মিয়ানমারের সবচে’ বড়ো শহর হিসেবে পরিচিত ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয়ে নারীদের জন্য মদ কেনা নিষিদ্ধ করতে আলোচনা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। যদিও ২০০৯ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের মানুষ সবচে’ কম মদ্যপান করেন। একই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেখানকার নারীদের মাত্র ১.৫ শতাংশ এবং পুরুষদের মাত্র ৩১ শতাংশ মদ পান করে থাকেন। তবে অনেকে দাবি করছেন, বর্তমানে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।
ব্লগার আং টিন কেয়াং সাম্প্রতিককালের প্রবণতা নিয়ে লিখেছেন:
As Burma opens its doors to the outside world, there seems to be a loosening of social mores. For instance, on social media, I’ve noticed a surge of Burmese youths (often around my age or younger), both friends and relatives alike, casually drinking alcohol in social settings.
বার্মা তার দরজা বহির্বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আর তার ফলশ্রুতিতেই সামাজিক মূল্যবোধের অবনমন হচ্ছে। সম্প্রতি আমি বার্মার সামাজিক মিডিয়ায় খেয়াল করেছি, তরুণরা (এদের কারো কারো বয়স আমার চেয়েও কম), আমার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজন বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনে প্রায়ই মদ্যপান করে থাকেন।
আং টিন কেয়াং-এর পোস্টে সহমত জানিয়ে ওয়াগানাং লিখেছেন:
The consumer society — especially the conspicuous consumption seen on Facebook — inevitably encourages it so that you begin to see Burmese women, young and not so young, with a glass of wine in their hand almost like a status symbol or a fashion statement.
ভোক্তা সমাজে- বিশেষ করে ফেসবুকে আমরা যে ভোগবাদীতা দেখি- নারী, তরুণ, এমনকি তরুণ নয় এমন আরো অনেকে ওয়াইনের গ্লাস হাতে যে ছবি প্রকাশ করেন, তা স্ট্যাটাস সিম্বল অথবা ফ্যাশনের একটি অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাস্তবিকভাবেই এগুলো আর সবাইকে উত্সাহিত করে।
মিয়ানমারের একমাত্র বর্মীভাষী দৈনিক তাদের এক প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নারীদের মদ্যপান নিষিদ্ধের প্রস্তাব দিয়েছে। ব্লগার মেডিজুন বিষয়টি সঠিকভাবে তুলে আনা হয়নি বলে যুক্তি দেখিয়েছেন:
Even before this news came out, local media has been targeting female drinkers by using the picture of women sitting at beer stations on news articles about the rise of alcohol consumption in the country.
I’m not advocating for alcohol. In fact, I hate alcohol and I can’t stand the stench of it, but it’s not fair to limit women from drinking alcohol just because we are women. I believe we have the choice to choose whether we drink or not and nobody has the right to dictate [to] us.
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই স্থানীয় পত্র-পত্রিকাগুলো নারী মদ্যপায়ীদের টার্গেট করেছে। দেশে মদ্যপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে এমন প্রতিবেদনের সাথে বিয়ারের দোকানে বসা নারীদের ছবি প্রকাশ করেছে।
আমি মদ্যপানের পক্ষে ওকালতি করছি না। আমি মদকে ঘৃণা করি। দুর্গন্ধের কারণে এর কাছেই যেতে পারি না। তবে শুধু নারী হওয়ার কারণে মদ পান করতে দেয়া হবে না, এমন চিন্তাভাবনা পক্ষপাতদুষ্ট। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সবার অধিকার আছে মদ পান করবো কি করবো না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার। কেউ-ই সেটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন না।
বার্মার মহিলা লিগের মতে, পুরুষরা নানাভাবে সমাজের ওপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ওইসিডি'র ২০১২ সালের লিঙ্গ সমতার র্যাঙ্কে ওইসিডি'র সদস্য দেশের বাইরের ১০২টি দেশের মধ্যে মিয়ানমারের অবস্থান ৪৪তম। গিনি বিসাউ এবং ভিয়েতনামও একই সারিতে রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিরোধিতা করেও মেডিজুন বিশ্বাস করেন, কিছু নারী তাদের মতামত জানাবেন:
I doubt the entire female population in Myanmar will be outraged with this unfair prohibition. In fact, some of them (or the majority of them) might even support it.
আমার সন্দেহ আছে, এরকম একটা অনায্য নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গোটা নারী সমাজ বিক্ষোভে নেমে পড়বেন। কিছু অবশ্য (বেশিরভাগ নারীই) নিষেধাজ্ঞার প্রতিই তাদের সমর্থন জানাবেন।
অন্য একটি পোস্টে ব্লগার আং টিন কেয়াং ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, মদ্যপান বুদ্ধ ধর্মের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। কেন না, মদ পান মানুষকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায়, যেখানে অন্য প্রাণির প্রতি বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।
নারীদের জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ করার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। যদিও মিয়ানমারে নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি মদ পান করেন। কোন কোন এলাকায় নারীদের জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মদ্যপান কমিয়ে আনার জন্য বিধিনিষেধ আরোপের কথা চিন্তাভাবনা করছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অনেক সংসদ সদস্য মদ্যপান আইনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন না।
মিয়ানমারের মানুষদের মদ্যপানের অভ্যাসের বিষয়টি আলোচনার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শহরে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। এদিকে ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয়ে নিষেধাজ্ঞা চালু না হলেও পুরুষদের জন্য এক নীতি আর নারীদের জন্য আরেক নীতির ফলে লিঙ্গ বৈষম্য একটি ইস্যু হয়ে উঠেছে।