ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রী মাহমুদ ভেইজি গত ২১ আগস্ট তারিখে একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেছেন, “অতীতে যেসব ব্যাপারে ফিল্টার করা হত, রুহানি সরকার সে সব কিছু উন্মুক্ত করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।” ফেসবুক ও টুইটারের মত জনপ্রিয় সামাজিক মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলোকে ফিল্টার না করার জন্য ইরানের মিডিয়া এবং সরকারের মধ্যে আলোচনা ও বিতর্কের দীর্ঘ এক বছরেরও বেশী সময় পরে ভেইজির এই বিবৃতি এলো।
ইরানে শীঘ্রই ফেসবুক ও টুইটারের ব্যবহার উন্মুক্ত করা দেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ভেইজি বলেন, “এই মুহূর্তে প্রাইভেট কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাগরিকদের ব্যবহার করার জন্য দেশের মধ্যে সামাজিক মিডিয়া নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করা উচিত।” প্রসঙ্গত, ইরানে ফেসবুক ও টুইটার উভয়ের ব্যবহারই নিষিদ্ধ রয়েছে।
ইতোমধ্যে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বাইরে ভেইজি ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেছেন, “এই দেশের মানুষ যে বিষয়গুলোর বিরোধিতা করে সরকার সেগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করছে এবং একটি ইসলামী জাতি হিসেবে আমাদের পরিবার নৈতিক বিষয়গুলোতে বিশেষ মনোযোগ দেয়। তারা এই অ অনুমোদিত ওয়েবসাইটগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহারে খুশি নয়।” সিদ্ধান্তটি অশোভন বিষয়বস্তু নির্ধারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচার ব্যবস্থা কমিটির (সিসিডিওসি) হাতেও পৌঁছে গেছে।
ভেইজির এই বিবৃতিটি ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের শিথিলতা সম্পর্কে দেওয়া প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির প্রতিশ্রুতিশীল বিবৃতির ঠিক বিপরীত। রুহানি তার নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ইরানের ইন্টারনেট ফিল্টারিঙের ব্যাপারে ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন। ২০১৩ সালের জুন মাসে তিনি বলেছিলেন: “আমরা এমন একটি বিশ্বের মধ্যে বসবাস করি, যেখানে তথ্যের সীমিতকরন অসম্ভব একটা ব্যাপার। যুবারা প্রতিনিয়ত তথ্যের গোলাবর্ষণের সম্মুখীন হয় এবং এটাকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে হলে আমাদের প্রস্তুত থাকা আবশ্যক।”
২০১৪ সালের মে মাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক একটি সম্মেলনে রুহানি এই অনুভূতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি সেখানে ফেসবুক ও টুইটারের মত সাইটগুলোতে ইরানের কণ্ঠ থাকার গুরুত্ব উল্লেখ করে বক্তৃতা করেন।
২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসে আল জাজিরার কাছে দেওয়া একটি ইংরেজি সাক্ষাত্কারে রুহানির সংস্কৃতি মন্ত্রী আলী জান্নাতি বলেছিলেন, “সব ইরানিরাই ফেসবুক ব্যবহার করেন। আমাদের পরিসংখ্যান বলছে, এই সংখ্যা প্রায় ৪ মিলিয়ন, তাই খুব শীঘ্রই বা কাছাকাছি সময়ে এটার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।” কিন্তু রুহানির মন্ত্রিসভার মধ্যে এ ব্যাপারে তখনই অসঙ্গতি দেখা দেয়, যখন গত জানুয়ারী মাসে সিসিডিওসি এর একটি মিটিঙে সামাজিক নেটওয়ার্কের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতাকে নির্দেশ করা হয়। সেই সময় ভেইজি বলেছিলেন, কমিটি “ধর্মীয় বিরোধী এবং অনৈতিক সাইট” অবরোধে একমত হয়েছে, কিন্তু যেগুলো “দুর্নীতিকে প্ররোচিত করে না” এবং জনগণের জ্ঞান বৃদ্ধি করে সেগুলো অবাধে প্রবেশযোগ্য হবে।
এই মুহূর্তে, রুহানি সরকার তথ্যের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিতকরণের সুসঙ্গত কোন নীতি গ্রহণ করেছে বলে মনে হচ্ছে না। দেশটিতে ফেসবুক ফিল্টার করার এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং তার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য, বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করেন। এমনকি তাঁরা ইরানে সবচেয়ে কাণ্ডজ্ঞান এবং জনপ্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্যতম।