- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বাহরাইনকে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ ছুঁতে চাইছে?

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরাক, বাহরাইন, সিরিয়া, নাগরিক মাধ্যম, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি

ইরাক আর সিরিয়া জুুড়ে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ বাহরাইনেরও এর আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে কিছু সরকারী কর্মকর্তার প্রতিক্রিয়া জনমনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে [1]

এদিকে এই পরিস্থিতির মধ্যে কট্টর সৌদি সুন্নি ধর্মীয় গুরু মোহাম্মাদ আল আরেফি আগামীকাল [৮ জুলাই ২০১৪] বাহরাইন সফর করবেন বলে খবর পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, সিরিয়ায় জিহাদি সংগ্রহের অভিযোগে এই সুন্নি ধর্মীয় নেতাকে যুক্তরাজ্য তাদের দেশটিতে ঢুকতে দেয়নি [2]। ধারণা করা হচ্ছে, মুসলিম তরুণদের লক্ষ্য করেই তিনি বাহরাইন সফরে আসছেন। তার সফর নিয়ে টুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। শিয়াপন্থী টুইটার ব্যবহারকারীরা তার সফর বাতিলের আহবান জানিয়েছেন। বাহরাইনে শিয়াদের সংখ্যাই বেশি।

জাতি-বিদ্বেষী [3] নীতির কারণে বাহরাইন দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে। ২০১১ সালের ঘটনাও এই বিদ্বেষ থেকে দেশটিকে বের করে আনতে পারেনি। বরং সুন্নি শাসিত দেশটিতে সংখ্যাগুরু শিয়াদের বিরুদ্ধে বৈষম্য আরো বেড়েছে। আর তাই ইরাক এবং সিরিয়ায় ধর্মীয় সহিংসতা বাড়ায় বাহরাইনও টেনশনে পড়েছে। বাহরাইন থেকে জোগাড় করা জিহাদি তরুণ'রা [4] সিরিয়ায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। বাহরাইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বিবৃতিতে [5] জানিয়েছেন, সিরিয়ায় যুদ্ধে অংশ নেয়া কেউ কেউ ইতোমধ্যে দেশে ফিরে এসেছে।

এই পরিস্থিতিতে কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতার সফর জাতি-বিদ্বেষের আগুনে ঘৃতাহুতি দিবে, যা দেশটি কোনোভাবেই চাইছে না।
আইনজীবী ফাতিমা আল হাওয়াজের টুইটার অনুসারীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬০০ জন। তিনি টুইট করেছেন:

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিনীত আহবান জানাচ্ছি আল-আরেফি'র বাহরাইনে প্রবেশের ওপর নিষেধজ্ঞা আরোপ করতে। এতে করে উনি মানুষদেরকে সিরিয়া এবং ইরাকে জিহাদে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করতে পারবেন না। তিনি আইএসআইএস-এর আদর্শে বিশ্বাসী। আমরা বাহরাইনে অস্থির অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে চাই না।

মানবাধিকারকর্মী সাঈদ ইউসুফ আল মুহাফদার টুইটার অনুসরণকারীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ৭০০ জন। তিনি টুইট করেছেন:

বাহরাইনের টুইটার ব্যবহারকারীরা মোহাম্মদ আল-আরেফি'র আগমনকে প্রত্যাখান করেছে। তিনি বক্তৃতা দেয়ার মাধ্যমে বাহরাইনে সন্ত্রাসবাদকে সক্রিয় করবেন। বাহরাইনের টুইটার ব্যবহারকারীরা আল-আরেফি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তার আগমনের প্রতিবাদ করছে।

আব্বাস আল জামরি তার ২ হাজার অনুসরণকারীকে বলেন:

কট্টরপন্থী নেতা আল-আরেফি বুসাইতিন এবং রাফায় সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিবেন। আমাদের দেশটি ছোট। আরো বেশি দাবানল প্রতিরোধ করতে পারবে না।

জুলাই মাসের ৪ তারিখে জননিরাপত্তা বিগ্রেডের প্রধান তারিক আলহাসান একটি বিবৃতি [5] দিয়েছেন। সেখানে তিনি বাবা-মার প্রতি আহবান জানিয়েছেন, তারা যেন তাদের ছেলেমেয়েদের দেখেশুনে রাখেন, যাতে তারা সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সংস্পর্শে না আসতে পারে। কোনো সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে না পারে।

বিগ্রেড প্রধান কট্টরপন্থী ধর্মীয গ্রুপ অথবা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগ না দিতে সতর্ক করে দিয়েছেন।

যদিও এর আগে তিনি নিচের টুইটটি করেন:

ওমর ইবনে আলখাতাব (তৃতীয় খলিফা) বলেছেন: সংখ্যায় কিংবা অস্ত্র দিয়ে আপনার শত্রুকে পরাজিত করতে পারবেন না। কিন্তু ধর্ম দিয়ে সেটা পারবেন। তবে আপনাদের পাপ সমান হয়ে থাকলে শক্তিশালী যিনি, তিনিই জয়ী হবেন।

সম্প্রতি আইএসআইএস-এর পতাকায় সোমালিয়ার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-শাহাব আল-মুজাহিদিনের লোগোর বুলেট দেখা গেছে। তবে ২০০০ সাল থেকে অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের লোগো দেখা গেছে।

ইরাকে আইএসআইএস-এর অগ্রগতির পর থেকে বাহরাইনে বিভিন্ন জায়গায় একই পতাকা দেখা গেছে।

জয়নব আতিয়ার টুইটার অনুসারীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭০০ জন। তিনি তার অনুসরণকারীদের টুইট করেছেন:

সামরিক শাসনামলে গাড়িতে পতাকা উড়ালে জেলে যেত হতো। কারণ, এটাকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এখন আইএসআইএস-এর পতাকা উড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এটা দেখার কেউ নেই।

বাহরাইনের একটি স্কুলের দেয়ালে আইএসআইএস-এর লোগো'র গ্র্যাফিতি করা ছবি ইউসুফ আলখাজা শেয়ার করেছেন:

শুভ সকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মুহারকের একটি স্কুলের দেয়ালে এই লোগোটি গ্র্যাফিটি করা হয়েছে।
এটাকে কি স্কুলে অনধিকার প্রবেশকারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে অথবা অন্য কিছু?

অতীতেও এই ধরনের পতাকা [18]বাহরাইন জুড়ে দেখা গেছে। এ থেকে অনুমান করা হয় বাহরাইন আলকায়েদার ডেঞ্জারজোন থেকে দূরে নয়। কেন না, দেশটির জাতি-বিদ্বেষ নীতি সন্ত্রাসবাদ সম্প্রসারণের জন্য একটি উত্তম ক্ষেত্র। যদিও শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন তাদের দমনের প্রতি দেশটির যাবতীয় মনোযোগ থাকে।