‘জীবনের জন্য মেয়েরা’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা জ্যামাইকাতে নির্মম বাস্তবতা বদলে ফেলার চেষ্টা করছে। দেশটিতে বিপুল সংখ্যক কন্যা শিশু এই নির্মম বাস্তবতার শিকার হচ্ছে। সংস্থাটি “নুহ গুহ দে” নামে ভাষান্তরিত শিরোনামে এ প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। “নুহ গুহ দে” কথাটির অর্থ হচ্ছে “সেখানে যেওনা”। এখানে “দে” বলতে তারা মেয়েদের প্রতি সংঘটিত যৌন নির্যাতনকে বোঝাচ্ছে। তাঁর সাথে সাথে “দে” বলতে এখানে কিছু সংখ্যক জ্যামাইকান জনগণের, বিশেষ করে পুরুষদের বিকৃত যৌন আচরণকেও বোঝানো হয়েছে। কেননা জ্যামাইকান সমাজের কোথাও কোথাও অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যা শিশুদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকেও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়।
দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী মেয়েরা বিশেষ করে এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সংবেদনশীল। তাদেরকে প্রায়ই যৌন ব্যবসায় নামতে প্রলুব্ধ করা হয়। অথবা তারা যৌনপল্লীর দালালদের খপ্পরে পরে যায়। কখনও কখনও তারা অর্থনৈতিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরিবর্তে তাদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
সচেতনতামূলক এই প্রচারাভিযানটি শুরু করার মাধ্যমে এনজিওটি এ সকল বিষয় সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারবে বলে আশা করছে। নতুন প্রজন্মের জ্যামাইকান মেয়ে শিশুদের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য তারা এ প্রচারাভিযানের আয়োজন করেছেন। এমা লুইস নামের একজন ব্লগার তাদের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসকে এসব নির্যাতিত মেয়েদের আরও বেশি করে ক্ষমতায়নের জন্য একটি উপলক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করতে চান। কেননা তাদের মাঝে অনেকেই শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। আর একমাত্র শিক্ষাই তাদেরকে এই নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
লুইস স্বীকার করে নিয়েছেন যে জ্যামাইকান মেয়েদের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি কোন নতুন কিছু নয়ঃ
বিশ্বের অনেক স্থানেই মেয়েরা নানাধরনের বৈষম্যের শিকার হন। কিছু কিছু দেশে তাদেরকে বাল্য বিবাহ […] করতে বাধ্য করা হয়। যে বয়সে তারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়, সে বয়সে তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। বিশ্বের অনেক দেশে মেয়েরা বিভিন রকম শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন। অনেক মেয়ে শিশু যথাযথ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। অনেককেই শিশু শ্রমে বাধ্য করা হয়। অনেকেই যৌন নিপীড়ন এবং মানব পাচারের শিকার হন। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসটি মূলত মেয়ে শিশুদের প্রতি ঘটে যাওয়া এসব নির্মমতাকে দূর করার, মেয়েদের ক্ষমতায়ন আরও বাড়ানো এবং তাদের মানবাধিকারগুলো পূরণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে পালন করা হয়।
‘জীবনের জন্য মেয়েরা’ প্রচারাভিযানটি যেসব বিষয়ে কাজ করছে সেসব নিয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, সংস্থাটি দেশের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে বসবাসকারী কয়েকজন মেয়ে, তরুণী, অবিবাহিত এবং এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত মায়েদের এবং তাদের বাচ্চাদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগীতা করছে। তাদেরকে এইডস বিষয়ে বিভিন্ন উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান, সামাজিক সহযোগীতা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন। তাদের পক্ষ থেকে লুইস ব্যাখ্যা করেছেনঃ
সারা বিশ্বের এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তদের মাঝে শতকরা ষাট ভাগেরও বেশি সংখ্যক হচ্ছে তরুণী। জ্যামাইকাতে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ছেলেদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক মেয়ে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত […]
দারিদ্র, বেকারত্ব, এইডস আক্রান্ত হওয়াকে কলঙ্ক হিসেবে বিবেচনা, বিভিন্ন রকম বৈষম্য এবং জীবনধারণ খরচ বাড়ার সাথে তাদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাঁর পাশাপাশি পারিবারিক সহমর্মিতার অভাব; পারিবারিক এবং যৌন নির্যাতন (বেড়ে যাওয়া); এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আশ্রয়হীনতার কারনেও তাদের অবস্থা আরও করুণ হয়ে পরেছে।
সত্যি কথা বলতে ‘জীবনের জন্য মেয়েরা’ প্রচারাভিযানটি সমাজের একটি বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে জনসম্মুখে কাজ করতে শুরু করেছে। তারা এই নির্যাতন চক্রটির পরিবর্তন ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই “অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের যৌন কাজের ‘উপযোগী’ করে তোলার চর্চাটি” বন্ধ করতে হলে এ পথে সংস্থাটিকে একটি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবেঃ
এই রীতিতে অধিক বয়সী পুরুষেরা এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের যৌন কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এমনকি কখনও কখনও জোরপূর্বক। যেহেতু তারা এখনও শিশু তাই এটি অবৈধ। এটাই যৌন নিপীড়ন। ফলে এসব শিশুদের বিভিন্ন মানসিক, আত্মিক এবং শারীরিক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তারা অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ, যৌন সম্পর্কের ফলে সঞ্চারিত রোগসংক্রমণ এবং কখনও কখনও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই পুরুষদের বলছি, এগুলো বন্ধ করুণ!
কাকতালিয়ভাবে “নুহ গুহ দে” শিরোনামের প্রচারাভিযানটি আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস অর্থাৎ ১১ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখ রোজ শনিবারে দাপ্তরিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।