গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলকে হেগ শহরের আন্তর্জাতিক অপরাধী আদালতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে সারা বিশ্বের কয়েক হাজার লোক ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি আইন মন্ত্রী সালিম আল সাক্কা এবং গাজা আদালতের রাষ্ট্র পক্ষের কৌঁসুলি ইসমাইল জাবর প্যারিস ভিত্তিক একজন আইনজীবীর মাধ্যমে ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সকল বৈধ কার্যকলাপ শুরু করেছেন। তবে মন্তব্যকারীরা বলছেন, এটি একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। আইসিসির হয়তোবা ফিলিস্তিনের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোন অধিকার নেই। কেননা ফিলিস্তিন জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক সদস্য রাষ্ট্র মাত্র। এটি জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য দেশ নয়।
আজ ২৬শে জুলাই ইসরায়েলের মধ্যস্থিত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের উপর ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার ১৯তম দিন। এই ১৯ দিনে ইতোমধ্যে কমপক্ষে ১০০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬০০০ ফিলিস্তিনি আহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে।
গত আট ঘন্টা ধরে #আইসিসিইসরায়েল হ্যাশট্যাগটি সারাবিশ্ব জুড়ে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি এখন পর্যন্ত ৩৩৪৬০০ এরও বেশি সংখ্যক টুইটের জন্ম দিয়েছে।
ফিলিস্তিনি ডাক্তার বেলাল গাজাতে বাস করেন। তিনি তাঁর ৪০,৫০০ সংখ্যক অনুসারীদের উদ্দেশ্যে টুইট করেছেনঃ
Home targeting is the utmost form of collective punishment Gazans had to endure during the 3 wars Israel waged against #Gaza. #ICC4Israel
— Belal – Gaza (@Belalmd12) July 26, 2014
যৌথভাবে দেয়া শাস্তির সর্বোচ্চ রূপ হচ্ছে কারও বসতবাড়ি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো। #গাজা’র বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে ৩টি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, তা চলার সময়ে গাজাবাসীকে চরম দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।
যেসব ফিলিস্তিনি লোকজন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগই বেসামরিক সাধারন নাগরিক। এতে করে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সময় কি ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে এবং কি কি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে, সে সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে। ইসরায়েল বলছে, তারা হামাসকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। হামাস দলটি ২০০৭ সাল থেকে ঐ অঞ্চল শাসন করে আসছে। ইসরায়েলের দাবি, দলটি ইসরায়েলের সমগ্র সীমানা জুড়ে কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামাসের চালানো এসব হামলায় এ পর্যন্ত দুই জন ইসরায়েলি বেসামরিক লোক এবং ৩৩ জন ইসরায়েলি সেনা সদস্য নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের জাকি সাফারের টুইটারে ৩১,০০০ সংখ্যক অনুসারী আছেন। তিনি টুইট করেছেনঃ
Israel has the right 2 defend itself, they say! From who? Defenseless, harmless, & helpless civilians? #ICC4Israelpic.twitter.com/isdHA29Ic1
— لورد زاك 6092065 (@zaki_safar) July 26, 2014
তারা বলছে, নিজেদের রক্ষা করার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে!
কাদের কাছ থেকে তারা নিজেদের রক্ষা করতে চান?
আশ্রয়হীন, নিরপরাধ এবং অসহায় সাধারন ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে?
ইসরায়েলে নিক্ষেপ করা হামাসের বেশিরভাগ রকেটই দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা। অতীতের সব সময়ের চেয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আরও বেশি দূর যেতে সক্ষম। তবে ইসরায়েলের আয়রন ডোম মিসাইল ব্যবস্থার দ্বারা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর গমন পথ সরিয়ে দেয়া যায়। আর এগুলো কদাচিৎ ক্ষতি করে থাকে। ইসরায়েলের অনেকগুলো বোমা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর যেকোনটিতে তারা আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু গাজাতে কোন সাইরেন বা বোমা আশ্রয় কেন্দ্র নেই। আবাসিক বাড়িঘরের উপর চালানো এই হামলাতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বোমা নির্গম নল থেকে এক মিনিট দীর্ঘ সতর্কবানী দেয়া বোমা ব্যবহার করছে।
টুইটারে ফিলিস্তিনি সমাজ তাঁর ৩৩,১০০ অনুসারীদের বলেছেন, হাসপাতালগুলোতে চালানো হামলার জন্য ইসরায়েলকে আইসিসি’র বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিৎঃ
Beit Hanoun hospital after being shelled yesterday. #GazaUnderAttack#AJAGAZA#ICC4Israelpic.twitter.com/iauqswLtJm
— Palestine Social (@PalestineSocial) July 26, 2014
গতকাল বোমা বর্ষণের পর বেইত হানুন হাসপাতাল।
বাহরাইনি ডাক্তার নাবিল তাম্মামের টুইটারে ২০,৪০০ সংখ্যক অনুসারী আছেন। তিনিও এই প্রচারাভিযানের সাথে গলা মিলিয়ে বলেছেনঃ
Attacking medical ambulance & staff in #Gaza necessitate the #ICC4Israel#PalestineUnderAttack#MedicalNeutralitypic.twitter.com/YzNicZbKBb
— Nabeel H. Tammam (@ntammam) July 26, 2014
#গাজায় মেডিক্যাল অ্যাম্বুলেন্স ও কর্মীদের উপর আক্রমণ।
চিকিৎসা যন্ত্রপাতি এবং ঔষধহীন অবস্থায় প্রচুর লোকের চিকিৎসা করতে কাজ করে যাওয়া গাজার হাসপাতালগুলোতে আরেকটি সমস্যা আছে। আর তা হচ্ছে, আক্রমণ চলাকালীন ইসরায়েল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা করেছেঃ
গাজার একটি হাসপাতাল একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি শিশু হাসপাতাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও আরও ছয়টি হাসপাতাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারজন ডাক্তার নিহত এবং ১৪ জন ডাক্তার আহত হয়েছেন। দুইটি মেডিকেল ক্লিনিক এবং ১৪ টি এ্যাম্বুলেন্স সম্পূর্নভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও সাতটি ক্লিনিক।
আর এই আন্দোলকে এগিয়ে নিয়ে চলা ফিলিস্তিনি প্রচারাভিযানগুলো সাংবাদিকদের প্রতি তাদের প্রচারাভিযান চালানোর কারনটিকে জোড়ালোভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেনঃ
Dear journos, It's been 8 hours & #ICC4Israel is still trending worldwide: with ~340,000 tweets. Sounds like a story. pic.twitter.com/XCrcCP6R9i
— Palestine Campaigns (@PaliCampaigns) July 26, 2014
প্রিয় সাংবাদিকগণ, ৮ ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং #আইসিসিইসরায়েল এখনও সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৪০,০০০ টুইট সহকারে বিস্তৃত হচ্ছেঃ কথাগুলো যেন গল্পের মতো শোনাচ্ছে।
এরপর গাজা থেকে ওয়ালা আল ঘুসেইন শোক প্রকাশ করে বলেছেনঃ
#ICC4Israel hashtag is trending # 1 worldwide. – only if it's about hashtags.
— Walaa Al Ghussein (@WalaaGh) July 26, 2014
#আইসিসিইসরায়েল হ্যাশট্যাগটি #১সারাবিশ্ব জুড়ে বিস্তৃত হচ্ছে। – শুধুমাত্র যদি হ্যাশট্যাগটি সম্পর্কিত কোন বিষয় হয়ে থাকে।
গাজাবাসীদের অধিকাংশই আর গাজা থেকে বের হতে পারছেন না। ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সরু উপকূলীয় সীমানার চারপাশে সীমানা প্রাচীর এবং কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সীমানা অঞ্চলের উত্তর এবং দক্ষিণ দিক জুড়ে এবং মিশরের সাথে অবস্থিত দেশটির দক্ষিণ সীমানা জুড়ে এই বেষ্টনি দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন ২০১০ সালে গাজাকে “একটি উন্মুক্ত কারাগার” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ইসরায়েল থেকে আরোপিত অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে, গাজার ফিলিস্তিনি সীমানা এবং পশ্চিম তীরে দেয়া সীমানা প্রাচীরের কারণে সারা বিশ্ব এবং জাতিসংঘ এলাকাটি ইসরায়েলের “দখল” বলে মনে করে।