- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

থাই জান্তার মুঠোয় বন্দী ইন্টারনেট

বিষয়বস্তু: থাইল্যান্ড, নাগরিক মাধ্যম, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, জিভি এডভোকেসী
The National Council for Peace and Order (NCPO) is the official name of the junta government in Thailand. Photo from NCPO Facebook page [1]

থাইল্যান্ডের জান্তা সরকারের অফিসিয়াল নাম হচ্ছে দ্যা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস এন্ড অর্ডার (এনসিপিও)। ছবিটি এনসিপিও এর ফেসবুক পাতা থেকে সংগৃহীত। 

গত মে মাসের ক্যু’এর পর থেকে থাই জান্তা সরকারের অনলাইন বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি আরও শক্তিশালী এবং আরও অত্যাধুনিক করা হয়েছে।

এ বছরের মে মাসের ২২ তারিখ থেকে জুন মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশের সক্ষমতার উপর একটি নতুন সিটিজেন ল্যাব সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সমীক্ষা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, দেশটিতে ৫৬ টি ইউআরএল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ক্যুয়ের সমালোচনাকারী বেশকিছু অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের (স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক) প্রচারসূচী সেন্সর করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একাউন্টগুলো থেকে “ক্যু-বিরোধী” বার্তা এবং ক্যু বাস্তবায়নে বাঁধা দানকারী টুল শেয়ার করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে সেগুলোকেও সেন্সর করা হয়েছে।

নির্বাচিত অথবা যেকোন ভাবে ক্ষমতায় আসা বিভিন্ন থাই সরকারের অধীনে ইন্টারনেট ফিল্টার করার বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক। সরকারি কর্মকর্তারা এখনও এ ধরনের চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। জুয়া খেলা, পর্নোগ্রাফি এবং সন্ত্রাসের মতো নিরাপত্তা এবং সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু সম্পর্কিত প্রচার সূচীগুলোকেই মূলত বেশি ফিল্টার করা হয়। তবে ২০০৭ সালের কম্পিউটার সম্পর্কিত অপরাধী আইনের সূচনা অনুযায়ী এই আইনটি এবং লিজ মেজেস্টি (রাজতন্ত্র অবমাননা আইন বিরোধী) আইন মিশ্রিত মারাত্মক অভিযোগের ফলস্বরূপ যন্ত্রণা প্রদান এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দ্রুত বেড়ে গিয়েছে। থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক সংঘাত যতো বেড়েছে, বিরোধী দলীয় বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব এবং দলকে অনলাইনে আক্রমণের হার [2] ততো বেড়েছে। টিওটি’র মতো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আইএসপিগুলোকে যেখানে অনেক বেশি ফিল্টার করতে দেখা গেছে, সেখানে ট্রু কর্পোরেশনের মতো ব্যক্তি মালিকানাধীন আইএসপিগুলো তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম ফিল্টার করেছে।   

রাজকীয় থাই সেনাবাহিনী এ বছরের ২২ মে তারিখে বর্তমানের এই ক্যু করার [3] পর সামরিক নেতারা ২০০৬ সালের সম্প্রতি বিদায়ী ক্যু সরকারের চেয়েও আরও বেশি কঠোর হওয়ার শপথ নিয়েছেন। এই ক্যুয়ের নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রয়ুথ চান-ওচা বলেছেন, থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অসুস্থতা সারিয়ে তুলতে “মহা-শক্তিশালী” ওষুধের প্রয়োজন [4]। কেননা এই রাজনৈতিক ওষুধ এক দশক ধরে দেশটিকে স্থবির করে রেখেছে।

সাবেক ক্যু শাসনতন্ত্রগুলো বর্তমান ক্যু শাসকদের মতো আবির্ভূত হওয়ার পর অনলাইন বিশ্বকে ততোটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেনি। বর্তমান শাসনতন্ত্র অনলাইন বিশ্বের উপর আরও বৃহত্তর এবং কঠোরভাবে তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে সরাসরিভাবে জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে।

সিটিজেন নেটওয়ার্ক পরিমাপক সমীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা গাছে যে ক্যু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়াটি “খুব বেশি গতিশীল” ছিল।  

…সর্বপ্রথম ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাটি ঘটার পরবর্তী সময়ে চালানো সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ওয়েবসাইট গুলো বন্ধ করে দেয়ার কৌশলগত প্রক্রিয়া গুলোও বেশ গতিশীল। ব্লক করে দেয়া পেজগুলো দেখাতে এবং সেগুলোকে পরিচালিত করতে যে সেবা ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও নিয়মিতভাবে পরিবরতন করা হচ্ছে। 

গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন, বিভিন্ন প্রচার সূচী ফিল্টার করতে বিভিন্ন ধরনের আইএসপি ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা লিখেছেন, ক্যু সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে এ ধরনের সবগুলো পরিবর্তনকে একসাথে করে এমন একটি নিয়ত পরিবর্তনশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে ইন্টারনেট ফিল্টার বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়া বার বার পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।

ফিল্টারিং মেনে ঐক্য বৃদ্ধি করতে, সামরিক বাহিনী থাইল্যান্ডে আইএসপি প্রদানকারীদের একটি মিটিং এ ডেকেছে। সেখানে তারা নজরদারিতে “সহযোগিতার” জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। ইন্টারনেট প্রদানকারীদের প্রথমে আইসিটি মন্ত্রণালয়, সাইবার পুলিশ, বা জাতীয় সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ কমিশনে এক ঘন্টার মধ্যে অবরুদ্ধ করা ইউআরএল গুলির একটি তালিকা জমা দিতে হয় [5]

এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য ব্যবস্থা সহকারে ইন্টারনেট ফিল্টারিং এর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক খবর প্রচারের সময় টিভি, রেডিও স্টেশন, কেবল অপারেটর এবং সংবাদপত্রের মতো পরম্পরাগত মিডিয়া গোষ্ঠীকে জান্তারা ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ এবং সেন্সরশিপের আওয়তায় আনছে।

নতুন সরকার ফেসবুক, টুইটার এবং গুগল বা লাইন চ্যাট [6] অ্যাপ্লিকেশনের মত ইন্টারনেট দৈত্যদের থেকে সহযোগিতা লাভের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাঁরা তাতে ব্যর্থ হয়েছে [7]। থাই নেটিজেন নেটওয়ার্ক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে [7] যে প্রধান প্রধান সামাজিক মিডিয়া প্লাটফর্মকে নিরাপদ করতে অক্ষম হওয়ায়, সামরিক বাহিনীর লোকেরা নেট ব্যবহারকারীদের ইমেল ঠিকানা সংগ্রহ করতে নীতিগত সন্দেহজনক পদ্ধতি ব্যবহার করা শুরু করেছে।

থাই জান্তা এ পর্যন্ত সাইবার তথ্য নিয়ন্ত্রণে তার কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। হতে পারে সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান, নিজেদের অজান্তেই, সাইবার বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ এবং নিরীক্ষণের জন্য রাষ্ট্রকে আরো দৃঢ়তা এবং সরঞ্জাম প্রদান করেছে।