অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এবং ব্লগার ফ্লোরিয়ান বিবার সম্প্রতি মেসেডোনিয়ার আন্ত-সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। তিনি “বিপদজনক প্রান্তে মেসেডোনিয়া” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মেসেডোনিয়াতে প্রাথমিকভাবে কয়েক দফা সহিংস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটেছে। যদিও পরে তা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে রূপ নেয়। বিবারের প্রবন্ধে তিনি একটি জানালা দিয়ে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া এসব দাঙ্গার পরিণাম কি হতে পারে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন।
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার কারণে প্রতিবাদ কর্মসূচীগুলোর সূচনা হয়। আর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার মূল কারন ছিল ছয় জন আলবেনীয় বংশোদ্ভূত মেসেডোনিয়ান লোককে শাস্তি প্রদান করা। কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, ২০১২ সালে পাঁচজন লোকের উপর “সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে হত্যা” করার অভিযোগে তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। বিবার তাঁর প্রবন্ধে জোর দিয়ে বলেছেনঃ
কর্তৃত্ব পরায়ণ প্রবণতা, সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠন এবং দুইটি বৃহত্তম সম্প্রদায়কে পৃথককরণ ইত্যাদি নানা বিষয় একত্রিত হয়ে সহিংসতার আগুন জ্বলে উঠেছে। এমনকি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা প্রতিবাদের আগুনের আঁচ যদি কমে যায়, তবুও মেসেডোনিয়া সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা একটি সত্যিকার ঝুঁকি হিসেবেই থেকে যায়। উল্লেখ্য যে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার একটি অংশ হচ্ছে বর্তমান মেসেডোনিয়া।
এ অঞ্চলের নীতি নির্ধারকেরা বিক্ষিপ্ত এসব ঘটনাকে উস্কানিমূলক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। যার জন্য প্রায়ই তাদের বক্তব্যকে লোকে ঘৃনা করে। সুশীল সমাজের বেশ কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে তাঁরা বিভিন্ন মিথ্যা রটিয়েছে। মূলত জনগণের মাঝে বিদেশিদের সম্বন্ধে অহেতুক ভয় বা ঘৃণা কাজ করে থাকে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে জনগণের এই ভয়কে ব্যবহার না করতে সংস্থাগুলো জনসমক্ষে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছে। সংস্থাগুলোর মতে, দেশের অন্যান্য বিষয় যেমন সরকারের দুর্নীতি বিষয়ে এসব নীতি নির্ধারকেরা দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করে থাকেন।
স্থানীয় রাজনীতি বিষয়ক বিশ্লেষক মারসেল বিলালি মেসেডোনিয়ার সমস্যাগুলো নিয়ে একটি অস্পষ্ট চিত্র অংকন করেছেন। ২০১৪ সালে অহরিদ নির্মাণ কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরের বর্ষপূর্তির পরপরই মেসেডোনিয়ার সরকার এবং দেশটির আলবেনীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিদের মাঝে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’র সশস্ত্র জঙ্গি এবং মেসেডোনিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যকার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে ২০০১ সালে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়। দেশটিতে আলবেনীয় উপজাতিদের অধিকার উন্নয়নের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। বিলালি যেমনটি নির্দেশ করেছেনঃ
অহরিদ নির্মাণ কাঠামো চুক্তি সাফল্যের সাথেই ২০০১ সালের আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছে। তবে আগুন নিভে গেলেও ১৩ বছর পর এটি সহনশীলতা, একসাথে বেঁচে থাকা, নাগরিক সমতা, সমান সুযোগ, গণতান্ত্রিক শাসন, আইনের শাসন এবং সাধারণ উন্নয়নের মত শব্দগুলোর কোন বাস্তব চিত্র তৈরি করতে পারেনি। পক্ষান্তরে আমাদের আরও অধঃপতন হয়েছে। কারন মীমাংসা দীর্ঘায়িত করার পরিবর্তে আমরা পরস্পরের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করেছি। সহনশীলতা না দেখিয়ে বরং বাসে এবং রাজপথে মারামারি করেছি। একসাথে বসবাসের পরিবর্তে আমরা একে অন্যের বাড়িঘর এবং বারগুলো ধ্বংস করেছি। আইনের শাসনের জায়গায় আমরা দলগত শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। জনসাধারণের উন্নয়ন করার পরিবর্তে আমরা বিশ্বের দরিদ্র দেশের তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করেছি। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তে আমরা দলের প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট মামলার রায় দিয়েছি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিচার করেছি। সবকিছু যেন এভাবেই চলতে থাকবে। শুধুমাত্র সুসংগঠিত অপরাধই উপরের দিকে যায়। আমরা এমন একটি সমাজ তৈরি করেছি যেখানে আইন, নৈতিকতা, পর্দা এবং লজ্জা বলে কিছু নেই।