এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ২২ মে, ২০১৪ তারিখে ক্ষমতা দখলের পর থেকে থাই জান্তা সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব পদক্ষেপ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাবিদদের কাছে ভীষণভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
সম্প্রতি জান্তা সরকার ধারাবাহিক বিবৃতি সম্বলিত “১২ টি মূল্যবোধ” আবৃত্তি এবং মুখস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এসব বিবৃতির মধ্যে কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বাড়ানো এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে বেশি প্রধান্য দেয়ার কথা বলা আছে। গত ১১ জুলাই, ২০১৪ তারিখে তৎকালীন জেনারেল প্রয়ুথ চান-ওচার দেয়া এক বক্তব্যে সর্বপ্রথম এই মূল্যবোধগুলোর সম্পর্কে বলা হয়। “জনগণের দৈনন্দিন জীবনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসার” উপলক্ষ্যে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বিস্তৃত এই বক্তব্যে তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বেশকিছু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের কি কি বিষয়ে কথা বলতে হবে সেগুলোর পাশাপাশি জান্তা সরকার এটাও ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা কি কি বিষয়ে কথা বলতে পারবেন নাঃ যেমন জান্তা সরকারের কোন রকম সমালোচনা তারা করতে পারবেন না। নতুন ঘোষিত এই নিয়মে শিক্ষকরা কোন ধরনের রাজনৈতিক মিছিল সমাবেশ অথবা আলোচনা সভাতে অংশগ্রহণ কিংবা আয়োজন করতে পারবেন না। থাইল্যান্ডের প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর থেকে এই দাপ্তরিক ডিক্রিটি তাৎক্ষনিকভাবে “পুনর্মিলনি উৎসাহিত করার” উদ্দেশ্যে জারি করা হয়েছে।
বাধ্যতামূলকভাবে মূল্যবোধগুলো আবৃত্তি করা এবং সমালোচনা মূলক বক্তব্য নিষিদ্ধ করার পেছনে জান্তা সরকারের “সঠিক গনতন্ত্র” শিক্ষা দেয়ার একটি সুদূর প্রসারী উদ্দেশ্য কাজ করছে। কার্যক্রমের হুকুম প্রদান করতে ইতিহাস বিষয়ের একটি পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকটি থেকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার নাম কৌশলে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। থাকসিনকে দেশটির একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখানো হয়েছে। একদিকে দপ্তরে তার শত্রু পক্ষ তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন, অন্যদিকে তার সমর্থকেরা থাইল্যান্ডের দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং আয় বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য তাকে বাহবা দিয়েছেন। দারিদ্র্যের হার এবং আয় বৈষম্য কমানোকে এখন জান্তা সরকারও নিজেদের প্রধান লক্ষ্য বলে দাবি করছে। ক্ষমতা দখল করতে জান্তা সরকার গনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত আরেকজন নেতাঃ অর্থাৎ থাকসিনের ছোট বোন, ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।
জনগণের মাঝে ভিন্নমতের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও থাই নাগরিকেরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই বেছে নিয়েছেন। “শ্যামদেশের শিক্ষা স্বাধীনতা” নামক একটি দলের কয়েকজন সক্রিয় কর্মী পরিবর্তন ডট ওআরজি ওয়েবসাইটে একটি অনলাইন আবেদন শুরু করেছেন। এ আবেদনে ১২ টি মূল্যবোধ আবৃত্তির উপর জারি করা হুকুম তুলে নিতে বলা হয়েছে। অনলাইন আবেদনটি টুইটারে প্রচার করা হচ্ছেঃ
ร่วมกันลงชื่อ ยกเลิก ค่านิยม 12 ประการ http://t.co/Lio0cDdlBS
— Abang Yeed (@AbdulMayeed) October 21, 2014
১২ টি মূল্যবোধ রুখতে আবেদনটিতে যোগ দিন।
ব্যাংকক পন্ডিতের মতো বেশ কয়েকজন থাই সংবাদদাতা শিক্ষাঙ্গনে সমালোচনা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি রাজনৈতিক চাপের কারণে তার ব্লগটি বিচ্ছিন্ন করেছেন। সেপ্টেম্বর মাসে থাইল্যান্ডের প্রাচতাতাই পত্রিকাটির পাশাপাশি দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাটিও পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনার বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করেছে। কেন বইটি সম্পাদনা করা হয়েছে তার কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিয়ে পাঠ্যপুস্তক থেকে থাকসিনের নাম সরিয়ে ফেলার কোন আইনগত ভিত্তি নেই বলে ঘোষণা দেয়ার জন্য তারা জান্তা সরকারকে চাপ প্রয়োগ করেছেন। এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ক্রমাগতভাবে জান্তা সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে আসছে।
#Thailand‘s ruling junta erases all mentions of ex-PM Thaksin from school textbooks http://t.co/bPwq2b5JZl
— amnestypress (@amnestypress) September 16, 2014
থাইল্যান্ডে ক্ষমতাসীন জান্তা স্কুলের সব পাঠ্যবই থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর থাকসিন এর নাম মুছে ফেলেছে।