- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

প্রাচীন নগরী বারানসিকে হাই-টেক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, উন্নয়ন, নাগরিক মাধ্যম, শিল্প ও সংস্কৃতি
The Ganga riverfront at Varanasi (Wikimedia CC-BY-SA) [1]

গঙ্গার তীরৈ তীর্থভুমি বারানসি। (উইকিমিডিয়া সিসি-বিওয়াই-এসএ)

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারানসির [2] আসন থেকে নির্বাচনে জিতেছেন [3]। এখন তিনি শহরটির উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। আর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি শহরের প্রাচীন সংস্কৃতির সাথে আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

গত মে মাসে মোদী নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এরপর আর সময় নষ্ট না করে উন্নয়ন কাজে হাত দেন। বারানসিকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি আগস্ট একটি পরিকল্পনার [4] কথা ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি বাস-ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি-সহ নগরীর প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। গত মাসে মোদী জাপান সফরের সময় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যাতে মোদীর উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে জাপান সরকার সাহায্য করার অঙ্গীকার করে।

বারানসির ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। কিংবদন্তী অনুসারে, শিব [5]এই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে প্রাচীন কালে এটি কাশী [6] নামে পরিচিত ছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি পৃথিবীর সবচে’ পবিত্র নগরী। কাশী [7] নামের বাংলা অর্থ হলো আলোর শহর। শহরের ভিতরে কয়েকশ’ মন্দির রয়েছে। গঙ্গা নদী কাশীর ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে। হিন্দুরা এই নদীকেও পবিত্র হিসেবে গণ্য করেন। সাধুরা এখানে এসে বসবাস করেন। তারা সকালে নদীতে গোসল সেরে প্রতিদিনের ধর্মকর্ম শুরু করেন।

লেখক রাজীব মালহোত্রা মোদীর পরিকল্পনার সাথে নিজের চিন্তাভাবনার কথা টুইটারে তার ১ লাখের বেশি অনুসরণকারীদের সাথে শেয়ার করেছেন:

পবিত্র ভুমি কাশীর পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ খুবই ভালো। শক্তিপীঠ এবং জ্যোতিলিঙ্গের জন্য এমন উদ্যোগ নিতে হবে।

রাজীব মালহোত্রা একাই এমন ভাবনা ভাবেননি। দুই সপ্তাহ আগে টুইটারে এমন কথা অনেকেই বলেছিলেন:

খুব ভালো খবর যে, ভারত আবার নবীন এবং আধুনিক হবে। এমন করেই আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নিতে হবে।

সবাই যে মোদীর পরিকল্পনা সমর্থন করছেন, তা নয়। কেউ কেউ এর বিরোধীতাও করছেন। এদের একজন অজয় রায়। তিনি কংগ্রেস দলের সদস্য। সংসদ নির্বাচনে মোদীর বিপক্ষে লড়েছিলেন। তিনি বারানসিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি ছবি পোস্ট করেছেন।

কাশীর মানুষের সাথে কৌশিকি রায়, অজয় রায় বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের দাবি তুলেছেন।

তবে এই বিরোধীতা মোদীর পরিকল্পনাকে দমাতে পারেনি। গত মাসেই তিনি জাপান সফরের সময় কাশী-কিয়োটা প্রটোকল [18]স্বাক্ষর করেছেন। উল্লেখ্য, কিয়োটা শহরও প্রাচীন সংস্কৃতির সাথে আধুনিকতা মেলবন্ধনে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে।

জাপান সফরের দ্বিতীয় দিনে মোদী ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট তোজি মন্দির [19] ঘুরে দেখেন। তিনি অবাক হয়ে যান, মন্দিরের সুচারু ব্যবস্থাপনা দেখে। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন [20], জাপান যদি হাজার বছরের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করে প্রতিদিনের জীবনে অপরিহার্য করে তুলতে পারে, তাহলে একইভাবে আমরা আমাদের ভারতের অতীত ঐতিহ্যগুলোও সংরক্ষণ করতে পারবো।

বারানসিকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে টোকিও'র সাথে চুক্তি হয়েছে। আর এই চুক্তির আওতায় অত্যাধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, উচ্চ-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ সিনেমা হল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা জাপান দিবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের আগে সাংবাদিক মিনহাজ মার্চেন্ট একটি টুইট করেছিলেন। সেখানে জাপানের সাথে ভারতের কাজ করার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছিলেন।

বারানসি-কিয়োটো চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে দুইটি কাজ হবে। বারানসি আধুনিক শহরে পরিণত হবে এবং স্মার্ট শহরের দিকে যাত্রা করবে।

সম্ভবত ভারতের এখন সেই সময় এসেছে- হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতিকে একুশ শতকের জীবনধারায় মিলিয়ে দিয়ে সমৃদ্ধ অতীত এবং ভবিষ্যতের মধ্যে একটি মেলবন্ধন স্থাপনের নজির তৈরি করার।