
#তাজা সংবাদ- ইরবিলে গভর্নরের দপ্তরের সামনে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে-তাহির আবদুল্লাহ। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে” টুইট করেছে @রুদোয়াইংলিশ।
উত্তর ইরাকের স্বায়ত্ত্বশাসিত এলাকা দক্ষিণ কুর্দিস্তানের রাজধানী ইরবিল-এ বুধবার এক আত্মঘাতি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছে, এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণলায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গর্ভনর ভবনের সামনে এই হামলা চালানো হয়, যেখানে প্রবেশের আগে গাড়িগুলোয় তল্লাশী চালানো হচ্ছিল।
তুলনামূলক ভাবে দক্ষিণ কুর্দিস্তান শান্ত এলাকা, বিশেষ করে যদি প্রতিবেশী বাগদাদের সাথে এর তুলনা করা হয়, বাগদাদ এমন এক শহর যা প্রতিদিন আত্মঘাতি বোমা হামলার শিকার হয়, বিশেষ করে এই শহরের শিয়া অধ্যুষিত এলাকা। ইরবিলের এই হামলা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী কুর্দিদের মাঝে এই অঞ্চলে আগত উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে এক উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দেয়।
এক হিসেবে দেখা গেছে যে বর্তমানে কুর্দিস্তান অঞ্চলে ১৪ প্রায় লক্ষ শরণার্থী এবং আভ্যন্তরীণ ভাবে উদ্বাস্তু নাগরিক বাস করছে। এই অঞ্চল উদ্বাস্তু গ্রহণে প্রস্তুত এবং এখানে আরব খ্রিস্টানদের বাস, যাদের মত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য এটি নিরাপদ এক স্বর্গীয় স্থান।
after #Erbil‘s suicide attack,more local people question #KRG‘s policy on opening the door for #Arab IDPs–tension & distrust high @BBCOS
— Osamah Golpy (@OsamaGolpy) November 19, 2014
ইরবিলে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর আরো অনেক স্থানীয় বাসিন্দা কেআরজি-এর আভ্যন্তরীণ আরব উদ্বাস্তু নাগরিকদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়ার নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে- উত্তেজনা এবং প্রচণ্ড সন্দেহ তৈরী হয়েছে।
শরণার্থীদের প্রতি কুর্দিস্তানের অতিথিপরায়ণ মনোভাব সত্বেও, অনেকে কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকারের (কেআরজি) শরণার্থী নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্থানীয় কুর্দিরা এই অঞ্চলে শরণার্থীদের আগমন নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে এই যুক্তিতে যে সম্প্রতি ঘোষিত আল কায়েদার এক অঙ্গ সংগঠন কুখ্যাত এবং নির্মম হিসেবে পরিচিত আইএসআইএস-এর জঙ্গিরা শরণার্থীর ছদ্মবেশে এখানে প্রবেশ করতে পারে- যারা গণহারে ইরাকি, সিরীয় সেনা, ত্রাণকর্মী, সাংবাদিক হত্যা করেছে এবং অপহরণ, ধর্ষণ ও নারীদের জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করার জন্য দায়ী।
এই বোমা হামলার ঘটনার পর কুর্দি রাজনীতিবিদ, নেতা এবং একটিভিস্টরা শরণার্থী এবং আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের থেকে মনোযোগ সরিয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে আইএসআইএস এর হুমকি এবং কুর্দি নিরাপত্তা বাহিনীর আত্মত্যাগের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি কুর্দিস্তানের রাষ্ট্রপতি মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, ডালোওয়ার আলা’ আলদিন দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ক্ষেত্রে ধারাবহিক ব্যর্থতা এবং আইএসআইএস জঙ্গিদের ছড়িয়ে পড়া থামানোর ব্যর্থতার দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে আরব নেতাদের পাশাপাশি কুর্দি নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার নিয়ে চলতে থাকা অনলাইন আলোচনায় যোগ দিয়েছেন।
Terrorists kill innocents without mercy &die without hesitation.No one is immune.To defeat them leaders must win public support &stay united
— Dlawer Ala'Aldeen (@Dlawer) November 19, 2014
