গৌরবময় থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল শিক্ষার্থী গত সপ্তাহে “অন্যান্য দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনতন্ত্রের পতন” বিষয়ে জনসম্মুখে বক্তৃতা করেন। যদিও ধরে নেয়া হচ্ছে যে আলোচনাটি অন্যান্য দেশের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার ধরে নিয়েছে, বিষয়টি থাইল্যান্ডের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই সরকার এ বিষয়ে আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছে।
থাইল্যান্ডের বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী একজন সেনাবাহিনী প্রধান। তিনি মে মাসে এক সামরিক অভ্যুত্থান মঞ্চস্থ করে ক্ষমতায় এসেছেন। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করেছে। সংসদীয় সভার বিভিন্ন সদস্য মনোনীত করেছেন। তারা অভ্যুত্থান এর নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছেন। একটি নতুন সরকারকে নিযুক্ত করা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন এবং পাঁচ জন অথবা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত হওয়া নিষিদ্ধ করেছে। মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোর উপর নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর পাশাপাশি তারা আগের সিদ্ধান্তগুলো বহাল রেখেছে। যারা সেনাবাহিনীর বিধান অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এমনকি কারাদন্ডে দন্ডিত করার হুমকিও প্রদান করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী প্রকাশ্য এই বক্তৃতাটি বাতিল করতে বলেছে এবং তাদের নির্দেশ মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি লেকচার হলে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তালা ঝুলিয়ে দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা নিচে নেমে উন্মুক্ত হলের দিকে চলে যান। ইতিহাস বিষয়ের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসর নিধি ইয়াওসরিয়ং এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের একজন জনপ্রিয় প্রভাষক প্রাজাক কংকিরাতি উন্মুক্ত হলে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাটি করেন। পুলিশ অনুষ্ঠানটি বাতিল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তাই তারা অনুষ্ঠানের বক্তা এবং আয়োজনকারী শিক্ষার্থীদের স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। উল্লেখ্য সেনা সদস্যরা পুলিশ স্টেশনটি চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।
শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা সম্পর্কে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা টুইটারে ব্যক্ত করেছেনঃ
นักวิชาการที่ จนท.เชิญไป สภ.คลองหลวง เท่าทีีทราบมี นิธิ เอียวศรีวงศ์,จันจิรา สมบัติพูนศิริ,ประจักษ์ ก้องกีรติ pic.twitter.com/Q9g5GZXDGj
— Nalinee Siriked (@Nalinee_PLE) September 18, 2014
আমাদের জানা মতে, কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব অধ্যাপকদের [স্থানীয়] পুলিশ স্টেশনে যেতে বলেছে তারা হলেন নিধি ইয়াওসরিয়ং, জানজিরা সোমবাটপুনসিরি এবং প্রাজাক কংকিরাতি।
นักวิชาการที่ จนท.คุมตัวไปมีนายนิธิ เอียวศรีวงศ์ และนายประจักษ์ ก้องกีรติ ด้วย โดยพาไปที่ สภ.คลองหลวง pic.twitter.com/C0lSwKvjNY
— Nalinee Siriked (@Nalinee_PLE) September 18, 2014
কর্তৃপক্ষ যে কয়জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়েছে তারা হলেন নিধি ইয়াওসরিয়ং, জানজিরা সোমবাটপুনসিরি এবং প্রাজাক কংকিরাতি।
ลั๊นลาหน้า สน. คลองหลวง pic.twitter.com/tywPpob1LE
— ♥ Moui ♥ (@moui) September 18, 2014
তারা নিশ্চয়ই পুলিশ স্টেশনে বেশ ভাল সময় পার করেছেন।
থাই প্রধানমন্ত্রী যখন এই আটক পুলিশ স্টেশনের “আমন্ত্রণ” হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন, তখন ব্যাংকক পোস্ট তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, পুলিশ প্রহরায় থাকা অবস্থায় বক্তৃতায় অংশগ্রহণকারীদের “আচরণগত সমন্বয়” ঘটানো হয়েছে।
১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী সেনাবাহিনীর এই আচরনের নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে গণস্বাক্ষর করেছেনঃ
আমরা সবাই থাইল্যান্ডের ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ সেনাবাহিনী এবং পুলিশের আচরণের নিন্দা জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের ভিতরে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আমরা একটি নিন্দা প্রস্তাব এনেছি। সেনাবাহিনী এবং পুলিশের এই আচরণ স্পষ্টভাবেই শিক্ষা কার্যক্রমের স্বাধীনতার প্রতি আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করে মারাত্মকভাবে অনধিকার প্রবেশ করা, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তারা যে যুক্তি দেখিয়েছেন, এই প্যানেল আলোচনা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন। থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা চলছিল তা একেবারেই নিয়মিত এবং স্বাভাবিক একটি কার্যক্রম। এমন আলোচনা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কখনই ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়নি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড এডামস সরকারের প্রতি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের স্বাধীনতার উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার সুপারিশ জানিয়েছেনঃ
একদিকে থাই সেনাবাহিনী নিজেদেরকে স্বৈরশাসক নয় বলে বিশ্বের কাছে দাবি করছে, অন্যদিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানবাধিকার এবং গনতন্ত্র বিষয়ক আলোচনা নিষিদ্ধ করে এ সকল ক্ষেত্রে অবৈধ হস্তক্ষেপ করছে। তাই প্রধানমন্ত্রী প্রয়ুথের উচিৎ শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতার উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ অতিসত্বর বন্ধ করা।
এই ঘটনাটি থাইল্যান্ডে সেনাবাহিনী চালিত সরকারের অধীনে মানবাধিকার রক্ষা পরিস্থিতি, শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতার দ্রুত অবনতি ঘটার একটি অন্যতম স্বাক্ষর। তবে তাঁর পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে অনেক দল এবং নাগরিকেরা নিঃসন্দেহে চান দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে আসুক।