প্রবাদপ্রতিম ফিলিস্তিনি কবি, রাজনৈতিক কর্মী এবং সাংবাদিক সামিহ আল কাশেম ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের পর গত ১৯ আগস্ট মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
আল-কাশেম রেমেহতে জন্মগ্রহণ করেছেন। সেখানেই তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। রামেহ ইসরায়েলের উত্তরে অবস্থিত একটি আরব শহর। তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন রামেহ ফিলিস্তিনের একটি অংশ ছিল। ১৯৪৮ সালে তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। যদিও আল-কাশেম ইসরায়েলের নাগরিক ছিলেন। তবে তিনি নিজেকে ফিলিস্তিনি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। ইসরায়েলের আরব নাগরিকেরা এখনও নিজেদেরকে ফিলিস্তিনি বলে দাবি করেন। “৪৮ এর ফিলিস্তিনিরা” অথবা শুধুমাত্র ৪৮ বলেও তারা নিজেদের অভিহিত করেন। তিনি জাতীয়তাবাদী কবিতা লিখেছেন। তিনি প্রায়ই সাবেক ফিলিস্তিনি ভূখন্ড, যা এখন ইসরায়েলের একটি অংশে পরিণত হয়েছে সেখানে ফিলিস্তিনি পরিচয় নিয়ে কথা বলতেন।
এই লেখক ৩০ টিরও বেশি কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং সংগৃহীত নাটকের বই লিখেছেন। আল-কাশেম উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেখে গেছেন। আরবিতে লেখা তাঁর বইগুলো নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি সারা জীবন অত্যন্ত আবেগ সহকারে তাঁর ফিলিস্তিনি পরিচয় রক্ষা করে গেছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে (ইসরায়েলের দ্রুজ নাগরিকদের জন্য যা আবশ্যক ছিল) নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে প্রত্যাখ্যান করার কারণে এবং তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে বেশ কয়েকবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাকে গৃহবন্দীও রাখা হয়েছিল। এতকিছু সত্ত্বেও তিনি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেছেন, “আমি আমার নিজের দেশে থেকে যেতে চাই, তাঁর কারন এটা নয় যে আমি নিজেকে কম ভালোবাসি। বরং তাঁর কারন এই যে আমি নিজের চেয়ে দেশকে বেশি ভালোবাসি”।
তিনি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। তিনি আরব ইসরায়েলি কুল আল-আরব [আরব সকল] সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রধান সম্পাদক ছিলেন।
দেখে মনে হচ্ছে, তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে ফিলিস্তিনিরা তাকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে সঙ্গতভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষনিকভাবে তাদের “প্রতিরোধী কবির” জন্য শোক প্রকাশ করেছেন।
তাঁর সতীর্থ ফিলিস্তিনি কবি মুরিদ বারঘৌতি লেবানিজ সঙ্গীত শিল্পী মারসেল খলিফার মাধ্যমে আল-কাশেমের জন্য একটি বিখ্যাত গান উৎসর্গ করেছেন। গানটির প্রকৃত সংস্করণ “আমি হেঁটে যাই” বদলে “তিনি হেঁটে যান” করা হয়েছে।
منتصب القامة يمشي، مرفوع الهامة يمشي … بعيداً . وداعاً سميح القاسم
— مريد البرغوثي (@MouridBarghouti) August 19, 2014
সোজা, তিনি হেঁটে যান। তাঁর মাথা উঁচু করে তিনি হেঁটে যান… বহু দূরে। শুভবিদায়, সামিহ আল-কাশেম।
আরেকজন ফিলিস্তিনি কবি মাজিদ আল-বারঘোউতি বলেছেনঃ
Samih Al-Qasim, the poet who passed away minutes ago will continue to recite his resistance poems till justice&peace prevail in Palestine..
— Majeed Al-Barghouthi (@majeedb) August 19, 2014
কয়েক মিনিট আগেই চির বিদায় নিয়ে চলে যাওয়া কবি সামিহ আল-কাশেম তাঁর প্রতিরোধী কবিতাগুলো ততদিন আবৃত্তি করে যাবেন, যতদিন ফিলিস্তিনে ন্যায়বিচার এবং শান্তি বজায় থাকবে…
বার্লিন ভিত্তিক ব্লগার আবির কপতি তাকে “জাতির পিতা” আখ্যায়িত করেছেনঃ
الشاعر الفلسطيني #سميح_القاسم في ذمة الله.. وداعا أبو وطن!
— Abir Kopty (@AbirKopty) August 19, 2014
ফিলিস্তিনি এই কবি এখন সৃষ্টিকর্তার হেফাজতে আছেন। জাতির পিতাকে চিরবিদায়!।
আরব আইডল সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় বিজয়ী সঙ্গীত শিল্পী এবং ইউএনআরডব্লিউএ এর আঞ্চলিক শুভেচ্ছাদূত মোহাম্মাদ আসাফ তাকে “বিশ্বের এবং জলপাই এর কবি” বলে আখ্যায়িত করেছেনঃ
و حملنا.. جرحنا الدامي حملنا و إلى أفق وراء الغيب يدعونا..رحلنا شاعر الأرض و الزيتون #سميح_القاسم في ذمة الله.. لروحك الرحمة #غزة_تقاوم
— محمد عساف (@MohammedAssaf89) August 19, 2014
আর আমরা বয়ে নিয়ে চলেছি… আমাদের রক্তাক্ত ক্ষতগুলো। অজানা দিগবলয়ের পিছনে যা আছে, যা আমাদের ডাকছে তাঁর দিকে আমরা বয়ে নিয়ে চলেছি। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, বিশ্বের কবি এবং জলপাইয়ের কবি।
ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় বিরজেইত তাকে “বিপ্লবের কবি” উপাধি দিয়েছেনঃ
تنعى أسرة #جامعة_بيرزيت شاعر الثورة الفلسطيني #سميح_القاسم، لروحه السلام.الصورة من أرشيف الجامعة خلال زيارة له في2007 pic.twitter.com/pmMXfV6Afh
— Birzeit University (@BirzeitUniv) August 20, 2014
ফিলিস্তিনি বিপ্লবের কবির জন্য বিরজেইত পরিবার শোক প্রকাশ করছে। তাঁর আত্মা যেন শান্তি পান। তিনি ২০০৭ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তখন তোলা ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভ থেকে নেয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনের অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক, সক্রিয় কর্মী এবং ব্লগার তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর লেখা কবিতাগুলোর কিছু কিছু অংশ টুইট করেছেন।
তিনি নিজেই নিজের নাম দিয়েছেন “ইসরায়েলের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক হুমকি, একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক”। তিনি ফিলিস্তিনপন্থী নামের আওতায় চলে এসেছেন। এই ব্লগার তাঁর লেখা কবিগুলোর একটি এখানে শেয়ার করেছেনঃ
يا شعبي حيٌّ حيٌّ أنت .. يَدُك المرفوعة في وجه الظالم راية جيل يمضي و هو يهز الجيل القادم: ” قاومتُ .. فقاوم ! ” #سميح_القاسم #فلسطين
— F. (@Palestinianism) August 19, 2014
আমার দেশের জনগণ,
জীবিত, তোমরা জীবিত।
অবিচারের মুখে তোমরা চপেটাঘাত কর।
ছেড়ে চলে যাওয়া প্রজন্মের জন্য একটি স্মারক,
আগামী প্রজন্মকে কাঁপুনি দিয়ে বলছিঃ
আমি প্রতিরোধ করেছি। এখন প্রতিরোধ করার পালা তোমাদের!
আমরা তাকে গত সপ্তাহে লেখা তাঁর এই কবিতাটির জন্য স্মরণ করবোঃ
মৃত্যু, আমি তোমাকে ভালোবাসি না
তবে আমি তোমাকে ভয়ও পাই না
আর আমি জানি আমার দেহ তোমার বিছানা হবে
আর আমার আত্মা হবে তোমার বিছানার চাদর
আমি জানি আমার জন্য তোমার তীর সরু হয়ে আসছে
মৃত্যু, আমি তোমাকে ভালোবাসি না
তবে তোমাকে ভয়ও পাই না