তারা ভোট দিয়েছেন তাই আপনাকে আর দিতে হবে নাঃ দাপ্তরিকভাবে বৃদ্ধি পেল লেবাননের সংসদের মেয়াদ

On the Streets in Lebanon, September 16, 2013, photo by Georgie Pauwels. CC 2.0.

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে লেবাননের রাস্তায়। ছবিঃ জর্জিয়া পাওয়েল। সিসি ২.০।

লেবানিজ সংসদ সদস্যরা সম্প্রতি আবারও নিজের মেয়াদ বাড়াতে ভোট দিয়েছেন। এবার রাজনীতিবিদেরা তাদের আগের মেয়াদের সাথে দাপ্তরিকভাবে আরও আড়াই বছর যোগ করেছেন। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত নতুন আরেকটি সংসদ নির্বাচন স্থগিত করা হল। অর্থাৎ ভোটারদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক সমর্থনকে তারা দ্বিগুণ করে নিয়েছেন। কেবলমাত্র দুইজন সংসদ সদস্য এই মেয়াদ বৃদ্ধি প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন। আর এ প্রস্তাব পাশ হওয়ার সময় আরও ৩১ জন সংসদ সদস্য একসাথে সংসদ অধিবেশন বর্জন করেন। বাকি ৯৫ জন সংসদ সদস্য এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাই তাদেরকে কেউ কেউ অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।  

পার্লামেন্টের নেয়া এই পদক্ষেপটি লেবাননের জন্য একটি মারাত্মক বিপদজনক এমনকি বিপত্তির কারন হতে পারে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের ওয়েবসাইটে যেমনটি ব্যাখ্যা করেছে, নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘনঃ

২০০৯ সালে আইনসভাটি কার্যভার গ্রহণ করার পর থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন স্থগিত করার উদ্দেশ্যে প্রস্তাব আনা হয়। এই মেয়াদ সম্প্রসারণ বিলটি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার (আইসিসিপিআর) সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারপত্রের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। লেবানন আন্তর্জাতিক এই অঙ্গীকারপত্রটি ১৯৭২ সালে অনুমোদন করে। ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের ভোট প্রদানের অধিকার এবং সুযোগ থাকতে হবে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, স্বাভাবিক মেয়াদী নির্বাচনে প্রত্যেক নাগরিককে নির্বাচিত হওয়ার অধিকার দিতে হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকা বিষয়ক সহকারি পরিচালক নাদিম হুরি বলেছেন, “নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুবিধাজনক সময় কখনই থাকে না, বিশেষকরে লেবাননে। আর তাই ২০০৫ এবং ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচন সহ অতীতের প্রতিটি নির্বাচনই বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে”। তিনি আরও বলেছেন, “একটি নতুন নির্বাচন আইন প্রণয়ন করতে অথবা একজন নতুন প্রেসিডেন্ট মনোনীত করতে রাজনীতিবিদেরা একটি সমঝোতায় পৌছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার অর্থ এই নয় যে তারা লেবানিজ নাগরিকদের ভোট প্রদানের অধিকার স্থগিত করার ন্যায্য কারন পেয়েছেন”। 

লেবাননে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি প্রধান এ্যাঞ্জেলিনা এইকরস্ট টুইট করেছেনঃ

গত মেয়াদে সংসদীয় মেয়াদ বৃদ্ধি এড়াতে ভিন্ন আর কি পদক্ষেপ নেয়া যেত তা জিজ্ঞাসা করছি। এটি লেবাননের সাংবিধানিক ইতিহাসে অত্যন্ত দুঃখজনক একটি দিন।

সাংবাদিক নাদিন মাজলুমপার্লামেন্টে করনীয় ৮টি কাজ” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, “ভোট দেয়াঃ এটি আমাদের কাছে শুধুই এক কালের একটি নাগরিক অধিকারের স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে”। “সংসদকে কীভাবে আমরা আরও বেশি কার্যকর করে তুলতে পারি, কিভাবে এটি সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে আছে” এসব বিষয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। সংসদ সদস্য, যারা পদত্যাগ করতে নিজেদের মধ্যে কোন কারন খুঁজে পায়নি, তাদের জন্য “অভিনয় কর্মশালার” মত কিছু পরামর্শ এ তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া লেবাননের সাধারণ নির্বাচনের মত “বিলুপ্ত” রাজনৈতিক দৃশ্য সম্পর্কে অধ্যয়নের জন্য “জীবাশ্মবিজ্ঞানের” মতো পরামর্শও দেয়া হয়েছে। 

লেবাননের অনেক সাধারণ নাগরিক সংসদের ভোটাভুটি নিয়ে ক্ষুব্ধ এবং উত্তেজনাকর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এমনকি বৈরুতে একদল ক্ষুব্ধ জনগণ সংসদ ভবনে যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা আইনপ্রনেতাদের দিকে টমেটো ছুঁড়ে মেরেছেন এবং “সম্প্রসারণ নয়!” লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন। অনেকেই সংসদ সদস্যদের লক্ষ্য করে “চোর” বলেও চিৎকার করেছেন।

বিবিসির বৈরুত সংবাদদাতা কারাইন টোরবে সড়ক অবরোধের চেষ্টায় রত বিক্ষোভকারীদের একটি ছবি টুইট করেছেন। রাজনীতিবিদরা সে সময় সংসদে যাচ্ছিলেন।  

লেবাননে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর ভোট দেয়া থেকে সংসদ সদস্যদের রুখতে প্রতিবাদকারীরা সড়ক অবরোধ করছেন।  

এমনকি ভদকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, স্টলিচনায়া লেবাননের স্ব-প্রণোদিত হয়ে চিরস্থায়ী হওয়া সংসদ সদস্যদের বরাত দিয়ে নিজেদের পণ্যের প্রচারণার জন্য ফেসবুকে লিখেছে যে এমনকি “অপ্রিতিকর কোন কিছু চিরস্থায়ী হয় না”ঃ

"Hangovers don't last this long," jokes a local Lebanese vodka maker

“অপ্রীতিকর কোন কিছুই চিরস্থায়ী হয় না” বলে কৌতুক করেছেন স্থানীয় এক লেবানিজ ভোদকা প্রস্তুরকারক। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .