- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও ক্রমাগত ব্যারেল বোমা হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চলছে সিরিয়ায়

বিষয়বস্তু: সিরিয়া, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবতামূলক কার্যক্রম, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ
A screenshot of a YouTube video by  SyrianZero reportedly showing barrel bombs dropped by the Assad regime. [1]

সিরিয়ানজিরোর আপলোড করা ইউটিউব ভিডিওর স্ক্রিনশট, যেখানে আসাদ সরকারের ব্যারেল বোমা নিক্ষেপের চিত্র দেখা যাচ্ছে। 

সারা বিশ্বের মনোযোগ যখন গাজার দিকে, তখন সিরিয়াতে ক্রমাগতভাবে হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। সেখানে আবাসিক এলাকাগুলোতে সরকার ব্যারেল বোমা [2]নিক্ষেপ করছে। যারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনতন্ত্রকে উচ্ছেদ করতে চায়, তাদের লক্ষ্য করে সরকারি বাহিনী এই বোমা হামলা চালাচ্ছে।

তেলের বড় বড় ড্রাম, গ্যাসের সিলিন্ডার এবং বিস্ফোরক দ্রব্য এবং লোহার টুকরা দিয়ে ভর্তি পানির ট্যাংক দিয়ে এই ত্রুটিপূর্ণ ব্যারেল বোমাগুলো তৈরি করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির গৃহযুদ্ধে এই বোমাগুলো বেশ ধ্বংসাত্মক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাসায় বানানো অস্ত্রটি সিরিয়া আবিষ্কার করেনি, তবে সিরিয়ার সরকার বার বার ব্যবহার করতে শুরু করার [3] প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় পরে শুধুমাত্র ব্যারেল বোমা [2] শব্দটি ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে সিরিয়ার নামে উইকিপিডিয়ার একটি অংশে পরিণত হয়েছে।

সিরিয়া ভিত্তিক নাগরিক প্রতিবেদকদের একটি দল হচ্ছে ইনাব-বালাদি [4]। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে দলটি বলেছিল, দারায়া শহরে [5] এক সপ্তাহে ১০০ টি ব্যারেল বোমা [6] নিক্ষেপ করা হয়েছে। এসব বোমা হামলায় ১৮ জন লোক মারা গেছেন। 

দারায়ার স্থানীয় বিপ্লবী সংবাদপত্র ইনাব বালাদি’র তথ্যনুসারে, গত এক সপ্তাহে দারায়ায় ১০০ টি ব্যারেল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে।

সে মাসের শেষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল ব্যারেল বোমার ব্যবহার বন্ধ করতে দ্বন্দ্বে লিপ্ত সকল পক্ষকে ডেকে একটি প্রস্তাব গ্রহণ [10] করে। তবে সিরিয়ান সরকার সে প্রস্তাব গ্রাহ্য করেনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ [11] গত ৩০ জুলাইয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা এ পর্যন্ত আলেপ্পো শহরের বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহী গ্রুপের চালানো একই রকম ব্যারেল বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫০ টি স্থান চিহ্নিত করেছে। বোমা হামলা চালানোর আগের এবং পরের বেশ কিছু পারস্পরিকভাবে সক্রিয় ছবি তাদের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।  

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপিয়ান প্রচার মাধ্যমের পরিচালক এন্ড্রু স্ট্রোয়েলেইন বিভিন্ন স্থানকে চিহ্নিত করে একটি মানচিত্র টুইট করেছেন। সংস্থাটি বলছে, মানচিত্রে দেখানো এসব স্থানে সরকার ব্যারেল বোমা হামলা চালিয়েছে। সিরিয়াতে ব্যারেল বোমা আক্রমণের [3]প্রায় ৮০ টি দলিল দেখাতে উইকিপিডিয়াতে অর্থবহ একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। 

UNSC কর্তৃক বাশার সরকারের চালানো ব্যারেল বোমার নথি: ৬৫০ টি নতুন প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত সাইট নথিভুক্ত

প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিশ্বস্ত বাহিনী এবং তাঁর শাসন বিরোধী অন্যান্য দলগুলোর দলাদলির মাঝে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হাতে নেয়ার এই রক্তাক্ত যুদ্ধ [16] এই মার্চ মাসে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করল। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭০ হাজার লোক [17] নিহত হয়েছে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরব বসন্ত প্রতিবাদের ঢেউ এসে লাগার সময় সিরিয়ায় সরকার বিরোধী এই আন্দোলন [18] শুরু হয়েছিল।    

জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো নাগরিকদের উপর নির্বিচার আক্রমণ শুরু করার জন্য সরকারকে দায়ি করেছে। বিদ্রোহী দলগুলোকেও একই অভিযোগে দোষী করা হয়েছে। কিন্তু আসাদ সরকার বেশ অভাবনীয় উপায়ে ব্যারেল বোমা ব্যবহার করে যাচ্ছে।

ব্রাউন মোসেস [19] ব্লগটি সিরিয়ান গৃহযুদ্ধটিকে বেশ কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। টেসলা ল্যাবরেটরি ইনকর্পোরেশনের ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড এম. লয়েড [20] ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যারেল বোমা প্রযুক্তিটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। তিনি ব্যাপক পরিচিত ব্লগ ব্রাউন মোসেসে পোস্ট করেছেনঃ 

[…] সিরিয়ান ব্যারেল বোমা কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সিরিয়ার শহুরে এলাকাগুলোতে স্বল্প খরচে মারাত্মক আঘাত হানা। 

[…] আগে ব্যবহৃত এসব ব্যারেল বোমার ওজন প্রায় ১০০ থেকে ৩০০ পাউন্ডের (৪৫ থেকে ১৪০ কেজি) কাছাকাছি। আর ব্যারেল বোমাতে আগুন জ্বালাতে প্রদীপের সলতে ব্যবহার করা হয়েছে। একটি চুরুট ব্যবহার করে সৈনিকেরা বোমার সলতেতে আগুন ধরানোর কাজটি করে থাকেন। কেননা ম্যাচের কাঠি বা লাইটারের আগুন বাতাসে নিভে যেতে পারে।

[…] একবার আক্রমণ চালানো এই বোমাটির সম্ভাব্য সফলতা শতকরা ৩৭.৫ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে, সফলভাবে একটি বিস্ফোরণ ঘটাতে হলে পাঁচটি বোমা প্রয়োজন।

[…] গত বছরে সিরিয়ান সরকার ব্যারেল বোমাগুলোর আকার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে। একেকটি বোমাতে বিস্ফোরকের পরিমাণ ১০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ২০০০ পাউন্ড (প্রায় ৯০০ কেজি) করা হয়েছে। 

সিরিয়ানজিরো গ্রুপটি ইউটিউবে নিচের ভিডিওটি পোস্ট করেছে। ভিডিওটি আরবিতে অনূদিত এবং এতে ইংরেজী ভাষায় সংলাপ মুদ্রিত করা আছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে আসাদের একটি হেলিকপ্টার যখন দারায়া শহরে একটি ব্যারেল বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তখন সেই মুহূর্তটি ধারণ করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়। পাথরের নিচে চাপা পরা একজন লোককে উদ্ধার করার কাজ ভিডিওটির একটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছে। আরেকটি দৃশ্যে বিদ্রোহীদেরকে আসাদের প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিতে দেখা যায়।[সতর্কবানীঃ এটি একটি জীবন্ত ভিডিও, দর্শকদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার উপদেশ দেয়া হল।]