কোন ধরনের দয়া প্রদর্শন ছাড়াই সন্ত্রাসীরা নিষ্পাপ নাগরিকদের খুন করছে এবং কোন দ্বিধা ছাড়াই তারা মৃত্যুকে গ্রহণ করছে। কেউ সুরক্ষিত নয়। তাদের পরাজিত করতে হলে নেতাদের অবশ্যই জনতার সমর্থন লাভ করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত স্বায়ত্ত্বশাসিত কুর্দিস্তান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি বায়াম সামি রাহমান, যার পিতা ২০০৪ সালে সংঘঠিত এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন, তিনি উক্ত এলাকার ক্রমশ বাড়তে থাকা আতিথিয়তা এবং বহু ধর্মে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিষয়টি উল্লেখ করে ইরবিল বোমা বিস্ফোরণের বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
Erbil, capital of Kurdistan, city of peaceful coexistence among Christians and Muslims, will continue to live in peace, stand against terror
— Bayan Sami Rahman (@BayanRahman) November 19, 2014
ইরবিল, কুর্দিস্তানের রাজধানী, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক শহর, সেখানে আগামীতেও শান্তি বজায় থাকবে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করুন।
হামলার এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রধান সব সংবাদপত্রের সংবাদের নীচে অনেকে এই অঞ্চল থেকে আরবদের বের করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, এদিকে অন্যরা সমালোচনামূলক ভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদের ভাষায় এর প্রতি সাড়া প্রদান করেছেন, সঙ্কীর্ণ মনা, বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য আরবদের অভিযুক্ত করেছে।
রুদয়া নিউজ এজেন্সির ফেসবুকের পাতায় নিরজ দোস্কি মন্তব্য করেছে “ কুর্দিস্তানে কোন আরব নয়”। কাসো সত্তাস লিখেছে “যখন আপনি কোন আরবকে আমাদের এই দেশে প্রবেশ করতে দেবেন, তখন এই অবস্থা হবে”।
সবচেয়ে সঠিক প্রতিক্রিয়াটি এসেছে আওজি আজিজের কাছ থেকে যিনি বলছেন “ এই ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়া, কোনদিন এর উত্তর হতে পারে না। আমি এক কুর্দি নাগরিক এবং অন্য অনেক হাজার হাজার কুর্দি নাগরিকদের মত আমাকেও একসময় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল, কারণ তখন সাদ্দামের শাসন চলছিল। কিন্তু একটি বিষয় আমি শিক্ষা লাভ করেছি[…] কারো গায়ের রঙ কিংবা সে কোন দেশ থেকে এসেছে তা দিয়ে কখনোই কোন ব্যক্তিকে বিচার করা উচিত নয়[…]। যেমন লোকজন বলছে আরবদের সকলকে লাথি মেরে বের করে দাও। আপনি কি উপলব্ধ করতে পারছেন না, এই কথা উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে আমরাও তাদের মত বাজে একজনে পরিণত হচ্ছি।
আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রতিক্রিয়ার সমস্যা হচ্ছে তা বিদেশী, আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নাগরিক এবং শরণার্থীদের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এটি এই অঞ্চলে, বিশেষ করে আরব বিরোধী আবেগ–এর ঘটনা, যাদের প্রতি অন্যদের ধারণা, আইএসআইএস-এর জঙ্গী হামলার মুখেও তারা তাদের নেতাদের মত হাতপা গুটিয়ে বসে রয়েছে।
অন্যদিকে আইএসআইএস এখন কুর্দিস্তান অঞ্চলের জন্য সত্যিকারের এক হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে, এবং তাদের যথাযথ ভাবে তাদের মোকাবেলা করা উচিত। বর্ণবাদ এবং শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া কোনভাবে যৌক্তিক নয়, কিন্তু শরণার্থীর বেশে এই অঞ্চলে আইএসআইএস জঙ্গিরা যাতে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার কোন কৌশল সেখানে স্থাপন করা সত্যই গুরুত্বপূর্ণ।
Unfortunate bomb in Erbil today which will impact how locals view non Kurds in Kurdistan.
— Yerevan Saeed (@YerevanSaeed) November 19, 2014
আজ ইবরিলে দূর্ভাগ্যজনক এক বোমা বিস্ফোরণ ঘটল যা কুর্দি নয় এমন ব্যক্তিদের স্থানীয়রা কি চোখে দেখবে তার উপর এক প্রভাব তৈরী করবে।
এদিকে কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের মন্ত্রী পরিষদ এক বিবৃতি জারি করেছে যেখানে নাগরিকদের আহ্বান জানানো হচ্ছে “তারা যে উচ্চ স্তরের সতকর্তা প্রদর্শন করছে তাতে অনঢ় থাকে এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে”।