- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মুবারক যদি নির্দোষ হয়ে থাকে তাহলে মিশর বিপ্লবে নিহত ৯০০ বিক্ষোভকারীকে হত্যার নির্দেশ প্রদান করেছে কে?

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., মিশর, আইন, তাজা খবর, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ
Protestors trying to get back to Tahrir Square after Mubarak is acquitted. Photograph by Omar Elhadi (Twitter) [1]

মুবারক নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা তাহরির স্কোয়ারে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ছবি ওমার এলহাদির (টুইটার থেকে নেওয়া)।

মুবারকের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ২৫ জানুয়ারি বিপ্লবে নিহত বিক্ষোভকারীদের খুনের দায় থেকে এখন প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতিকে আদালত অব্যহতি [2] দিলে মিশরীয়রা আবার রাস্তায় নেমে আসে। মুবারক এবং তার অন্যতম সহযোগী, যার মধ্যে রয়েছে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হাবিব এলাদলি এবং তার দুই সন্তান, তাদের বিরুদ্ধে ইজরায়েল-এর সাথে করা এক তেল চুক্তি সম্পর্কিত দূর্নীতির অভিযোগও খারিজ করেও দেওয়া হয়েছে।

এক হিসেবে জানা গেছে মুবারকের শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ২০১১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে চূড়ান্ত ভাবে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পূর্ব পর্যন্ত যে ১৮ দিন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন, সে সময় তার বাহিনীর হাতে ৯০০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয় এবং প্রায় হাজারের বেশী নাগরিক গ্রেফতার হয়। এই ঘটনার পর ৮৬ বছর বয়স্ক মুবারক বিভিন্ন অভিযোগে সে সাড়ে তিন বছর বন্দী অবস্থায় রয়েছেন, তবে এর মধ্যে বেশীর সময় তাকে অতি যত্নে হাসপাতালে রাখা হয়।

মাদা মাসর [3] প্রদত্ত সংবাদ অনুসারে, আজকের মামলার বিচারক “সরকারি তদন্তকারীর পদ্ধতিগত ভুলের বিষয়টি উদ্ধৃত” করে মুবারকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খারিজ করে দেয়।

সে এর সাথে যোগ করেছে:

মূলত এই মামলায় শুরুতে অভিযুক্ত হিসেবে মুবারকের নাম যুক্ত করা হয়নি এবং তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই মামলা দায়ের করার দুই মাস পর তার নাম এতে যুক্ত করে। বিচারকের মতে এই বিষয়টি দেখিয়ে দেয় যে তদন্ত কর্মকর্তা পরোক্ষ ভাবে প্রকাশ করেছে যে মুবারকের বিরুদ্ধে “আনীত অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই”।

মুবারকের এই শুনানীর ঘটনায় নাটকীয়তা ছিল, কিন্তু মনে হচ্ছে আজকের রায় এক চূড়ান্ত আঘাত যা মিশরীয়দের গ্রহণ করতে হচ্ছে। এক বিতর্কিত বিক্ষোভ বিরোধী আইনের দ্বারা অজস্র প্রতিবাদকারীকে জেলে পাঠানো হয়েছে, তার মাধ্যমে বিক্ষোভ স্তব্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মিশরীয়রা এই রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশে রাস্তায় নেমে আসে।

তাহরির স্কোয়ার, যা মিশর বিপ্লবের কেন্দ্রভূমি, সেখানে উপস্থিতি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, এখানে কাঁটাতারের দেওয়াল তৈরী করা হয়েছে এবং সশস্ত্র রক্ষীরা যেখানে নাগরিকদের পরিচয়পত্র যাচাই করছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর জন্য যখন আরো বিক্ষোভকারী কাছাকাছি এলাকায় সমবেত হওয়া শুরু করে তখন সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

পাঁচ জন সাহসী মানুষ এই বিক্ষোভ শুরু করে, আর এখন সেই সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে এবং সামনে আরো বাড়তে থাকবে।

কয়েক মিনিট আগে তাহরির স্কোয়ারের চিত্র। এখানে এখনো নাগরিকেরা এই রায়ের বিরুদ্ধে না বলছে এবং এর সমাপ্তি ঘটেছে, আমরা এমনটা আর শুনব না।

আরো অনেক নাগরিক এই বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে এবং এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

তাহরির স্কোয়ারে এক কাঁটাতারের বেড়ার সমানে মুবারকের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভ।

অংশগ্রহণকারী নাগরিকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এবং পরিস্থিতি যে কোন সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

অল্প সময়ের মধ্যে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার অভিযান শুরু হয়। ওমর এলহাদি, টুইটারে যার ১৩৬০০০ জন অনুসারী, তিনি আজকের এই ঘটনার এক দুর্দশার চিত্র তুলে ধরছেন:

এটা হচ্ছে ইতিহাস, যে তার পাঠ নিচ্ছে। মুবারক নিষ্পাপ, নাগরিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে, আর সিসি কাঁদুনে গ্যাস এবং বন্দুকের গুলি দিয়ে তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে ও গ্রেফতার করছে।

টুইটারে, সারা দিন ধরে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন চলতে থাকে। তার প্রথম টিভি সাক্ষাৎকারে, মুবারক দাবী করেন [23] তিনি কোন অন্যায় কাজ করেননি। জোনাথন মোরেমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন:

আপনি স্মরণ করতে পারছেন না যে আপনি জানুয়ারি ২৫-এর বিপ্লবে কোন অন্যায় করেছেন, তাহলে আসুন আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করি। (নিহতদের ছবি। মোসা'আব এলসাহমের টুইট একাউন্ট থেকে নেওয়া)।

আমরো আলি ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে তার মনোভাব প্রকাশ করেছেন:

মিশরের গণজাগরণের এই ১৮ দিনে পুলিশের বুলেট এবং গাড়ির সামনে পড়ে ৮৪০ জন নাগরিক নিজেরাই নিজেদের জীবনের ইতি টেনেছে।

আহমেদ খলিল বিস্মিত:

নাগরিকরা এই শাসককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে চেয়েছে। তারা কি তা করতে পেরেছে, নাকি সেই শাসক এখনো ক্ষমতায়?

এবং মোহাম্মদ ইমাম নিশ্চিত করেছে:

নাগরিকরা যাতে বুঝতে পারে যে আগের শাসনব্যবস্থা টিকে আছে তার জন্য মুবারককে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে ।

লিবিয়ার এক ব্লগার হিন্দ, টুইটারে যার ৩১০০০ জন অনুসারী, সে বলছে এই ধরনের ঘটনার ইতি টানার জন্য মিশরের দরকার… একটা বিপ্লব।

সীমাহীন দূর্নীতি, সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে অভিযান, বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব, বাক স্বাধীনতার অভাব, এসব থেকে অব্যহতি চাই –মিশরের আসলে কি দরকার? একটা বিপ্লব।


এই বিষয়ে আরো পাঠ করতে চাইলে পড়ুন:

প্রশ্ন ও উত্তর:মুবারকের মামলার রায়–আসলে কি ঘটেছিল? [2]

মুবারকের বিচারের সময়সূচী