগগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এতে আপনি একাকিত্ব বোধ করবেন। সবচে’ বড়ো কথা হলো পরিবার এবং বন্ধুদের জোর করে আপনার কাছ থেকে দূরে রাখা হবে। দ্বিতীয়ত, আপনার আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়া হবে। তারা সব ভিন্নমত পোষণকারীদের আয়ের যাবতীয় উৎসগুলো খুঁজে বের করে। আপনার আয় যদি মেইনল্যান্ড চায়না থেকে আসে, সেটা বন্ধ করা খুব সোজা। তারা শুধুমাত্র আপনার অনলাইনের ব্যবসা বন্ধ করে দিবে। আপনার ব্যবসা ১০ মিনিটও টিকবে না।

রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীরাই শুধূ তাওবাও-এর সমালোচনা করছেন না। মনোপলি বাজারের কারণে ছোট ছোট খুচরা বিক্রেতারাও তুমুল প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন। মাত্র অল্প সংখ্যক ক্ষুদ্র বিক্রেতারাই টিকে থাকতে পারছেন।

একজন ক্ষুদ্র বিক্রেতা চীনের অনলাইন ব্যবসা মনোপলি হওয়ার কারণে কেমন বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। লেটসক্রপ নামের একটি ওয়েবসাইট গত ১৩ নভেম্বর ২০১৪-এ সেই লেখাটি অনলাইনে পুনরায় প্রকাশ করেছে:

绝大多数人会使用网络购物的方式来购物。当中也包括我,我现在所有的衣服裤子和很多工具都是网购,又好又便宜,又方便。的确很好。[…]

不良影响 ①:大批的商店、服装店、工具店、数码城、商场、将会关门歇业,即使留下的也是苦苦支撑,难以有富余的利润。网上经常有看到北京中关村,深圳华强北等一些以前举足轻重的大市场已经陷入了萧条。

②:很多零售店主失业,很多营业员,促销员将会失业。很多房东老板的店铺将会租不出去。这一部分人是最先受到淘宝影响的,且影响是最大最直接的。[…]

淘宝的成立初衷就是让所有卖家直接面对消费者,减少中间环节,让消费者得到好处。这个成立初衷也许是好的,但是淘宝演变到今天他自己也没有想到会发展成这样。会发展成为消灭了实体中间商,最后连厂家都不得不为了生存大量竞争起来。[…]

马云曾经说过一句话将来要么电子商务,要么无商可务。[…]整个中国百分之五十的零售都归淘宝卖了,而且还是很低或者没有利润的卖的,而且还会影响本来实体店卖的价格,大家想一想中国会怎样,中国的经济会怎样。原本从中能够获得利润而养家糊口的有多少人,多少家庭。我不敢想,没有利润的中国将会发生什么。

আমার মতো অসংখ্য মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করেন। আমার সব জামাকাপড়, হার্ডওয়্যার আামি অনলাইনে কিনি। এটা আমার কাছে সহজ মনে হয়। তাছাড়া সস্তায় মেলে। […]

বিরূপ প্রভাবগুলো হলো: ১. ফ্যাশন হাউজ, হার্ডওয়্যারের দোকান, ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানের মতো বিপুল সংখ্যক দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। তারা যদি টিকেও থাকে, তাহলে তাদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে। দোকানগুলো চালিয়ে নেয়ার মতো মুনাফা করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে। কম্পিউটার এবং ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেটের জন্য বিখ্যাত বেইজিংয়ের জংগুয়ানকান, সেনজিংয়ের হুয়াকুয়ান নর্থ ডিস্ট্রিকসহ অন্যান্য মার্কেটে মন্দা শুরু হয়েছে।

২. অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন। দোকানের কর্মীরা বেকার হয়ে পড়ছেন। এর প্রতিক্রিয়া পড়েছে দোকান মালিকদের উপরেও। তারা তাদের দোকানগুলো ভাড়া দেয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের ওপর তাওবাও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

তাওবাও শুরু হয়েছিল লেনদেন খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে যাতে ভোক্তারা আরো বেশি লাভবান হন। তাদের উদ্দেশ্য মহৎ ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি জায়গায় যাবে, তা উদ্যোক্তা অনুমান করতে পারেননি। এটা সব ধরনের মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের তাড়িয়ে দিয়েছে। উত্পাদনকারীরা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছেন। […]

আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাক মা একদা বলেছিলেন, আগামী দিনে সব ধরনের কেনাকাটা হবে অনলাইনে। বর্তমানে চীনের ৫০% খুচরা ব্যবসা তাওবাওয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাদের দাম কম থাকে এবং তারা খুব কম পরিমাণ মুনাফা করে। এই কম দাম রাখার প্রবণতা প্রকৃত দোকানদারদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আগামীদিনের চীনা অর্থনীতি কেমন হবে তা কল্পনা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ মুনাফা করতে না পারলে সংসার কীভাবে চালাবে?

1 টি মন্তব্য

  • Jessicay Juliay

    অনলাইন কেনাকাটার খুব নামকরা সাইট আলীবাবা। এর বিপুল মুনাফা ও নেতিবাচক অনেক তথ্য জানতে পারলাম খুব ভাল লাগল।

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .