এখন সবখানে আলোচনার বিষয় গাজা পরিস্থিতি। সেখানে ইসরাইলি হামলায় প্যালেস্টাইনিদের মৃত্যু এবং অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির তথ্য-চিত্র অনলাইনে ব্যাপক হারে শেয়ার করা হচ্ছে।
৩০ দিনের প্রাণঘাতী যুদ্ধ শেষে আজ থেকে গাজায় ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধ বিরতি শুরু হচ্ছে। তবে এই ৩০ দিনের ইসরাইল বোমা আর মিসাইল হামলা করে প্যালেস্টাইনের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি করেছে। একটি তথ্য-চিত্রে দাবি করা হয়েছে, এই কয়দিনে কমপক্ষে ১,৮৬৮ জন প্যালেস্টাইনি এবং ৬৭ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। নিহত প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে ২৪৬ জন নারী এবং ৪২৬ জন শিশু রয়েছে। তাছাড়া আহত হয়েছেন ৯,৫৬৩ জন প্যালেস্টাইনি। এদের মধ্যে ১,৮৫৩ জন নারী এবং ২,৮৭৭ জন শিশু।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসের ৮ তারিখ থেকে বোমা হামলা শুরু হওয়ার পর ইসরাইল এবং গাজার মধ্যে এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো যুদ্ধ বিরতির ঘটনা ঘটলো।
জুলাই মাসের ৮ তারিখ থেকে ইসরাইল ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকাজুড়ে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। বাদ পড়ে না আবাসিক এলাকা, বাজার, স্কুল, খেলার মাঠ, হাসপাতাল, আশ্রয় কেন্দ্র, উদ্বাস্তু শিবিরও। এতে মারা যান হাজার হাজার মানুষ, যাদের ৭৫ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। জুলাইয়ের ২৮ তারিখে ইসরাইল গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রেও হামলা চালানো হয়। সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় তা। তারপর থেকে গাজার ১৮ লাখ মানুষ অন্ধকারের মধ্যে দিনযাপন করছেন।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে [2], ইসরাইলি হামলায় গাজার ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যাদের এখন আশ্রয় নেয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।
জেনেভাভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংস্থার পর্যবেক্ষক ইউরো-মিড আরব অঞ্চলে মানবাধিকার লংঘন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করছেন। তিনি নিচের এই তথ্য-চিত্র [3]শেয়ার করেছেন:
#InfoGraphics [4] Israeli Assault on #Gaza [5] by Numbers in 30 Days http://t.co/nDGBs9Wlg8 [6] pic.twitter.com/Oglouoguf5 [7]
— Euro-Mid (@euromid) August 5, 2014 [8]
গাজা হামলায় ৩০ দিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য-চিত্র।
ইউরো-মিড একগুচ্ছ চার্ট এবং গ্রাফ শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, গত ৩০ দিনে নিহত ১,৮৭৫ জন প্যালেস্টাইনির ৭৯ শতাংশ বা ১,৪৮৭ জন হলেন বেসামরিক নাগরিক। ২৯৯ জন হলেন প্রতিরোধকারী হামাসের সদস্য। আর ৮৯ জনের পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি। তাছাড়া নিহতদের মধ্যে ৪২৬ জন নারী এবং ২৫৫ জন শিশু রয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরাইলের ক্ষতির পরিমাণ খুব কম। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন ৬৭ জন মানুষ। এদের মধ্যে ৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ৬৪ জন সেনাসদস্য। তাছাড়া নিহতদের মধ্যে ৫৭ জন ইসরাইলি, দু'জন আমেরিকান, একজন ফরাসি, দু'জন বেলজিয়ান নাগরিক এবং দু'জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি রয়েছেন।
গাজা যুদ্ধে আহত হয়েছেন ৯,৫৬৩ জন প্যালেস্টাইনি। এদের মধ্যে ১,৯২৭ জন নারী এবং ২,৮৭৭ জন শিশু।
প্যালেস্টাইনে নিহতদের মধ্যে শুধু প্যালেস্টাইনের বেসামরিক নাগরিক কিংবা হামাস সদস্য নন, রয়েছেন জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থার ৯ জন কর্মী, ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ১২ জন সাংবাদিকও।
অন্য একটি চার্টে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে। গাজায় ইসরাইলের হামলায় ১৩টি হাসপাতাল, ১০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৩৪টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং ১২টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে।
ধ্বংস হয়েছে বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। এদের মধ্যে ৯৮টি সরকারি স্কুল, জাতিসংঘ চালিত ৯০টি স্কুল রয়েছে। যা ১৫২,০০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। ধ্বংস হয়েছে গাজার ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ও। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ১০০,০০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন সংশয়ে পড়েছে।
গাজা যুদ্ধে ৫ লাখ প্যালেস্টাইনী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩১০,০০০ জন ইসরাইলি হামলার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। ইসরাইলি হামলায় বাড়িঘর ধ্বংস হওয়ায় ১৬৫,০০০ জন বাড়ি ছেড়েছেন। জাতিসংঘের আশ্রয় শিবিরে থাকা ২৫৪,০০০ জনকেও বাস্তুচ্যুত হিসেবে দেখানো হয়েছে।
ইসরাইলি বোমা এবং মিসাইল গাজার ১০,৬০৪টি বাড়িতে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ১,৭২৪টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আর ৮,৮৮০ বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
হামলার হাত থেকে রক্ষা পায়নি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও। ইউরো-মিড জানিয়েছেন, ৪২টি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ৯০টি মসজিদ। একটি চার্চও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া ১০টি মুসলিম এবং ১টি খ্রিস্টান গোরস্থানও ধ্বংস হয়েছে।
এতোদিন গাজা ছিল অবরোধে অবরুদ্ধ একটি এলাকা। আর এখন ভুগছে পানি ও বিদ্যুৎ সংকটে। এই চিত্রে আটটি পানি সরবরাহ এবং পানি শোধনাগার ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। যার ফলে ৭ লাখ মানুষ পানি সংকটে ভুগছেন। তাছাড়া বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে ১৯টি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র। এতে করে গাজার ১৮ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
নেদারল্যান্ডের বাসিন্দা রোহান নাজেল নিজেকে মানবাধিকার কর্মী দাবি করে দু'টি তথ্য-চিত্র শেয়ার করেছেন, যেখানে ধ্বংসের ছবি উঠে এসেছে:
UN – SitRep breakdown for the 4th of August. #FreePalestine [9] #GazaUnderAttack [10] pic.twitter.com/gwAtIoltyY [11]
— Rohan Nagel (@RohanNagel1997) August 5, 2014 [12]
Page 2 of the Sitrep breakdown. #FreePalestine [9] #GazaUnderAttack [10] pic.twitter.com/oEgRZ41QCi [13]
— Rohan Nagel (@RohanNagel1997) August 5, 2014 [14]
জুলাই মাসের ৮ তারিখ থেকে ইসরাইল ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকাজুড়ে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। বাদ পড়ে না আবাসিক এলাকা, বাজার, স্কুল, খেলার মাঠ, হাসপাতাল, আশ্রয় কেন্দ্র, উদ্বাস্তু শিবিরও। এতে মারা যান হাজার হাজার মানুষ, যাদের ৭৫ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। জুলাইয়ের ২৮ তারিখে ইসরাইল গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্রেও হামলা চালানো হয়। সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় তা। তারপর থেকে গাজার ১৮ লাখ মানুষ অন্ধকারের মধ্যে দিনযাপন করছেন।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে [15], ইসরাইলি হামলায় গাজার ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যাদের এখন আশ্রয় নেয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।
গত ৬ বছরের মধ্যে এটা ছিল গাজায় ইসরাইলের তৃতীয় সামরিক অভিযান। প্যালেস্টাইনি এলাকা গাজা এবং পশ্চিম তীরে ইসরাইল এতো বেশি কড়াকড়ি আরোপ করে রেখেছে যে বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ একে ইসরাইল কর্তৃক অধিকৃত [16] এলাকা বলে মনে করে।