স্বাস্থ্যকর দুগ্ধ সক্রিয় কর্মীকে আদালতে তলব করল সার্বিয়া কর্তৃপক্ষ

Street art in Novi Sad, Serbia. Photo by molimonster69 on Flickr.

সার্বিয়ার নোভি সাদে একটি রাস্তা শিল্প। মালিদানব৬৯ ছবিটি ফ্লিকারে দিয়েছেন।

সার্বিয়া থেকে আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারীকে পুলিশ আদালতে হাজির হতে ডেকে পাঠিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং “বাস্তব জীবনে” তাঁর কার্যকলাপের জন্য তাকে তলব করা হয়েছে। বেলগ্রেডের মারকো জিভকোভিচ সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে এক প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিলেন। সরকার সে সময়ে দেশে উৎপন্ন ও দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা দুগ্ধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যে আফ্লাটক্সিনের গ্রহণযোগ্য মাত্রার পরিমান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

আজ সকালে পুলিশ আমাকে ফোন করে বলেছে #এমলেকোআপ এর (#দুগ্ধদোহন) কারনে আমাকে আদালতে হাজির করতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ২০ মাসেরও বেশি সময় পরে সরকার সেই আফ্লাটক্সিন নাটকেরই শেষ দৃশ্য মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে।

আফ্লাটক্সিন হচ্ছে একটি বিষাক্ত বিপাকীয় পদার্থ যা নির্দিস্ট কয়েক ধরনের ছত্রাক থেকে তৈরি হয় এবং দুধ ও অন্যান্য খাবারে পাওয়া যায়। একটি নির্দিস্ট মাত্রায় এটি খাবারের সাথে গ্রহণ করা নিরাপদ। তবে সার্বিয়ার সরকার ২০১৩ সালে দুধে আফ্লাটক্সিনের সহনীয় মাত্রার পরিমান আইনগতভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় আফ্লাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা প্রতি কিলোগ্রামে ০.০৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ০.৫০ মাইক্রোগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পূর্বে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে রাতারাতি সহনীয় মাত্রার দশগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে নাগরিক সমাজ এবং দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী উভয়েই সরকারের কাছ থেকে এই পরিবর্তনের সমন্বিত ব্যাখ্যা দাবি করে। আর এ কারনে তারা প্রতিবাদ কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেন।

A small group protests peacefully against the decision to raise permitted aflatoxin levels in milk in Belgrade in March 2013. Photo from Istinomer.

বেলগ্রেডে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে আফ্লাটক্সিনের গ্রহণযোগ্য মাত্রা বাড়ানো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি ছোট দল ২০১৩ সালের মার্চ মাসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে। ছবিঃ ইস্টিনোমার

নাগরিক সমাজ, স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপের মুখে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে সরকার তাঁর সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সার্বিয়াকে সতর্ক করে দেয় যে যদি প্রতি কিলোগ্রাম দুধে আফ্লাটক্সিনের সহনীয় মাত্রার পরিমাণ ইইউ ঘোষিত মাত্রা ০.০৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি অনুমোদন করা হয় তবে সার্বিয়ার দুগ্ধজাত পণ্য ইইউ ভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে না।

জিভকোভিচ বেলগ্রেডের একজন আইটি ডেভেলপার। তিনি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদে জড়িত ছিলেন। সার্বিয়া প্রজাতন্ত্রের সরকারি সদর দপ্তরের সামনে ২০১৩ সালের ১লা মার্চ তারিখে প্রতিবাদ জানানোর সময় অন্যান্য প্রতিবাদকারীরা ঘটনাক্রমে তাদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে তাকে বেছে নেন। জিভকোভিচ সে সময়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেনঃ

“Okupili smo se spontano na Twitteru i već danima razgovoramo o ovome što se dešava (sa mlekom), a kada smo juče na televiziji čuli odluku vlade da za 10 puta uveća dozvoljenu koncentraciju toksičnog aflatoksina, odlučili smo izrazimo protest.”

“আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে টুইটারে একত্রিত হই এবং আলোচনা করতে শুরু করি যে আজকাল (দুগ্ধ নিয়ে) এসব কি হচ্ছে! গতকাল টেলিভিশনে আমরা যখন শুনতে পেলাম, সরকার বিষাক্ত আফ্লাটক্সিনের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১০ গুন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, তখনই আমরা প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।” 

প্রতিবাদের এক থেকে দেড় বছর পরে জিভকোভিচ পুলিশের কাছ থেকে একটি অপ্রীতিকর ফোন পান। ফোনে তাকে জানান হয় যে তাকে শুধুমাত্র জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নয় বরং আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে। আরেকটি টুইটে জিভকোভিচ বলেছেন, ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা তাকে নির্দিস্ট করে বলেননি যে তাঁর বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আনা হয়েছে? তবে ব্যাপক আলোচিত সেই “আফ্লাটক্সিন বিষয়” সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে আসতে অনুরোধ জানান স্বত্বেও তিনি কোন জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারনে তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। এই টুইটার ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, টেলিফোন কলটি পাওয়ার আগে কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব দেয়ার মতো কোন অনুরোধ তাকে কখনও করা হয়নি।

অন্যান্য বেলগ্রেডবাসী এবং সমগ্র সার্বিয়া ও বলকান এলাকা জুড়ে থাকা টুইটার ব্যবহারকারীদের  কাছ থেকে জিভকোভিচ ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে পুলিশের কাছে এ সম্পর্কিত অভিযোগে কখন হাজিরা দিবেন সে সম্পর্কে তিনি তাঁর সমর্থকদের জানাবেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .