ইরান সরকার ইতোমধ্যে প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন যথেষ্ট কড়াকড়ি করেছে। সম্প্রতি এই আইনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনের অধীনে সকল অনলাইন সংবাদপত্রকে এখন থেকে সংস্কৃতি এবং ইসলামিক দিকনির্দেশনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে “ই-রাসানেহ” নামক একটি ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করাতে হবে। ফার্সী ভাষার এ শব্দটির অর্থ “ই-সংবাদপত্র”। জাতীয় প্রেস পরিদর্শন বোর্ডের বিচার ব্যবস্থার অধীনে এটি কাজ করে থাকে।
যেসব ওয়েবসাইট নতুন ঘোষিত নিয়মনীতি মেনে চলবে সেগুলো মন্ত্রণালয় থেকে ছয় মাসের জন্য ভর্তুকি পাবে। তাঁর পাশাপাশি সেগুলো জাতীয় বিভিন্ন ঘটনাবলী সম্প্রচারের পাস পাবে।
প্রতিমন্ত্রী হোসেন এনতেজামির সাথে আগস্ট মাসের শেষে অনুষ্ঠিত একটি প্রেস কনফারেন্সের পর রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। “জাতীয় প্রেসের সাথে আইনগত পরিবেশ যেন একই সীমারেখায় অবস্থান করতে পারে” তাই ইরানের প্রচার মাধ্যম শিল্পের নেতৃবৃন্দের প্রতি এনতেজামি নতুন নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “প্রেস আইনের ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে সকল সংবাদ এবং সংবাদের ওয়েবসাইটকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। এ সকল বিজ্ঞপ্তি বৈধ আইনের ভিত্তিতেই দেয়া হবে। আইনানুযায়ী এ সকল ওয়েবসাইটের মালিক এবং প্রচার মাধ্যম দপ্তরের পরিচালক [সংস্কৃতি এবং ইসলামিক দিক নির্দেশনা মন্ত্রণালয়ের কাছে] তাঁর নাম এবং ঠিকানা প্রদান করতে বাধ্য।
১৮ নং অনুচ্ছেদ হচ্ছে ইরানের জাতীয় সাইবার অপরাধ আইনের একটি অংশ। আইনটির অধীনে রাষ্ট্রের ভিতরে “মিথ্যা সংবাদ প্রচার” করতে টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রাদি ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর অধীনে জনগণকে, জনগণের “মনের অবস্থাকে” এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের ধারনাকে বিভ্রান্ত করতে নিষেধ করা হয়েছে। আইনের এই অনুচ্ছেদে এসব নিয়মনীতি যতটা সম্ভব অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা আছে।
এনতেজামি উল্লেখ করেছেন যে ইরানের ইন্টারনেটে বিপুল সংখ্যক অনিবন্ধিত সংবাদ ওয়েবসাইট রয়েছে। অতি শীঘ্রই কোন রকম বৈষম্য ছাড়াই প্রেস নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এ সকল অনিবন্ধিত ওয়েবসাইট বন্ধের কাজ শুরু করবে। একটি সংবাদ প্রচারকারী ওয়াবসাইটের কি কি বিশেষত্ব থাকতে হবে তা মন্ত্রণালয় এখনও যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করেনি। তবে এনতেজামি প্রেস কনফারেন্সে উল্লেখ করেছেন, নিয়ন্ত্রণ বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত একটি অনলাইন মঞ্চের মাধ্যমে একটি সংবাদ প্রচারকারী ওয়েবসাইটের যথাযথ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সকল ইরানিকে জানিয়ে দেয়া হবে। এনতেজামি আরও বলেছেন, ফার্সী দিনপঞ্জি অনুযায়ী শাহরিভার মাসের শেষে নিবন্ধিত ওয়েবসাইটগুলোকে সরকারের ইস্যুকৃত অনুদান গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এ আইনের অধীনে গত সপ্তাহে সর্বপ্রথম ডানা ডট আইআর ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ইরানি ব্যবহারকারীরা অন্যান্য আরও কয়েকটি ওয়েবসাইটের মতো এটিও বন্ধ পান।
মাঝে মাঝেই সংবাদ পরিশোধন এবং বলপূর্বক নিয়মনীতি চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বেশ উদারমনা বক্তব্য প্রদান করে থাকেন। তাঁর এসব বিবৃতি দেয়া সত্ত্বেও সংবাদ প্রকাশ আরও বেশি পরিশোধিত করার এই নতুন নিয়মনীতি এলো। প্রেসিডেন্টের দাপ্তরিক একাউন্ট থেকে করা নিচের টুইটে গত রবিবারে দেয়া তাঁর টেলিভিশন বক্তব্যের কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছেঃ
If you set up #filter, somebody'll set up anti-filter. Nothing'll be resolved in this way – if it did, issues would've been resolved by now.
— Hassan Rouhani (@HassanRouhani) September 7, 2014
আপনি যদি #সংবাদপরিশোধন নীতি প্রতিষ্ঠা করেন, তবে আরেকজন বিপরীতে পরিশোধন বিরোধী নানা কৌশল অবলম্বন করবেন। এমনটি করার ফলে কোন সমাধান পাওয়া যাবে না। যদি তাই হত তবে এত দিনে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
অনেক ইরানি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য এখন রুহানির কথাগুলোতে আস্থা রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি অনলাইন সক্রিয় কর্মীদের গ্রেপ্তার করার সাথে সাথে নতুন এসব নিয়মনীতি গ্রহনের ফলে ইরানিরা বেশ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।