গ্রাহকদের প্রকৃত নাম নিবন্ধন চেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং এ্যাপ উইচ্যাটের লাগাম টেনে ধরেছে চীনা কর্তৃপক্ষ

WeChat logo. Photo by Flickr user ldjjj. CC BY-NC-ND 2.0

উইচ্যাট লোগো। ছবিঃ ফ্লিকার ব্যবহারকারী লিজ। CC BY-NC-ND 2.0

চীনের ইন্টারনেট কর্তৃপক্ষ একটি নতুন নিয়ম অনুমোদন দিয়ে নির্দেশ জারি করেছে। এই নতুন নিয়মে সকল মেসেজিং এ্যাপ কোম্পানির সেবা পেতে ব্যবহারকারীদের প্রকৃত নাম নিবন্ধন করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং এ্যাপ উইচ্যাটকে লক্ষ্য করেই নিয়মে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় ইন্টারনেট তথ্য অধিদপ্তর থেকে নিয়মটি সম্পর্কে গত ৭ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে একটি ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণায় বলা হয়েছে, ব্যবহারকারীরা তাদের জনসম্মুখে দেখানো প্রোফাইলটিতে ডাকনাম ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এই সেবা পেতে সাইন আপ করার সময় তাদেরকে তাদের আসল নাম উল্লেখ করতে হবে। অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, “গণ তথ্য সেবার সুষ্ঠু এবং যথাযথ উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে… জনগণের বৈধ অধিকার এবং নাগরিক, বৈধ ব্যক্তি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে… জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের স্বার্থের যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ করতে…” নিয়মটি করা হয়েছে।

নতুন নিয়মটিতে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র দাপ্তরিক প্রচার মাধ্যম একাউন্ট থেকে রাজনৈতিক খবরাখবর পোস্ট করা যাবে; যদি কোন ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে কেউ রাজনৈতিক খবরাখবর পোস্ট করতে চান, তবে তাকে বিশেষ অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে। উইচ্যাটের পাবলিক একাউন্টগুলো সাধারনত কোন ব্যক্তি বা কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের সাথে খবরাখবর শেয়ার করতে ব্যবহার করে থাকেন। উইচ্যাটের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি চীনা জনগণের কাছে খবরের অন্যতম একটি উৎসে পরিণত হয়েছে।

২০১২ সাল থেকে উইচ্যাট জনপ্রিয় হতে শুরু করে। বর্তমানে এটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০০ মিলিয়ন। এ বছরের শুরুতে উইচ্যাটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সময় ১ শতেরও বেশি ব্যক্তিগত একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

উইচ্যাটে কয়েকটি ধাপের গোপনীয়তা সেটিংস রয়েছে। এগুলোতে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির চ্যাট থেকে শুরু করে উম্নুক্ত গোষ্ঠী, জনসম্মুখে মঞ্চ পর্যন্ত সব ধরনের গোপনীয়তা সেটিংস রয়েছে। এগুলোতে লোকেরা তাদের বন্ধু বান্ধবের দেয়া খবরাখবর দেখতে পারেন। গুপ্তচর বৃত্তি চর্চার জন্য উইচ্যাট বেশ কুখ্যাত হওয়া সত্ত্বেও অনেক চীনা সক্রিয় কর্মীই যোগাযোগের জন্য এই টুলটি এখনও ব্যবহার করে থাকেন। কারন এখানে কয়েক স্তরের গোপনীয়তা রক্ষার (অথবা গোপনীয়তা রক্ষার একটি অনুভূতি অন্তত পাওয়া যায়) সুযোগ দেয়া হয়। আর এধরনের অন্যান্য সেবা যেমন সিনা উইবোতে এ রকম সুযোগ পাওয়া যায় না।

কেউ কেউ গতকালের এই পরিবর্তনটিকে গোপনীয়তার লঙ্ঘন বলে মনে করেন। আর অনেকেই এ বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন যে এই নিয়মটি ব্যবহার করে যারা সরকারের সমালোচনা মূলক বিভিন্ন খবর ছড়াতে সাহায্য করেন, সেসব ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করা যাবে। বেইজিং নিউজ সংবাদপত্রটি রাষ্ট্রীয় ইন্টারনেট তথ্য অধিদপ্তরের এক কর্তৃপক্ষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তিনি বলেছেন, “নিয়মটি নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা রক্ষা করতে সাহায্য করবে”।

উইচ্যাটের স্বত্বাধিকারী টেনসেন্ট কোম্পানি ২০১৪ সালের মে মাস থেকে ব্যক্তিগত একাউন্টের পেছনে অবস্থানকারী ব্যবহারকারীদের প্রকৃত পরিচয়ের সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কাজে তারা ব্যক্তিগত একাউন্ট মালিকদের তাদের পরিচয় পত্র এবং মোবাইল ফোন সংক্রান্ত তথ্য আপলোড করতে বাধ্য করেছে। গ্রাহকের কাছে প্রতিটি বার্তা পাঠানোর আগে ব্যক্তিগত একাউন্ট চালককে অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিগত উইচ্যাট কোড নম্বর স্ক্যান করতে হবে। যারাই কোন “অবৈধ” বার্তা ছড়াতে চেষ্টা করবে টেনসেন্ট এভাবেই তাদেরকে খুঁজে বের করবে।  

টুইটারের মতো সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিনা উইবো’র সম্পর্কেও গত বছর একই ধরনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যদিও নিয়মটির বাস্তবায়নে বাঁধা দিতে লোকেরা ইতোমধ্যে কিছু উপায় বের করে ফেলেছেন। সিনা উইবো’র ব্যক্তিগত একাউন্টগুলোর উপর ধারাবাহিক শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহনের একটি শীতল প্রভাব সারা দেশ জুড়ে পড়েছে। মোবাইল এ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে নতুন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়ায় উইচ্যাটে কোন স্পর্শকাতর বিষয়ে কিছু পোস্ট করার আগে লোকেরা সম্ভবত তাদের লেখা শব্দগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নিচ্ছেন। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .