- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আড়ংয়ের বিজ্ঞাপন বিতর্কে উঠে এলো একটি ধর্মগোষ্ঠীর প্রান্তিক হয়ে উঠার কথা

বিষয়বস্তু: বাংলাদেশ, অ্যাক্টিভিজম, ইতিহাস, জাতি-বর্ণ, ধর্ম, নাগরিক মাধ্যম, প্রচারণা, শিল্প ও সংস্কৃতি
আড়ংয়ের ফেসবুক পেজ থেকে স্ক্রিনশট নেয়া।

আড়ংয়ের ফেসবুক পেজ থেকে স্ক্রিনশট নেয়া।

বাংলাদেশের অন্যতম লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ং-এর সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনার কারণে আড়ং কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার [1] করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, আড়ং সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক-এর একটি উদ্যোগ।

দূর্গাপুজা এবং ঈদ বাংলাদেশের অন্যতম দুই প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবকে সামনে রেখে আড়ং তাদের বিজ্ঞাপনী প্রচারণা কৌশল তৈরি করেছিল। সেখানে থিম হিসেবে বেছে নিয়েছিল বর্ষা এবং বিসর্জনকে। আর তাই বিজ্ঞাপনের ছবিতে মডেলদের হাঁটুপানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল।

বিজ্ঞাপনটি এমন এক সময়ে প্রচার শুরু হয়, যখন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ বন্যা দুর্গত হয়ে পড়েছেন। বন্যার সময়ে এমন একটি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। যদিও আড়ং জানিয়েছে [2], তারা বিজ্ঞাপনটির পরিকল্পনা বন্যা শুরুর আগেই করেছিলেন।

গোলাম ইস্তেজা চৌধুরী লিখেছেন [3]:

এটার নাম ফ্যাশন? হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা।
আহ আড়ং বাহ আড়ং আর কতকিছু শিখাবে!!!

ফেসবুক ব্যবহারকারী শোভন দাস [4]বিষয়টি মস্করা করতে ছাড়েননি:

নিউইয়র্কে যখন জলবায়ু সম্মেলন হয় আমাদের ‪#‎আড়ং‬ তখন দেখিয়ে দেয় “টেনশন নিয়েন না ভাইলোগ, পুরা পৃথিবীটা তলিয়ে গেলেও আমরা বিকল্প ফ্যাশন বের করব”

দীপ্তি আনজুম [5] একে চাঞ্চল্য তৈরির কৌশল বলে উল্লেখ করেছেন:

হাটু সমান পানির মধ্যে আড়ং এর ফ্যাশন ফটোসেশন এর কারণ আর কিছুই না, শুধু চাঞ্চল্য তৈরী করা! অন্তত আমার তো তাই ই মনে হয়! ‪#‎Aarong‬

ভাস্কর আবেদিন একসময় বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেছেন। এখন বিজ্ঞাপন এবং ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানান। তিনি বিতর্কের পিছনে সাংস্কৃতিক অজ্ঞতা [6] খুঁজে পেয়েছেন:

তবে এই ফটোশুট দেখে আমার কেনো জানি শারদোৎসবের কথা মনে পড়ে যায়, যেখানে দূর্গা মা জলে ভেসে বিদায় নেবে। এই মধ্যবিত্ত মুসলমান দেশে কালচারাল কানেকশনটা বেশি দূরবর্তী হয়ে গেছে বলেই মনে হলো।

মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্রমশ প্রান্তিক হওয়া এবং তাদের সংস্কৃতি অদ্ভুত হয়ে উঠার দিকে ইঙ্গিত করে ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন [7]:

আমার এক বন্ধু আড়ংয়ের বিপননে ছিল একসময়। সে খুব অবাক হয়েছে যে পূজাকে টার্গেট করে করা ফটোশূট নিয়ে কেন এত আলোচনা হচ্ছে। তার ভাষ্যে, মন্দিরের মার্বেলের ফিলিগ্রি করা জানালা, সাথে মহালয়ার পানির সংশ্লিষ্টতা, এবং সর্বোপরি মাথায় সিঁদুর এসব তো পরিস্কার পুজাঁর কথা মনে করিয়ে দেয়! এটা না বুঝার কী হলো।

আমার বন্ধুটি দীর্ঘদিন কানাডা প্রবাসী। সে জানেই না, এই দেশে হিন্দুদের শতকরা হার এখন একক অংকে নেমে গেছে। এবারের জলমগ্ন মহালয়ার কথা তাই অধিকাংশেরই জানার সুযোগ নেই। ক্রমাগত কমে আসা ধর্মগোষ্ঠির সংস্কৃতির খোঁজ না রাখা মানুষের কাছে তাই এটি বড়ই অদ্ভুত ঠেকছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। অপু রঞ্জন কর্মকার আমার ব্লগের পোস্টে [8] লিখেছেন, ১৯৭১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৩.৫০ ভাগ, ১৯৮১ সালে ১২.১৩ ভাগ, ১৯৯১ সালে ১১.৬২ ভাগ, ২০০১ সালে প্রায় সাড়ে ৯ ভাগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরের ৩০ বছরে এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪ ভাগ কমেছে।

তবে এতো বিতর্কের মাঝে আসল লাভবান হয়েছে আড়ং, এমনটাই মনে করেন জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করবী রাকসান্দ [9]:

I guess ‪#‎Aarong‬ was successful in spreading the word of their new collection. The amount of people talking about it and the pictures getting shared will definitely increase the sales. After all, any PR is a good PR.

আমি মনে করি, আড়ং বেশ সফলতার সাথেই তাদের নতুন কালেকশনের খবর সবার কাছে পৌছে দিতে পেরেছে। যে পরিমাণ মানুষ তাদের বিজ্ঞাপন নিয়ে কথা বলছে, ছবি শেয়ার করছে, তাতে অবশ্যই তাদের বিক্রি বেড়ে যাবে। সর্বোপরি, যেকোনো ধরনের প্রচারণাই ভালো প্রচারণা।