রাশিয়ান ইন্টারনেট জগতের দানব ইয়ানডেক্সের এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, রাশিয়ান ভিকনতাকতে এবং ওদনকলাসনিকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউক্রেনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাজারকে শাসন করছে। ওয়েবসাইটের ইউক্রেন বিভাগ প্রসঙ্গে এটির বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদনের নতুন প্রকাশিত সংস্করণে ইয়ানডেক্স বলছে, এ বছর গ্রীষ্ম পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪০ মিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক ইউক্রেনিয়ান একাউন্ট ভিকনতাকতে, ওদনকলাসনিকি, ফেসবুক এবং টুইটারে রেজিস্ট্রেশন করেছে।
ভিকনতাকতে ২৭ মিলিয়ন ইউক্রেনিয়ান ব্যবহারকারী নিয়ে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। ওদনকলাসনিকি ১১ মিলিয়ন ইউক্রেনিয়ান ব্যবহারকারী নিয়ে তালিকাটিতে গর্বের সাথে অবস্থান করছে। রেকর্ড অনুযায়ী ইউক্রেনের ৩.২ মিলিয়ন ব্যবহারকারী ইউক্রেন থেকে ফেসবুক ব্যবহার করেন। এই সংখ্যা ২০১২ সালের গ্রীষ্মের চেয়েও এক মিলিয়ন বেশি। ইয়ানডেক্সের ব্লগ নিরীক্ষণ অনুযায়ী, টুইটারে ৪,৩০,০০০ টি ইউক্রেনিয় একাউন্ট রয়েছে। টুইটারের ইউক্রেন ভিত্তিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১.৫ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ইউরোমাইদান প্রতিবাদের সময় থেকে উল্লেখযোগ্য হারে এর ব্যবহার বেড়েছে। ইউরোমাইদান প্রতিবাদে টুইটার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
ইউক্রেনিয়ান তরুণরাই মূলত ভিকনতাকতে ব্যবহার করে থাকেনঃ এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ২৫ বা তাঁর চেয়েও আরও কম। ওদনকলাসনিকি’র এক তৃতীয়াংশ ইউক্রেনিয়ান ব্যবহারকারীর বয়স ২৬ থেকে ৩৫ বছরের মাঝে। তুলনা মূলকভাবে একটু প্রাপ্ত বয়স্করা এই সাইটটি ব্যবহার করে থাকেন।
ইউক্রেনে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাগুলো ব্যাপকভাবে টুইটার ব্যবহারকারীদের ভিত্তিকে নাড়া দিয়েছেঃ ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের আগে প্রতি মাসে টুইটারে ৬,০০০ থেকে ৭,০০০ নতুন একাউন্ট তৈরি হত। তবে ডিসেম্বর মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬,০০০। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বিপুল সংখ্যক অর্থাৎ ৫৫,০০০ নতুন টুইটার একাউন্ট তৈরি হয়েছে।
ইউরোময়দান প্রতিবাদের সময়ে ইউক্রেনিয়ানিরা প্রতিদিন গড়ে ১৩০,০০০ টি পোস্ট টুইট করত। তুলনামূলকভাবে ২০১২ সালে প্রতিদিন গড়ে ৯০,০০০ পোস্ট টুইট করা হত। কিয়েভ শহরতলিতে কয়েক ডজন প্রতিবাদকারী যেখানে তাদের জীবন হারিয়েছেন, সেখানে কেবল ফেব্রুয়ারি মাসেই ২০ জন মারা গেছেন। এ ঘটনায় ২৪০,০০০ টুইট প্রকাশিত হয়েছিল।
ইউরোময়দান প্রতিবাদ ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যাওয়ার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা দানা বেঁধে উঠার সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। যেমন, ক্রিমিয়া সংযুক্তি এবং ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যকার তথ্য যুদ্ধ একই সাথে ঘটে গেল। ইউক্রেনিয়ান সংগ্রামে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা, রাশিয়ার মিথ্যা প্রচারণা এবং নিজ উদ্দেশ্য সাধনে এসব মিথ্যা প্রচারণা (অনলাইনে দেশপ্রেম বিষয়ে ইউক্রেনিয়ান প্রতিক্রিয়া মঞ্চস্থ করার প্রচেষ্টা) নিয়ে অসন্তোষ, শেয়ার করা, খোলসমুক্ত করা এবং সংঘাতময় এলাকাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য সমূহের সত্যতা যাচাই করা ইত্যাদি সকল বিষয় ইউক্রেনিয়ানদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত রেখেছে।
বাক স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের চর্চা করতে একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম দেয়া এবং ব্যবহারকারীদের বিকাশ নিশ্চিত করে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সকল পক্ষের নাগরিকদের কাছে এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামী বছরের গবেষণাতে হয়তবা দেখা যাবে, রাশিয়ার প্রতি জনসাধারণের আবেগ কমে গেছে। কারণ ইন্টারনেট সম্পর্কে রাশিয়ার অত্যন্ত কঠোর ও নির্মম নতুন নিয়মনীতি। এতে করে রুশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ইউক্রেনে বর্তমানে যে বিশ্বাস ও জনপ্রিয়তা উপভোগ করছে তাতে হয়তবা আগামী বছর ভাঙন ধরবে।