দক্ষিণ কোরিয়ায় সকাল ৯টায় ক্লাস শুরু নিয়ে বিতর্ক উঠেছে কেন?

Young Korean children studying at a "hagwon." Image by Flickr user knittymarie (CC BY-SA 2.0)

প্রাইভেট স্কুলে পড়ুয়া কোরিয়ান শিশু। ছবি নেয়া হয়েছে নিটিম্যারি'র ফ্লিকার অ্যাকাউন্ট থেকে। সিসি বিওয়াই-এসএ ২.০।

বাচ্চাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার খ্যাতির চেয়ে কুখ্যাতিই বেশি। এখানকার পড়াশোনা খুব প্রতিযোগিতামূলক। ছোট ছোট বাচ্চাদের জোর করে সেই ভোরে স্কুলে পাঠানো হয়। আর ফেরে বেশ রাত করে। অফিসিয়াল সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা হলেও প্রাইভেট স্কুলে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে অনেক রাত করে ফেরে।
আর তাই বাচ্চাদের আরো একটু ঘুমানোর সুযোগ করে দিতেই আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েনজি প্রদেশ স্কুলের সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়। নতুন নিয়মে স্কুল শুরু হয় সকাল ৯টায়। তবে এই সিদ্ধান্ত সারাদেশ জুড়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আরো কয়েকটি প্রদেশ স্কুল শুরুর নতুন এই নিয়ম চালুর বিষয়টি বিবেচনা করছে।

অনলাইন বিতর্ক দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এক পক্ষ পুরোনো নিয়মে স্কুল চালুর পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। আরেক পক্ষ বলছেন, কিছু অভিভাবক নতুন নিয়মের অপব্যবহার করবেন। দেখা যাবে, তারা সকালবেলায় তাদের সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখছেন।

সকাল ৯টায় ক্লাস শুরু নিয়ে বিতর্ক করছেন তারাই, যারা প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতির রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে হাইওয়েতে ১০০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর সমালোচনা করেন।

নিচের দুটো পোস্ট-ই ১৩০০ বারের বেশি রিটুইট হয়েছে।

দেরিতে সকাল ৯টায় স্কুল চালু নিয়ে মায়েদের আলোচনা আমার গায়ে হুল ফোটায়। দেরিতে স্কুল শুরু হওয়ায় পড়াশোনায় কী যে ক্ষতি হচ্ছে বাতাসে ভেসে আসা সেসব আলোচনার অংশবিশেষ শুনি, তাদের গুঞ্জন শুনি। এখন তাদের সকাল ৭টার আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে। বাচ্চাদের বইপত্র গুছিয়ে তৈরি করে দিতে হবে। তারা এক একটা উন্মাদ ব্যক্তি।

সকাল ৯টায় স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা অনেক বাচ্চাই প্রত্যাখান করেছে। এটি স্কুলের নিয়মিত সময়টাকেও দেরিতে নিয়ে যাবে। আর এতে করে শিক্ষার্থীদের সীমিত পরিমাণ যে মুক্ত সময় রয়েছে, সেটাও কমে যাবে। সপ্তাহে ৬ দিনের থেকে স্কুল যখন ৫ দিনে যাবে, তখন ছুটির সময়ও সংকুচিত হবে। কারণ তখন বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলের সময় বেশি হবে। বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলের দিনের পরিমাণ কমানো দরকার।

দেরিতে স্কুল শুরু করলে বাচ্চাদের ভালো হবে, শুধু সেই কারণে বিতর্ক শুরু হয়নি। বিতর্ক ওঠার আরো অনেক কারণ রয়েছে। এর একটি হলো বাবা-মায়েদের অফিস সময়ের ঠিক রাখা। অনেক বাবা-মা'ই উদ্বিগ্ন, তারা তাদের সন্তানের নতুন সময়ের সাথে অফিসের সময় মিলাতে পারবেন কি না, তা ভেবে। যদিও এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৩% বাচ্চা নতুন সময় নিয়ে খুশি। তাছাড়া ৫৬% বাবা-মা নতুন সময়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

আমি বুঝতে পেরেছি, যেসব বাবা-মা দ্বিগুণ আয় করেন, তাদের পক্ষে নতুন সময় মিলিয়ে নেয়া একটু কঠিন হবে বৈকি। যদিও সকালের খবরে এক মায়ের বক্তব্য শুনে আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেছিলাম। তিনি সাংবাদিকের কাছে চাকরি করার কারণে নতুন ব্যবস্থা প্রত্যাখানের কথা বললেন। তাছাড়া স্কুল শুরু হওয়ার আগেই বাচ্চাদের জন্য কিছু খুঁজে বের করার দাবি জানালেন। আর অসুবিধা তৈরি করার কারণে একে প্রত্যাখান করলেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .