#আমি শ্বাস নিতে পারছি না: হাজার হাজার লোক যানবাহন চলাচল বন্ধ করে রেখেছে, বোস্টনে ন্যায্যতার দাবী জানাচ্ছে

Demonstrators in Boston. Photo by @windowlej via Twitter.

বোস্টনে বিক্ষোভকারীরা, ছবি টুইটারের মাধ্যমে @উইন্ডোলেজ এর সৌজন্যে

আমি ও হাজার হাজার লোক ফার্গুসন মিসৌরির মাইকেল ব্রাউন, এবং নিউ ইয়র্ক শহরের  এরিক গারনার কে হত্যাকারী পুলিশ অফিসারদেরকে বেকসুর খালাস দেয়ার আদালতের সিদ্ধান্তের অবমাননা করে বিক্ষোভ করার জন্য ডিসেম্বরের ৪ তারিখের রাতে বোস্টন কমন-এ এসে জড়ো হয়েছিলাম। শহরের কেন্দ্রস্থলে বড় এই উদ্যানে জনতার ঢল নেমেছিল যাদের বেশীরভাগই ছিল যুবকযুবতী, যাদের জড়ো হওয়া বাৎসরিক ক্রিসমাস ট্রির আলোকসজ্জার উৎসবকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল যে অনুষ্ঠানটি উদ্যানের মূল শিখরে অবস্থিত রাজ্য ভবন থেকে কয়েকশ’ গজ দূরে ‍পালিত হচ্ছিল।

গত সপ্তাহে ১২ জন জুরি – যাদের ৯ জনই সাদা – যে পুলিশ অফিসার ১৮ বছর বয়েসি কালো তরুণকে গুলি করে হত্যা করেছে সেই  ড্যারেন উইলসকে দোষী সাব্যস্ত না করার ভোট দেয়ার পরপরই ফার্গুসন মিসৌরিতে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়, যার মৃত্যুর ফলে দীর্ঘ দিনের গণ প্রতিবাদের সূত্রপাত হয়, এবং তার উত্তরে পুলিশের সমরবাজ ভূমিকা পালন শুরু হয়। মাত্র এই সপ্তাহে লাইসেন্স ছাড়া খোলা সিগারেট বিক্রয় করার অভিযোগে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এরিক গারনারকে শ্বাস রোধ করে হত্যাকারী পুলিশ অফিসার ড্যানিয়েল প্যান্টালেও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে নিউ ইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরিরা।

মোবাইল ফোনে গারনার হত্যার ভিডিও চিত্র থেকে প্রমাণিত হয় যে গারনার অফিসারদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেছিল, যখন সে বার বার বলে যাচ্ছিল যা এখন একটি সমবেত আবেদনে রূপ নিয়েছে, ’আমি শ্বাস নিতে পারছি না!’ ঐ ঘটনার ভিডিওটি তুলেছিল গারনারের এক বন্ধু রামজি ওর্টা যাকে পরবর্তীতে অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

উভয় ক্ষেত্রেই গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমেরিকা জুড়ে জনগোষ্ঠী মর্মাঘাত ও ক্রোধে স্তব্ধ হয়ে গেছে। এ সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক শহরে, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া এবং বোস্টনে বিক্ষোভকারীরা #কালোদেরজীবনেরওমূল্যআছে এবং #আমিশ্বাসনিতেপারছিনা এর মতো হ্যাশট্যাগগুলোকে তাদের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করছে, যার ফলে ফার্গুসনের সিদ্ধান্ত আসার পর থেকে এগুলোই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছেয়ে গেছে। এবং হ্যাশট্যাগের বহু আগে প্রচলিত অন্যান্য প্রাচীন প্রতিবাদের ভাষা আবারও পুনরুজ্জীবিত হওয়া আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে এই সমস্যাটি নতুন কোন সমস্যা নয়: 

’হেই-হেই! হো-হো! এই বর্ণবাদি পুলিশ তোরা দূর হ।’ 

’ন্যায্যতা নেই তো শান্তি নেই। বর্ণবাদি পুলিশ নিপাত যাক।’ 

Demonstrators gather at statehouse in Boston Common. Photo by Ellery Biddle.

