
ভিডিওটির দৃশ্যে রেজাগুলকে তার মেয়ে ফাতিমার সাথে দেখা যাচ্ছে। তিনি তালেবানের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। আফগানিস্তান ইচ্ছা নামক ব্যবহারকারী ভিডিওটি আপলোড করেছেন।
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ফারাহ প্রদেশে এ সপ্তাহের শুরুতে একটি পুলিশ চেকপোস্টে তালেবান জঙ্গিরা হামলা চালায়। এ হামলায় একজন নারী তাঁর ছেলেকে হারান। তিনি এ ঘটনায় প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত হন এবং একটি একে-৪৭ আগ্নেয়াস্ত্র নিজের হাতে তুলে নেন। দফায় দফায় মেশিন গানের গুলি চালিয়ে তিনি তার ছেলেকে হত্যাকারী তালেবান যোদ্ধাদের ধ্বংস না করে ক্ষান্ত হননি। আফগান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই নারীকে বর্তমানে “সাহসের মূর্ত প্রতীক” হিসেবে সম্বোধন করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের তোলো নিউজ ২৪ নভেম্বর রোজ সোমবার তারিখে তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে, একজন আফগান মা তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় বেশ কিছু জঙ্গিকে হত্যা এবং আরও বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে আহত করেছেন। কারন তাঁর বাড়ির অদূরেই অবস্থিত একটি পুলিশ চেকপোস্টে তালেবান জঙ্গিরা অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় তিনি তাঁর পুলিশ সদস্য ছেলেকে মারা যেতে দেখেছেন।
সবার কাছে রেজাগুল নামে পরিচিত এই নারী বলেছেনঃ
ساعت پنج صبح درگیری بالای پاسگاه امنیتی پسرم آغاز شد و هرلحظه جنگ شدت مییافت، سرانجام جنگ افزارها را برداشتم و خود را به .پاسگاه امنیتی پسرم رساندم و شلیک گلوله را بالای طالبان آغاز کردم
আমার ছেলের চেকপয়েন্টে যখন তালেবানরা হামলা চালায় তখন সময় প্রায় ভোর ৫ টা। দুই পক্ষের মাঝে গোলাগুলি আরও তীব্র হয়ে পড়লে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। সে সময় আমি একটি অস্ত্র হাতে তুলে নেই। এরপর আমি সেই চেকপয়েন্টে যাই এবং পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করি।
স্থানীয় আফগান সংবাদ সংস্থা খামা প্রেসের দেয়া তথ্যানুযায়ীঃ
বন্দুক যুদ্ধ চলাকালীন [রেজাগুলকে] তাঁর মেয়ে এবং ছেলের বউ সাহায্য করেছেন। সেই বন্দুক যুদ্ধটি প্রায় ৭ ঘন্টা ধরে চলেছে। এতে কমপক্ষে ২৫ জন তালেবান জঙ্গি নিহত হন এবং আরও পাঁচজন আহত হয়।
রেজাগুলের মেয়ে ফাতেমা বলেছেনঃ
.ما جنگ را خانوادهگی برضد طالبان آغاز کردیم، گلولهها را آماده میساختیم تا مادر و پدرم بسوی طالبان شلیک کنند
আমরা তালেবানদের বিরুদ্ধে এক প্রকার পারিবারিক যুদ্ধ শুরু করেছি। আর শত্রুর বিরুদ্ধে করা সেই যুদ্ধের সময় আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার বাবা [আব্দুল সাত্তার, তিনিও একজন পুলিশ সদস্য] এবং মায়ের বন্দুকে বুলেট ভরে দিয়েছি।
রেজাগুল নিজে গুলি চালিয়ে কতজন তালেবানকে হত্যা করেছেন সেই সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। আরএফইএর/এলের আফগান সার্ভিস রেজাগুলের উদ্ধৃতি দিয়েই এই সংখ্যা দশ বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। আফগান বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তাঁর কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ডেইলী মেইল পত্রিকাটি এই গোলাগুলিতে নিহত সর্বমোট জঙ্গির সংখ্যার বরাত দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ফারাহ’র পুলিশ প্রধান আব্দুল রাজ্জাক ইয়াকুবি চেকপয়েন্ট যুদ্ধে ২৫ জন জঙ্গির মৃত্যু খবরের সত্যতা যাচাই করেছেন এবং বলেছেনঃ
.شجاعت و پایمردی این خانواده مایهی افتخار ماست و این یک حماسهی بیاد ماندنی برای پولیس و باشندهگان ولایت فراه میباشد
এই পরিবারের সাহসিকতায় আমরা গর্ববোধ করছি। এটি সাহসিকতার এমনই এক গল্প যা পুলিশ বাহিনী এবং ফারাহ প্রদেশের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
এ সংবাদটি প্রচারিত হওয়ার পর থেকে আফগান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রেজাগুলের জন্য প্রশংসার বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন মুখপাত্র সাদিক সিদ্দিকি টুইট করেছেনঃ
مبارزه زنان در برابر طالبان تروريست در ولايت فرآه نماد از موج بزرگ انقلاب و خيزش مردمي عليه اين گروه است. اين زنان تاريخ نوشتند. بسيج شويم.
— Sediq Sediqqi (@moispokesman) November 24, 2014
তালেবান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই নারীর চালিত সশস্ত্র প্রচারাভিযানটি হচ্ছে একটি ব্যাপক বিপ্লব এবং জঙ্গি দলটির বিরুদ্ধে গণজাগরণের এক প্রতীক।
লিনা রজবিহ হায়দারি ভয়েস অব আমেরিকার আফগান সার্ভিসের একজন সংবাদ উপস্থাপক। তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেনঃ
اگر دختران کوبانی از سرزمین خود دفاع میکنند، امروز در سرزمین من نیز، ریزه گل ها، غیرت پامال شده ما را دوباره به ما پس میدهند.
কুর্দিশ নারীরা যদি তাদের জাতিকে [আইএসআইএসের হাত থেকে] রক্ষা করতে পারেন, তবে আমিও আজ গর্বভরে বলতে পারি আমার মাতৃভূমিতেও রেজাগুলের মত নারী আছেন। অনেক বছরে হারিয়ে যাওয়া আমাদের অতীত সম্মান আজ তিনি আবার ফিরিয়ে এনেছেন।
রেজাগুলকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করার জন্য মরিয়ম আমান আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির কাছে আবেদন জানিয়েছেনঃ
@ashrafghani Dont you think Rezagul deserves G.A medal for her courage & her loss probably more than all those useless politicians #RezaGul
— Mariam Aman (@MariamAmanS) November 25, 2014
@আশরাফগনি আপনি কি মনে করেন না যে রেজাগুল তাঁর সাহসিকতা এবং ত্যাগের জন্য একটি জি.এ. পদক পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কেননা #রেজাগুলের এই ত্যাগ যেকোন অপদার্থ রাজনীতিবিদের ত্যাগের চেয়ে অনেক মহৎ।
এমনকি একটি টুইটে কৌতুক করে বলা হয়েছে যে রেজাগুলকে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ দেয়া উচিৎ।
যেকোন ধরনের লৈঙ্গিক সম্পর্ক নিয়ে আফনিস্তান বেশ রাজনীতি সচেতন। তবে তালেবানদের উপর রেজাগুলের চালানো হামলার ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার পর রক্ষণশীল এবং প্রগতিশীল উভয় দলের কাছ থেকে বেশ সম্মান কুড়িয়েছে। কেননা রক্ষণশীলরা নারীদের প্রধানত পারিবারিক মানসম্মানের ধারক এবং বাহক বলে মনে করে থাকেন। অপরদিকে লিঙ্গ সমতার পরামর্শকেরা এ ঘটনাটিকে নারীরা পুরুষের চেয়ে দূর্বল এই প্রচলিত ধারণার একটি জোড়ালো খন্ডন বলে মনে করছেন।
একটি টুইটে যেমনটি সন্দেহ করা হয়েছেঃ
The video of #Rezagul#Afghanmother who killed 25 Taliban fighters is going viral. Refered to as #hero. A mothers patience put in to test.
— Zarghuna Kargar (@DearZari) November 24, 2014
২৫ জন তালেবান যোদ্ধাকে হত্যাকারী #আফগানমা #রেজাগুলের ভিডিওটি ইন্টারনেটে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে একজন #বীর হিসেবে সম্বোধন করা হচ্ছে। এ যেন এক মায়ের ধৈর্য্য পরীক্ষা।