
বাংলাদেশের সুন্দরবন, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ, সেখানকার কোকিলমণি এলাকায় চিত্রা হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবি মোস্তাফিজুর রহমান। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (৫/১১/২০১৪)।
৯ ডিসেম্বর তারিখে শ্যালা নদীতে ৩৫৮,০০০ লিটার (প্রায় ১০০,০০০ গ্যালন) ফার্নেস তেল বহন করা এক ট্যাংকার ডুবে গেলে সুন্দরবনের প্রায় ৬০ কিলোমিটার (প্রায় ৩৭ মাইল) এলাকা জুড়ে তেল ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থিত সুন্দরবন একক ভাবে একসাথে জুড়ে থাকা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, যা প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার (৩,৯০০ মাইল) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, আর এর ৬০ শতাংশ বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থিত। সুন্দরবন হচ্ছে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অংশ, যা বেঙ্গল টাইগারের জন্য সংরক্ষিত অন্যতম এক বৃহৎ বনাঞ্চল, এবং অন্য অনেক প্রাণীর জন্য এক অভয়ারণ্য।
@stephenfry Pls RT: “Oil spill threatens wildlife esp. rare dolphins & birds of Sundarbans-BD” #SundarbansDisaster pic.twitter.com/WtuoRccvZS
— Faiyaz Taifur (@FaiyazTaifur) December 12, 2014
দয়া করা পুনরায় টুইট করুন: ছড়িয়ে পড়া তেল বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে ডলফিন এবং সুন্দরবনের পাখিদের জন্য হুমকি তৈরী করেছে।
1st ever @oilslick in the #Sunderbans threatens world's largest @mangrove ecosystem, a @UNESCO World @HeritageSite http://t.co/NrqAVtyRZS
— SALEEM SAMAD (@saleemsamad) December 12, 2014
সুন্দরবনে প্রথমবারের মত তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিবেশ ব্যবস্থা হুমকির মুখে, যা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অংশ।
Disaster in #Sundarbans >> Sela banks turn pitch black Sinking oil tanker was actually a modified and… http://t.co/2YIFoLihPb
— Polash Datta (@polashdatta) December 11, 2014
সুন্দরবনে বিপর্যয়, ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারের ছড়িয়ে পড়া তেলে শ্যালা নদীর তীরের চেহারা পাল্টে গেছে।
The #oilspill at #sundarban threatens hundreds of endangered species. @wwwfoecouk @wbclimatechange @the_ecologist pic.twitter.com/Z0G8SKHaAd
— Rumi Ahmed (@rumiahmed) December 13, 2014
সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ায় বিপন্নপ্রায় শত শত প্রাণী হুমকির সম্মুখীন।
সংবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নতুন করে তেল ছড়িয়ে পড়ায় মৃগমারী-নন্দবালা-আন্ধারমানিক আশ্রয়স্থলের ডলফিনরা হুমকির মুখে। তেলের এই দুষণ এই অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ গাছগুলোর ক্ষেত্রে প্রচণ্ড সন্দেহের সৃষ্টি করেছে যে-সম্ভবত এই এলাকার জলজ জীবের পর সেগুলোরও মৃত্যু ঘটবে, সাধারণত যে সব জীব সবার আগে বিনষ্ট হয়। ফ্লিকারে এক ইনফোগ্রাফিকের মাধ্যমে ফাহিম হাসান এই বিপর্যয়ের বিস্তারিত ব্যাখা প্রদান করেছে।
মোওগ্লিজ এলিজাবেথ রুবাইয়াত-এর পোস্ট করা এক ফেসবুক ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে এই বিপর্যয়ে ইতোমধ্যে কিছু প্রাণী মৃত্যুবরণ করেছে। দৃশ্যত স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি ধারণা বাইরে, যারা এর আগে কখনো এত বিপুল পরিমাণ তেল ছড়িয়ে পড়ার মত ঘটনার মুখোমুখি হয়নি এবং এই ঘটনায় যথাযথ ভাবে সাড়া দেওয়ার মত সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। আল জাজিরা সংবাদ প্রদান করছে যে বেশ কিছু স্থানীয় জেলে স্পঞ্জ এবং বস্তা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে এগিয়ে এসেছে।
যে ভাবে কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে সাড়া প্রদান করেছে, অনেক টুইটার ব্যবহারকারী তাতে প্রশ্ন তুলেছে :
Talk to the org that worked after 2010 Gulf oil spill! Seriously guys … “Authorities clueless in the Sundarbans” http://t.co/z7vZPqVSuf
— Sumaiya Shams (@sumaiya_s) December 12, 2014
২০১০ সালে উপসাগরীয় এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তাদের সাথে কথা বলুন! নিঃসন্দেহে …সুন্দরবনের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কোন ধারণা নেই।
A #Bangladesh govt minister says a UK company has offered to clean up 60-km oil slick that is threatening the Sunderbans mangrove forest.
— Sabir Mustafa (@Sabir59) December 12, 2014
বাংলাদেশ সরকারের এক মন্ত্রী বলেছেন যে ৬০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যে তেল চুইয়ে পড়ার ঘটনা সুন্দরবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানি সেই এলাকা পরিষ্কার করার প্রস্তাব প্রদান করেছে।
#SundarbansDisaster Recovery efforts with pots and pans http://t.co/i3BGDwrw6P
— Faiyaz Taifur (@FaiyazTaifur) December 12, 2014
বদনা আর বালতি নিয়ে সুন্দরবন বিপর্যয় থেকে উদ্ধার পাবার প্রচেষ্টা।
এই উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য, সরকার এক উদ্ধারকারী জাহাজ ছড়িয়ে পড়া তেলের উপর ছিটানোর রাসায়নিক উপাদান বয়ে আনে। যদি এই সমস্ত রাসায়নিক উপাদান যথাযথভাবে ছিটানো না হয়, তবে তা স্থানীয় পরিবেশের ক্ষতিকরতে পারে। চারদিন পরে, দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই প্রচেষ্টা খুব সামান্য কাজে এসেছে, এই এলাকায় এক দীর্ঘস্থায়ী পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
59 hours gone-by http://t.co/JThyipvfep #Bangladesh starts sparying oil neutraliser in #Sundarbans river #BD #OilSpill #DhakaTribune
— Polash Datta (@polashdatta) December 11, 2014
৫৯ ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পর, সরকার সুন্দরবনের এই নদী থেকে তেল অপসারণের কাজ শুরু করে।
বাংলাদেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রী বলেছেন স্থানীয় লোকেরাই বনে তেল প্রবেশ রোধ করতে সক্ষম, তারা জাল ব্যবহার করে তা করতে পারে এবং পরিস্থিতি যাতে আরো খারাপে পরিণত না হয় তারা পানি থেকে তেল অপসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ১০০ নৌকা এবং ২০০ জন জেলে নিয়ে জাতীয় বন বিভাগ এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এই ভাবে তেল ছড়িয়ে পড়ার জন্য যে দুটি কার্গো দায়ী, বন বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেছে।
তেল ছড়িয়ে পড়ার ঠিক একমাস আগে, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন দেখতে ঠিক এ রকম ছিল:
আহমেদ শরীফ, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দুর্বল পরিকল্পনার নিন্দা করেছে :
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলতে কি শুধু বন্যা-জলোচ্ছ্বাস বোঝায়? গত দুই দশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দ্রুত অগ্রগতির সাথে সাথে যেসব ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলির জন্যে আমরা নিজেদের তৈরি করতে পারিনি। নদীতে জাহাজের সংখ্যা আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে গেছে, কিন্তু তার সাথে পাল্লা দিয়ে তৈরি হয়নি মনিটরিং এজেন্সিগুলি। জাহাজ তৈরি হচ্ছে যথেচ্ছভাবে, যাত্রী নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত, ফিটনেসবিহীন জাহাজ চলছে, নদীর পানি দূষণ করছে জাহাজের বর্জ্য, নদীর মাঝে পার্ক করে রাখা হচ্ছে জাহাজ, সঠিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই চলছে জাহাজ, চলাচলের সময় ঠিক করে দেয়ার পরেও কেউ মানছেনা – কেউ দেখার নেই। কাজেই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। আর দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়লেও সেটার জন্যে প্রস্তুতি নেই আমাদের।
ইউটিউব ব্যবহারকারী এ.কে.এম ওয়াহেদুজ্জামান একটি ভিডিও আপলোড করেছে, যেটিতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় ধরা পড়েছে:
গত শুক্রবার প্রথম এই দুর্ঘটনা কারণে নিহত দুর্লভ এক প্রজাতির ইরাবতী ডলফিনের একটি মৃতদেহ আবিষ্কার হয়। এক সংবাদ জানা গেছে, পদ্মা অয়েল কোম্পানি তার অপসারণ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ১০,০০০ লিটার (প্রায় ২,৬০০ গ্যালন তেল) তেল অপসারণ করতে সক্ষম হয়। এই কোম্পানিটি, পরিষ্কার কাজে অংশগ্রহণ করা ব্যক্তিকে প্রতি লিটার তেল (প্রায় ৩৪ আউন্স) অপসারণের জন্য ৩০ টাকা (প্রায় ৪০ সেন্ট) করে প্রদান করেছে।
গায়ক এবং ব্লগার ম্যাক হক তার ফেসবুকে মন্তব্য করেছে :
যে বিষয়টি বাঁধো বাঁধো ঠেকে তা হচ্ছে পূর্নাঙ্গ নয়, এমন এক অপসারণ অভিযান। এখানে প্রতি লিটার ফার্নেস তেল উদ্ধার করলে তার জন্য ৩০ টাকা প্রদান করা হচ্ছে, হাজার হাজার নাগরিক এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, কিন্তু তারা সুন্দরবন অস্তিত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসছে না, নিঃসন্দেহে দরিদ্রের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র তাদের জন্য এটা একটা অভাবনীয় লাভ। তবে ফার্নেস তেলে বিপজ্জনক টক্সিন থেকে মানব স্বাস্থ্যের জন্য যে ঝুঁকি তৈরী হয় সে বিষয়ে কাউকে কথা বলতে শুনিনি। বিশ্বের যে কোন প্রান্তে নাগরিকদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার জন্য সরকারকে জনগণের মামলার মুখোমুখি হতে হত। আমি দেখতে পাচ্ছি আগামীতে গরীব এবং উপেক্ষিত নাগরিকদের মৃত্যু যার জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর দূরদৃষ্টির অভাবকে ধন্যবাদ, আমাদের মনোযোগ কেবল মৃত ডলফিন খুঁজে ফেরার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না-সাথে মানবদেহে রোগ ছড়িয়ে পড়ার দিকেও নজর দিতে হবে।
সুন্দরবনের নদী ও খাল দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকার কারণে বাংলাদেশকে তার পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় সুশীল সমাজ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের উপর নির্ভর করতে হবে।