বিক্ষোভকারীরা বোস্টন কমন-এ রাজ্য ভবনের সামনে জড়ো হয়েছে। ছবি তুলেছে এলারী রবার্টস বিডেল

বোস্টনে পুলিশ গণ পরিবহণের বাসগুলোতে যেখানে চুড়ান্ত গন্তব্যের কথা লেখা থাকে সেখানে ‘রাজ্য পুলিশ’ কথাটি লিখে বাসে করে আগমন করে। নিয়ন হলুদ ওয়েষ্টকোট ও উলের টুপি পরিধান করা অফিসাররা এই উদ্যানটিকে রাজ্য ভবন থেকে পৃথক করে রাখা রাজকীয় গেটগুলোর পিছনে সারি সারিভাবে দাঁড়িয়ে অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশ কাধে কাধ মিলিয়ে রাজ্য ভবনের বড় বড় সিঁড়িগুলোর উপর সামনের দিকে তাদের হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে ছিল। স্যুট ও লম্বা কোট পরিহিত চারজন রাজ্য ভবনের ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন এবং হতাশার চিৎকার সত্বেও পুলিশ একেবারে রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ছিল। তাদেরকে হয়তো কোন বাদানুবাদে জড়িত না হতে বা সাড়া না দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

প্রতিবাদকারীরা তখন বোস্টনে একটি দৃঢ় সংকল্পময়, হিমশীতল হাঁটার ভ্রমণ শুরু করে – প্রতিটি প্রধান প্রধান ব্রিজ থেকে মহাসড়কের প্রবেশপথ পর্যন্ত, আমাদের হাজার হাজার লোকের সমাবেশ অনেক দিকেই গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দেয় বেশ কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।

চালকরা তাদের ফোনে ক্ষুদেবার্তা লিখেছে, ফোনে কথা বলেছে এবং তাদের সামনে দিয়ে চলে যাওয়া জনতার ছবি ও ভিডিও তুলেছে। অনেকে তাদের সমর্থন জানতে হাত নেড়েছে বা গাড়ীর ভেপু বাজিয়েছে। কেউ কেউ এই তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যেও তাদের গাড়ীর জানালার কাঁচ নামিয়ে তাদের দস্তানা পড়া হাত বের করে হেঁটে যাওয়া প্রতিবাদকারীদের সাথে খোলা হাতে হাত মিলিয়েছে। অন্যান্যরা খুবই রাগী ভঙ্গিতে তাদের রাস্তা খালি হবার অপেক্ষায় থেকেছে।

প্রতিবাদকারীরা বোস্টনের চার্লসটাউনের রাদারফোর্ড স্ট্রিট-এ শুয়ে আছে –ফ্রেডেরিক থিস

আমরা পুলিশের স্বেচ্ছাচারীতার এই নির্মম ঘটনা যার কারণে আমাদের সমবেত হওয়া তার টুকিটাকি অভিনয় করতে করতে ও শ্লোগান দিতে দিতে চার্লসটাউন ব্রিজ পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিলাম। সারা রাত ধরে বার বার সকল রংয়ের ত্বকের হাজার হাজার হাত রাতের তীব্র বাতাসে উপরে উঠে গেছে এবং সমবেত কণ্ঠ আরও উচ্চ হয়েছে: ’হাত উপরে! গুলি করবেন না!’ বার বার বিক্ষোভকারী চিৎকার করে বলেছে ’আমি শ্বাস নিতে পারছি না!’ কার্ডবোর্ডের চিহ্নগুলো অস্কার গ্রান্ট থেকে শুরু করে রডনি কিং থেকে গিনি দেশীয় অভিবাসী  আমাডু ডায়ালো – যাকে ১৯৯৯ সালে  নিউ ইয়র্ক পুলিশ ৪১টি গুলি করে হত্যা করে যখন সে তার পকেট থেকে তার ওয়ালেট বের করতে যাচ্ছিল – পর্যন্ত সকল কালোদের স্মৃতিতে শোক পালন করছিল।

আমরাও গুরুত্বপূর্ণ। #হাতউপরেডিসি আমরা প্রস্তুত। –প্রালিন কুইন

এটি কিভাবে সম্ভব যে এতোগুলো লোক একটি প্রণালীবদ্ধ সংকটের প্রতীক হবার জন্য তাদের জীবন হারিয়েছে, যাকে সাধারণভাবে একটি সমস্যা হিসেবে আখ্যা দেয়া যাবে না কারণ এটি তার থেকে অনেক বড় কিছু, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঘটে আসছে? 

আমেরিকার বিপ্লবের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর একটির স্থান বাঙ্কার হিলের পাদদেশে আমাদের সরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা গাড়ীর লম্বা লাইনের সামনে আমরা সকলেই রাস্তায় শুয়ে পরলাম। এখানে আমরা সমবেত শ্লোগান না দিয়ে, হাততালি না দিয়ে বা আমাদের হাত ধরাধরি না করে দীর্ঘ সময় নিরবতা পালন করলাম। তারপর এক ঝাঁক পাখীর মতো প্রত্যেকেই পরের জনের ডাকে সারা দিয়ে আমরা উঠে দাঁড়ালাম এবং আবারও হাঁটা শুরু করলাম। 

Demonstrators in Boston. Sign reads: "White silence = white consent." Photo by Ellery Biddle.

এলারি রবার্টস বিডেল হলেন গ্লোবাল ভয়েস-এর এ্যাডভোকেসী সম্পাদক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালেয়ে একজন বার্কম্যান ফেলো

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .