
মারিয়াম আল খাজা গত রাতে বাহরাইনের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাকে তার আইনজীবী মোহাম্মদ আল জিশি'র সাথে দেখা যাচ্ছে। ছবি: মোহাম্মদ আল জিশি।
আন্তর্জাতিক চাপে গত রাতে মানবাধিকারকর্মী মারিয়াম আল খাজাকে মুক্তি দিয়েছে বাহরাইন। মারিয়াম গালফ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস-এর সহ-পরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। ৩০ আগস্ট ২০১৪-এ তাকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে সরকার তাকে দেশে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এদিকে গালফ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বাহরাইনের পাশাপাশি মারিয়ামের সুইডিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি দেশে এসেছিলেন জেলবন্দী বাবা আবদুলহাদি আল-খাজা‘র সাথে দেখা করতে। তার বাবাও একজন প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী। গত ২৭ দিন ধরে তার বাবা জেলের ভিতরে অনশন কর্মসূচী পালন করছেন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে বাহরাইন জুড়ে গণতন্ত্রের পক্ষে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। এর জের ধরে সরকারি কর্তৃপক্ষ মারিয়ামের বাবাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। পরে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এটি তার দ্বিতীয় অনশন। তার প্রথম অনশন কার্যক্রম ১১০ দিন স্থায়ী হয়েছিল। সে সময় কর্তৃপক্ষ তাকে জোর করে খাইয়ে তার অনশন ভঙ্গ করে।
বিমানবন্দরে পুলিশকে আক্রমণ করার অভিযোগে মারিয়াম আল খাজাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও মারিয়াম উল্টো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ এনেছেন। এদিকে মুক্তি পেলেও কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করবে। তাছাড়া তার ভ্রমণের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এবং অক্টোবরের ১ তারিখে আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
টুইটারে ১ লাখের উপরে অনুসরণকারীদের তিনি তার বর্তমান অবস্থা জানিয়েছেন:
Despite the release, I am banned from traveling and the charges have not been dropped. First hearing will b on October 1st #Bahrain
— Maryam Alkhawaja (@MARYAMALKHAWAJA) September 18, 2014
মুক্তি পেলেও আমার সব ধরনের ভ্রমণের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগও প্রত্যাহার করা হয়নি। প্রথম শুনানি অক্টোবরের ১ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।
মুক্তি পাবার পরপরেই মারিয়াম আল খাজা তার মুক্তির জন্য যারা যারা কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে টুইটারে ধন্যবাদ জানান। তাছাড়া তাদের উদ্দেশ্যে আগামী দিনেও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন:
Before leaving prison, I informed them that I will continue my human rights work. #Bahrain
— Maryam Alkhawaja (@MARYAMALKHAWAJA) September 18, 2014
জেল ছাড়ার আগে আমি সবাইকে বলছি, মানবাধিকারের পক্ষে আমি কাজ করে যেতে চাই।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে বাইরাইন জুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর মারিয়াম এবং তার বাবার মতো অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আল খাজা তাদের অঙ্গীকারের কারণে সবার মনোযোগ পেয়েছেন:
If the international community cud secure my release tht gives me hope that we can do the same 4 d thousands of political prisoners #Bahrain
— Maryam Alkhawaja (@MARYAMALKHAWAJA) September 18, 2014
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি আমার মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে আমি আশাবাদী আমরা বাহরাইনের হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্ত করতে পারবো।
আরব বসন্তের কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে আরব বিশ্বের আরো অসংখ্য মানুষের জেলবন্দী হওয়ার কথা মারিয়াম তার অনুসরণকারীদের স্মরণ করিয়ে দেন:
Happy to hear @Alaa was released, waiting for news on Yara Sallam, Sanaa Seif, Mahienour and Razan Zeitounah #Egypt #Syria
— Maryam Alkhawaja (@MARYAMALKHAWAJA) September 18, 2014
আলা মুক্তি পেয়েছেন জেনে খুশি হয়েছি। ইয়ারা সালাম, সানা সেইফ, মাহেনূর এবং রাজান জেইতুনাহ'র মুক্তির খবর শোনার অপেক্ষায় রয়েছি।
মিশরের মানবাধিকারকর্মী এবং ব্লগার আলা আব এল ফাত্তাহ জামিনে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে অ্যাক্টিভিস্ট ইয়ারা সালাম, আব এল ফাত্তাহ'র বোন সানা সেইফ, মাহেনূর আল মাসরি মিশরের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। আর সিরিয়ার কারাগারে বন্দি রয়েছেন মানবাধিকারকর্মী রাজান জেইতুনাহ।
আক্টিভিস্টরা মারিয়াম আল খাজা'র মুক্তির খবর সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেন।
মারিয়ামকে মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে বাহরাইন সরকার কি বার্তা দিয়েছে তা টুইট করে জানিয়েছেন জোনাথন মোরেমি:
Bottom line of #Bahrain arresting, harrassing, threatening and releasing @MARYAMALKHAWAJA is they make an utter fool of themselves. Shameful
— Jonathan Moremi (@jonamorem) September 18, 2014
মূল কথা হলো, বাহরাইনে গ্রেফতার, হয়রানী, হুমকি এবং মুক্তি সবই আছে। তবে মারিয়ামের মুক্তি তাদের বোকা বানিয়েছে। কী লজ্জার কথা।
মারিয়ামের মুক্তির খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মরক্কোর সামিরা ইরাজ্জুকি:
The sound of hearing the voice of friends who’ve been unjustly silenced in prison <3 So glad you’re out @MARYAMALKHAWAJA
— Samia Errazzouki (@charquaouia) September 18, 2014
ম্যালাদিন পরে বন্ধুর কণ্ঠ শুনতে পেয়ে ভালো লাগছে। তাকে এতোদিন অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। সে মুক্তি পাওয়ায় খুব খুশি হয়েছি।
সিএনএন-এর মোহাম্মদ জমজম মারিয়ামের সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়েছেন:
Great news that brave activist @MARYAMALKHAWAJA is out of jail, but terrible she's banned from travel & facing trial #FreeMaryam #Bahrain
— Mohammed Jamjoom (@MIJamjoom) September 18, 2014
খুশির খবর হচ্ছে, মানবাধিকারকর্মী মারিয়াম আল খাজা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তবে তার ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।