- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

থাইল্যান্ডে একই ব্যক্তি রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল তিনটি পদে অধিষ্ঠিত

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, থাইল্যান্ড, নাগরিক মাধ্যম, রাজনীতি
National Council for Peace and Order leader Gen. Prayuth Chan-Ocha during a ceremony for Queen Sirikit's 82nd birthday on Aug. 12, 2014. Photo by John Vincent. Copyright Demotix [1]

রানী সিরিকিতের ৮২ তম জন্মদিন উপলক্ষে গত ১২ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে জাতীয় শান্তি শৃঙ্খলা কাউন্সিল দলের নেতা জেনারেল প্রয়ুথ চ্যান-ওচা। ছবিঃ জন ভিন্সেন্ট। কপিরাইট ডেমোটিক্স।  

রাজকীয় থাই সেনাবাহিনীর কমান্ডার প্রয়ুথ চান-ওচা গত মে মাসে থাইল্যান্ডে এক সামরিক অভ্যুত্থান [2] মঞ্চস্থ করেন। তিনি জাতীয় শান্তি শৃঙ্খলা কাউন্সিল (এনসিপিও) নামে একটি সরকার গঠন করেন। জাতীয় আইন পরিষদ তাকে থাইল্যান্ডের ২৯তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত [3]করেছে। এনসিপিও দলটির চেয়ারম্যানও প্রয়ুথ।  

যারা প্রয়ুথকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে ভোট দিয়েছেন তাদেরকে এনসিপিও দলটি আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এসব আসনে অন্য কোন মনোনীত প্রার্থী ছিল না।

শাসন কাজের কোন অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও প্রয়ুথ এনসিপিও দলের প্রধান হিসেবে কয়েকটি গুরুত্ব পূর্ণ পদের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। তিনি নিজেকে বিনিয়োগ বোর্ড, জাতীয় জ্বালানী নীতি নির্ধারন কমিটি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক জোন উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।

নতুন প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রয়ুথ সততার সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রয়ুথের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী গত মে মাসে একটি অভ্যুত্থান পরিচালনা করে। দেশটির প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মাঝে সহিংস দাঙ্গার অবসান ঘটাতে এ হুকুম জারি করার হয়। সেনাবাহিনী সংবিধান বাতিল করে দিয়েছে, কয়েক শত রাজনীতিবিদকে কারাদন্ড প্রদান করেছে এবং প্রধান প্রচার মাধ্যম কেন্দ্রের সংবাদ প্রচারকারী কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন এবং পাঁচজন বা তাঁর বেশি লোকের একত্রে জমায়েত বেআইনি ঘোষণা করেছে।

প্রয়ুথ কথা দিয়েছেন, রাজনৈতিক এবং নিবার্চন ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার কাজ বাস্তবায়নের পরই কেবল তিনি কোন বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। দেশটিতে আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে এনসিপিও ইতোমধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানের খসড়া [7]তৈরি করেছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, শুধুমাত্র সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ব্যাপক ভূমিকা পালনকে বৈধতা দিয়ে এ খসড়া সংবিধান তৈরি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেয়া প্রথম বক্তৃতায় প্রয়ুথ দেশের মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধি [8] পুনরায় ফিরিয়ে আনার শপথ করেছেনঃ  [9]

জনগণের কাছে আমাকে কথা দিতে দিন যে আমার কর্তব্য পালনের প্রতি আমি নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করব। আমি সততা এবং স্বচ্ছতার সাথে সরকার পরিচালনা করব। জনগণের সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে আমি জাতীয় স্বার্থ এবং জনগণকে অগ্রগন্য বিষয় হিসেবে বহাল রাখব…  

থাইল্যান্ডের রাজাও ইতোমধ্যে প্রয়ুথকে সমর্থন দিয়েছেন [10]। দেশের জনগণের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় এবং ভালোবাসার ব্যক্তি হওয়ায় রাজা সেনাবাহিনী প্রধানের কথা ও কাজের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে দিতে তাঁর প্রতি সমর্থন জানালেন। 

সাংবাদিক প্রাভিত রোজানাফরুক টুইটারে জোর দিয়ে বলেছেন, প্রয়ুথ একজন অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। 

আমরা এখন প্রয়ুথকে কি কলে ডাকব ? জান্তা নেতা, সেনাবাহিনী প্রধান ও থাইল্যান্ডের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রয়ুথ চান-ওচা। 

এখন থাইল্যান্ডে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি কে? ক) সেনাবাহিনী প্রধান খ) সামরিক শাসক চক্র নেতা গ) নতুন প্রধানমন্ত্রী.

আমলাতন্ত্রের উপর প্রয়ুথের স্বৈরাচারী প্রভাব সম্প্রতি প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। তিনি দেশের জন্য ২০১৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার পর কেউ যখন তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করার সাহস দেখায়নি তখনই প্রমানিত হয়েছে যে আমলাতন্ত্রের প্রতি তিনি কতোটা স্বৈরাচারী ভূমিকা পালন করেনঃ

জান্তা নেতা, জেনারেল প্রয়ুথ চান-ওচা সামরিকভাবে নিযুক্ত সংসদে কেউ কি গতকাল তার সাথে ভিন্নমতের ছিল কিনা তা জিজ্ঞাসা করেছেন, অবশ্যই সেখানে কেউ অসম্মতি হওয়ার সাহস দেখাননি। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা আভিসিত ভেজ্জাজিভা প্রয়ুথের ক্যু’কে ১৯৫৭ সালের ক্যু’এর সাথে তুলনা করেছেন। ১৯৫৭ সালের ক্যু’টিও সরকারের সকল ক্ষমতাকে চরমভাবে কুক্ষিগত করে নিয়েছিল [16]। এরপর থাই শিক্ষার্থী ক্লডিও সোপরানজেট্টি লিখেছেন [17], গত দুই দশকে বিভিন্ন সময়ে ক্যু পরিচালনাকারী নেতারা যেসব কৌশল সাধারনত অবলম্বন করেছিলেন প্রয়ুথের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো সেগুলোর চেয়ে একটু ব্যতিক্রমঃ 

আমি মনে করি, প্রয়ুথ জনগণের সমর্থনকে সাথে নিয়ে একটি চমৎকার ধরনের সরকার গঠন করার ব্যক্তিগত চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমার ধারণা, তিনি এমন একটি সরকার গঠন করতে চাচ্ছেন যা গত ২০ বছরে ক্ষমতায় থাকা বিভিন্ন বিরোধীদলীয় সরকারের কেউই অর্জন করতে পারেননি।  

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড এডামস প্রয়ুথের পদের সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে “মানবাধিকারের জন্য এক অন্ধকার দিন” বলে অভিহিত করেছেন [18]। তিনি বলেছেন, “যেহেতু জেনারেল প্রয়ুথ প্রধানমন্ত্রী এবং জান্তা প্রধান উভয় পদই দখল করে আছেন, তাই তিনি কোন রকম জবাবদিহিতা ছাড়াই বিস্তৃত ক্ষমতার অধিকারী হতে এবং তা ব্যবহার করতে পারেন”।

প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে পদ গ্রহণ করা সত্ত্বেও প্রয়ুথ ঘোষণা দিয়েছেন যে থাইল্যান্ডে মার্শাল ল বহাল থাকবে। তিনি ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে নির্বাচনের দিন ধার্য করেছেন। কিন্তু এই তারিখ এখনও পরীক্ষামূলক। কারন রাজনৈতিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রথমত সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠা করা মাপকাঠি অনুসরণ করা হবে।