আকাশ পথে আমস্টার্ডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাওয়ার পথে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ১৭ বিমানটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিধ্বস্ত হয়। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ঘটে যাওয়া এই বিমান দূর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৯৮ জন যাত্রী এবং ক্রু সদস্যদের সবাই বিদেশের মাটিতে মারা যায়।
বেশিরভাগ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ইউক্রেন সরকার রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে বিমানটিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাতে বিইউকে সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ব্যবস্থা ব্যবহারের অভিযোগ করেছে। তবে বিদ্রোহী সেনা দলের নেতারা তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
এই তথ্যচিত্রটি এমএইচ১৭ বিমানটির যাত্রা পথ এবং দূর্ঘটনাস্থলটি দেখাতে সাহায্য করেছেঃ
Infographic: Crashsite Map incl. MH17 Flight Path – pic.twitter.com/JkPwUJAv8u
— Florian Witulski (@vaitor) July 18, 2014
তথ্যচিত্রঃ এমএইচ১৭ এর যাত্রা পথ।
মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, যারা বিমানটিকে ভূপতিত করার জন্য দায়ী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবেঃ
সেই দিনটি ছিল একটি মর্মান্তিক দিন, এমনকি দিনটি মালয়েশিয়ার জন্য পুরো বছরটিকে একটি শোকের বছরে পরিণত করেছে।
বিমানটিকে ইচ্ছাকৃত ভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল, এ ঘটনাটি যদি সত্যি হয়, তবে আমরা জোর দিয়ে বলব, দোষী ব্যক্তিদের যেন অতি সত্বর অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হয়।
বিমান যাত্রী এবং ক্রুদের মাঝে বিভিন্ন দেশের নাগরিক ছিলেন।
তবে আজ সমস্ত জাতিসত্ত্বা ভুলে আমরা সবাই একসাথে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি।
তিনি আবারও পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, বিমানটি সরাসরি যে পথে ভ্রমন করছিল, তা একটি সংঘাতময় আকাশপথ হলেও আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থা জায়গাটিকে নিরাপদ বলেই ঘোষণা দিয়েছিল।
এমএইচ১৭ বিমান দূর্ঘটনাটি মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের দ্বিতীয় বিমান দুর্ঘটনা। কেননা এ বছরই মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ বছর ৮ মার্চ তারিখে মালয়েশিয়ান বিমানের এমএইচ৩৭০ উড়োজাহাজটি ২৩৭ জন যাত্রী সহ হারিয়ে যায়। বেইজিং এর উদ্দেশ্যে কুয়ালালামপুর ছাড়ার এক ঘন্টা পর উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হয়ে যায়। এমএইচ৩৭০ বিমান এবং এর যাত্রীদের এখনও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ এমএইচ৩৭০ বিমানটির একজন কর্মীর মেয়ে এমএইচ১৭ বিমানের যাত্রীদের পরিবার পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবদের তাঁর সহমর্মিতা জানিয়ে একটি বার্তা টুইট করেছেনঃ
As the family member of the crew MH370, and on behalf of all them, we pray for MH17. Stay strong dear families. #PrayForMH17
— Maira E. (@Gorgxous_) July 17, 2014
এমএইচ৩৭০ এর ক্রুদের পরিবারের সদস্যদের পক্ষে এবং সকলের পক্ষ হয়ে, আমরা এমএইচ১৭ এর জন্য প্রার্থনা করছি। প্রিয় পরিবারবর্গ, আপনারা মনকে শক্ত রাখুন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ার কর্মকর্তা জোসি ফারনান্দেজ এই ঘটনার পরিপূর্ণ তদন্তের প্রতি জোর দিয়েছেনঃ
যা ঘটেছে তা একেবারেই নজিরবিহীন – মালয়েশিয়া একমাত্র একটি দেশ যেখানে একই ঘটনা পুনরায় ঘটলো। কয়েক মাসের ব্যবধানে একই ধরনের দুইটি বিমান চরম দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দিল। যে ঘটনায় অনেকগুলো প্রাণ হারিয়ে গেল। এমএইচ৩৭০ এখনও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই নজিরবিহীন দুঃখজনক ঘটনা তদন্ত করতে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক সাহায্য চাওয়া উচিৎ। কেননা, এটি একটি যাত্রীবাহী বিমান ছিল। আর আমরা কোন জাতির সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় নেই।
এ্যান্ট ডেইলি সংবাদপত্রের জন্য লেখা একটি কলামে আলিয়া আলহাদজরি এমএইচ১৭ বিমানটিকে ভূপতিত করার ঘটনাকে একটি “গণহত্যা” বলে আখ্যায়িত করেছেনঃ
একটি সংঘাতময় আকাশসীমা, যেখানে বিমান ভূপতিত করা হয় এবং যে আকাশপথ পরিহার করতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে সেখানে কেন এখনও যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক বিমান উড়ানো হচ্ছে।
আরেকটি এমএএস বোয়িং ৭৭৭ বিমান ১৩৩ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বার বিধ্বস্ত হওয়ার কারন যেটাই হোক, দুইটি বিমান দূর্ঘটনায় ৫৩৭ জন লোক প্রাণ হারিয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় বিমান সংস্থাটির উপর আর জনগণের আস্থা ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
যেহেতু আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনায় মালয়েশিয়া শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে, তাই এমএইচ৩৭০ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার রহস্যজনক ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে অনেক নাগরিকই নতুন করে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করবেন এটাই স্বাভাবিক।