
থাইল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা (বামে), সাথে তার ভ্রাতা বিতাড়িত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা (মাঝখানে)। ছবি ইংলাক-এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া।
বর্তমান সময়ে ইংলাক এবং থাকসিনের সংবাদ এড়িয়ে যাওয়া সত্যই খুব কঠিন ব্যাপার। এই দুই (সিংলিং) ভাইবোন উভয়ে ছিলেন থাইল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, যে দেশটিতে এ বছরের শুরুতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক নেতারা ক্ষমতা দখল করে নেয়। সিনাওয়াত্রা ভ্রাতা ভগ্নি সম্প্রতি জাপানে একত্রিত হয় এবং চীনের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে একসাথে সেদেশে গমন করে। যেখানে প্রাক্তন এই দুই নেতা গমন করে, মনে হয় সেখানে সাংবাদিকরা তাদের অনুসরণ করে, তারা পাপারাজ্জিদের মত এই দুই নেতার ভ্রমণসূচি তালিকাবদ্ধ করে।
তবে এতে থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী আমোদিত নয়। যে অভ্যুত্থানের কারণে এ বছর ইংলাক পদত্যাগ করেন, সেই অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল প্রায়ুথ চান–ওচা প্রচার মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা রাষ্ট্রের প্রাক্তন এই নেতাদের গতিবিধি নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ না করে।
সংবাদপত্র এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের। কিন্তু যদি এই সকল স্বাধীনতা অন্য নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে, তাহলে তা যথাযথ নয়। কাজে দয়া করে আমাকে আইন,ক্ষমতা বা শক্তি প্রদর্শনে বাধ্য করবেন না। অতীতে যে সব সমস্যা তৈরী হয়েছে আমি সে সব নিয়ে আলোচনায় যুক্ত হতে এবং এই সমস্ত সমস্যার জন্য সমাধান বের করতে আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।
সামরিক বাহিনী বলছে দেশের উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক দলাদলির প্রেক্ষাপটে তাদের শত্রুতা নিরসনে ইতি টানার জন্য গত মে মাসে তারা ক্ষমতা দখল করে। বিদেশে বাস করা সত্ত্বেও থাই রাজনীতিতে থাকসিন এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। একজন ধনী ব্যবসায়ী এবং সফল রাজনীতিবিদ, থাকসিন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এরপর এক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি এক স্বেচ্ছা নির্বাচনে যান, তার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ এড়ানোর জন্য। তবে ঘটনা যাই হোক, থাকসিনের রাজনৈতিক দল ক্রমাগত নির্বাচনে জয় লাভ করে আসছে- এমনকি থাকসিনের দল তার ছোট বোনকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নির্বাচিত করতে পর্যন্ত সক্ষম হয়।
সাংবাদিকের প্রতি প্রায়ুথ-এর “অনুরোধ” কিছুটা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, বিশেষ করে প্রচার মাধ্যমের অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এই আবেদন সংবাদপত্রের কণ্ঠস্বর রোধ করার এক আদেশ।
এসএটিভির সুরাভিচ ভিরাওয়ান বলছেন প্রায়ুথের প্রচার মাধ্যমকে ভয় পাওয়া উচিত নয়, সেক্ষেত্রে ভিরাওয়ানের যুক্তি হচ্ছে সংবাদপত্রকে সংবাদ প্রকাশে মুক্ত করে দেওয়া উচিত। একজন চিন্তাবিদ, সিয়াম ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রকল্প ব্যবস্থাপক পিচাতে ইংকিয়াত্তিকুন প্রশ্ন করছেন কেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী “সাংবাদিকদের সাথে ঝগড়া করার” সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, দেশটির স্থানীয় প্রচার মাধ্যমের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে প্রায়ুথ তাদের প্রতি অখুশী।
সাউথইস্ট এশিয়ান প্রেস আলায়েন্স-এর নির্বাহী পরিচালক টুইটারে লিখেছেন:
RT @forestmat Avoid reporting on Thaksin, PM tells media – The Nation http://t.co/u5HgWe3Afs more ‘guidelines’ for the press #Thailand
— Gayathry V (@gayathry) November 3, 2014
প্রধানমন্ত্রী প্রচার মাধ্যমকে বলছে, থাকসিন সম্বন্ধে সংবাদ প্রদান করা বন্ধ কর-দি নেশান। থাইল্যান্ডের সংবাদপত্রের জন্য আরো কিছু নির্দেশনা।
টুইটার ব্যবহারকারী @ আইআইডুডস ব্যঙ্গাত্মকভাবে সাংবাদিকদের প্রায়ুথের অনুরোধ প্রত্যাখান করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং তার বদলে থাকসিনের মুখোশ পরার আহ্বান জানাচ্ছেন:
อยากได้หน้ากากทักษิณ เอาไว้ใส่กวนตีนท่านผู้นำ pic.twitter.com/LjYUrl1icU

— นป.นักดมกาวในตำนาน (@iiDudes) November 3, 2014
আমি ভাবছি আমার যদি একটি মানুষের চেহারার মুখোশ থাকত তাহলে আমি নেতাকে ভয় দেখাতে পারতাম।
গত মে মাসে থাই সামরিক সরকার এক সংশোধনের ঘোষণা করে যাতে বাক স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা হবে। সাংবাদিক রক্ষা কমিটি এই সেন্সরশিপ প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে, তারা দেশটিতে দ্রুত এবং শর্তহীন ভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঘটনা হচ্ছে, প্রায়ুথ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাংবাদিকরা সংগ্রামের মধ্যে পতিত হয়েছে। যেখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সাংবাদিক অভ্যুত্থান পন্থী যা প্রচার মাধ্যমের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই অভিযানের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়া এমনকি আরো কঠিন করে তুলেছে। থাইল্যান্ডের বর্তমান এই পরিস্থিতিতে কি ভাবে সাংবাদিকরা সামনে এগিয়ে যাবে তা মূলত এক রহস্য হয়ে রয়েছে।