- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বড় দিনের আগের সন্ধ্যায় নিঃসঙ্গ? এর জন্য জাপানী এক শব্দ আছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, জাপান, কৌতুক, খাদ্য, নাগরিক মাধ্যম, ব্যবসা ও অর্থনীতি, ভাষা, যুবা, শিল্প ও সংস্কৃতি
[1]

ক্রিসমাস ট্রি, মারুনোচি, টোকিও। ছবি: ফ্রান্সিওস রেজেতে/উইকিমিডিয়া কমন্স-এর। ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন ২.০ জেনেরিক-এর অধীনে এই ফাইল লাইসেন্স করা হয়েছে।

জাপানে, বড়দিনের আগের সন্ধ্যা বছরের সবচেয়ে রোমান্টিক রাত।

সাধারণত জাপানে ২৪ ডিসেম্বর-এর রাত, প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য বছরের সবচেয়ে আনন্দঘন মিলনের রাত, যে রাতে জুটিরা জোড়া বাঁধে এবং সেদিন সন্ধ্যা কিংবা ২৫ ডিসেম্বর-এ অফিসের একঘেয়ে কাজে ফিরে যাওয়ার আগে একসাথে বিশেষ এক সময় কাটায়;যদিও সাধারণত জাপানে বড়দিনের উৎসব তেমন একটা পালন করা হয় না।

তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, জাপানে কেবল জন্মহারের পতন ঘটেনি, সাথে নাগরিকদের বিয়ে [2]; অথবা এমনকি ডেটিং [3] করার হারেরও পতন ঘটেছে।

সামাজিক এই পরিবর্তন, বড়দিনের আগের সন্ধ্যাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে এই কারণে কুরিবোচি নামক এক শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।

কাজের সময় বেশ কয়েকজন জুনিয়র কর্মচারী, খুব আনন্দের সাথে তাদের কুরুবুচি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিল। সে সময় এক হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কুরুবুচি আসলে কোন প্রজাতির শব্দ? হঠাৎ করে যেন সবাই নীরব হয়ে গেল। এরপর আমি জানতে পারলাম তারা আসলে কি নিয়ে কথা বলছিল।

ক্রিসমাস এবং হোতোরি-বোতচি (সকলে মিলে এক) নামক দুটি শব্দ মিলে, কুরিবোচি নামক শব্দের উৎপত্তি, যা বড়দিনের ঠিক আগের সন্ধ্যায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় কাটানো-কে বর্ণনা করে।

২০১৩ সালের এই সংবাদে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি করা হয়: বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় আপনার পরিকল্পনা কি?

এর জবাব?

“আমি’নিঃসঙ্গ থাকব”।

নভেম্বর ২০১৪-এ, টোকিও মেট্রোপলিটন এলাকায় অনলাইন রেস্টুরেন্ট ওপেন টেবিল [5] ২০ থেকে ৩০ বছরের প্রায় ১,৮০০ ব্যক্তিকে সেবা প্রদান করে। এক জরিপ অনুসারে, জানা গেছে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬০ শতাংশ ব্যক্তি বলছে তারা দীর্ঘস্থায়ী কোন সম্পর্কে জড়িয়ে নেই [6] অথবা এমনকি তারা ডেটিং-ও করছে না।

একাকী বসে খাওয়া এবং বড়দিন উদযাপনের জন্য কিছু কিছু রেস্তোরাঁর এবং হোটল কুরিবোচি ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ খাওয়া সরবরাহ করে, বিশেষ করে যারা এই তথ্যকে পুঁজি করছে যে সমান সংখ্যক নিঃসঙ্গ ব্যক্তি হয় ঘরে বসে, নতুবা বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় বাইরে খাবার পরিকল্পনা করছে। (সাড়া প্রদানকারীরা একের অধিক কর্মকাণ্ড বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল।):

20141111open003 [7]

“কি ভাবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স্ক নাগরিকরা বড়দিন উদযাপন করবে”। ছবি সুত্র নিক্কি ওমেন।

তবে, রেস্তোরাঁয় মালিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ২০-থেকে ৩০ বছর বয়স্কদের মাঝে পরিচালিত জরিপ-এ উত্তরদাতাদের ৪৩ শতাংশ জানিয়েছে যে বড়দিনের আগের সন্ধ্যা উদযাপনে তারা ১০০ ডলারের বেশী খরচ করেন না [7]। জাপানের ২৫ বছরের বুদ্বুদ অর্থনীতির বাস্তবতায়, ঠিক এক প্রজন্ম আগে যখন সবকিছু সীমাবদ্ধ ছিল তখন বড় ধরনের কোন ডেটের রাতে যতটা ব্যয় করা হত, এ তার প্রেক্ষিতে এক দারুণ বৈপরীত্য।

২০ থেকে ৩০ বছর বয়স্ক জাপানী নাগরিকরা ক্রমশ আরো বেশী নিঃসঙ্গ জীবনে পতিত হচ্ছে:

যখন আপনি একবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন যে আপনি কোরীয় বারবিকিউ খাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তখন থেকে আপনি উপলব্ধি করবেন যে স্বাভাবিক সামাজিক জীবনে আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

লেখক এখানে リア充 [10], কিংবা “রিয়া জু,” নামের এক জাপানি পদ ব্যবহার করেছে, যার অর্থ আইআরএল [11], (ইন রিয়েল লাইফ/ বাস্তবিক জীবনে)-এর অনেকটা কাছাকাছি ।

রিয়া জু-এর প্রেক্ষাপটে নাগরিকদের সক্রিয়, প্রচুর বন্ধুর সাথে প্রাণোচ্ছল সামাজিক জীবন কাটানো হত। তার বিপরীতে, কুরিবোচি জাপানী সংস্কৃতির আরেকটি ধারার প্রতিনিধিত্ব করছে, যেখানে নাগরিকরা শুধুমাত্র কম্পিউটার মাধ্যমে একে অন্যের সাথে মেশে।

বাস্তব জগতে, জাপানি সমাজ এখনো একা হিসেবে নিঃসঙ্গ থাকার উপায় বেছে নিচ্ছে :

যখন আমি “এক কামরার এক কারোকের” জন্য তাদের বললাম, তখন তারা আমাকে এমন এক কামরা প্রদান করল, যেখানে ২৫ জন ব্যক্তির থাকার মত যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।

অন্যরা এখনো কি ভাবে শীতের রান্না প্রস্তুত করতে হবে তার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে, যা ঐতিহ্যগত ভাবে অন্যদের সাথে মিলে খেতে হয়, যেমন হটপট:

এমন কিছু আছে যা এখানকার জন্য ঠিক নয়, এখানে যে ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অতীব জঘন্য… এখানে কিছু একটার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে আমি আমার হটপট সাথে নিয়ে একজনের অপেক্ষায় আছি।

টুইটারে একটি মেমে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে, এতে জানা যাচ্ছে যে নাগরিকরা একাই বোর্ড গেম খেলার মনোভাব গ্রহণ করছে, যে খেলাটি কয়েকজন মিলে খেলা হয় :

জীবনের খেলা খেলছি, আর একাধিক খেলোয়াড়ের বদলে আমি নিজে তা খেলছি।

প্রস্তুত, বস, খেলা শুরু: মাত্র একজন খেলোয়াড় খেলছে লাইফ অফ গেমস নামক খেলাটি।

আমার মনে হয় একজন খেলোয়াড় দিয়ে আমাকে গেম অফ লাইফ খেলাটি খেলতে হবে।

তবে কারো মতে, নভেম্বর–এর সমাপ্তি এবং ডিসেম্বর–এর শুরু প্রবল এক দিন গণনার ক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়:

বিষণ্ণ মনে এই সংবাদ প্রদান করছি যে বড়দিনের আগের সন্ধ্যা যা আমরা একাই কাটাবো, তার মাত্র মাত্র ২৪ দিন বাকী। বিষণ্ণ মনে এই সংবাদ প্রদান করছি যে বড়দিনের আগের সন্ধ্যা যা আমরা একাই কাটাবো, তার মাত্র মাত্র ২৪ দিন বাকী। বিষণ্ণ মনে এই সংবাদ প্রদান করছি যে বড়দিনের আগের সন্ধ্যা যা আমরা একাই কাটাবো, তার মাত্র মাত্র ২৪ দিন বাকী। [আরো পাঁচবার এই বাক্যটি লেখা হয়েছে]।

অন্য সব কুরিবোচিরা স্নুপির কাছ থেকে আমরা সান্তনা নেই, যারা বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় তার কষ্টের কথা তুলে ধরে:

মনে হচ্ছে সে নিজেও বড়দিন একা একাই কাটাবে।