প্রতিবছর যত্নের অভাবে ৪৪,০০০ মালাগাছি শিশু মৃত্যুবরণ করে? কিভাবে এর প্রতিকার সম্ভব?

Enfants Malgaches par Yves Picq - CC-BY-SA-3.0

মাদাগাস্কারের শিশু। ছবি- ভেস পিক- সিসি-বাই-এসএ-৩.০

সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী মাদাগাস্কারে প্রতিবছর পাঁচ বছরের নীচে ৪৪,০০০ জন শিশু মৃত্যুবরণ করে। এ সংখ্যা ফ্রান্সের আল্পস-দে-হুট- প্রদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী সকল শিশুর সমান। এ সংখ্যা ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলায় আহত ও নিহতদের থেকে ১৫ গুণ বেশি। 

এত বেশি সংখ্যক – শিশু মৃত্যুর কারন- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারগুলোর সীমিত আয়। গণ স্বাস্থ্যের প্রেক্ষাপটে মাদাগাস্কারে দুটি গ্রুপ বিশেষ করে বেশি ঝুঁকির মুখেঃ এরা হল পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং গর্ভবতী নারী।

বিশ্বব্যাংকের মতে পাঁচ বছরের কম বয়সী সকল শিশুর অর্ধেক শিশু বিলম্বিত বিকাশের শিকার, “আফ্রিকার যে কোন দেশের তুলনায় বেশি।” মাতৃ মৃত্যুর হার ১০০,০০০ জনের মধ্যে প্রায় ৪৯৮ জন, এবং মৃত্যুর কারণও বহুবিধ, এরমধ্যে প্রসবের সময় দক্ষ ধাত্রীর অভাব, দূর্বল শিশুপালন ব্যবস্থা, এবং আপৎকালীন যত্নের অভাব অন্যতম।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা ভয়াবহ, যদিও পরিস্থিতি পরিবর্তনের উদ্যোগের কোন কমতি নেই।

ক্রনিক অপুষ্টি সমস্যা মোকাবেলার জন্য মাদাগাস্কারের উত্তরে তলিয়ারাতে একটি স্কুল একটি প্রকল্প চালু করেছে। লে ইনফান্ত দো সোলেইল (সুর্যসন্তান) নামের একটি প্রতিষ্ঠান পথশিশু ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষিত করে তুলছে। শিশুরা স্কুলের ক্যাফেটেরিয়া থেকে দুপুর বেলার খাবার গ্রহণ করে। ফরাসী ভাষার এই ইউটিউবে দেখুন সেইসব সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদেরঃ

শিকল- সেল এনিমিয়া অথবা ম্যালারিয়ার মত সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানে অন্যান্য প্রোগ্রামগুলো চলমান।মাদাগাস্কারের জনসংখ্যার দুই শতাংশ মানুষ বংশগতভাবে শিকল-সেল রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত।এলসিডিএমএফ (মাদাগাস্কারে শিকল- সেল রক্তশূন্যতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম) নামের একটি সংগঠন এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নিচের এ ভিডিওটিতে এলসিডিএমএফ- এর একজন নেতা তাঁদের এনজিওর বিগত কার্যক্রম এবং আগামি তিন বছরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ননা করছেন। তাঁদের দুটি লক্ষ্য হল শিকল- সেল রক্তশুন্যতার রোগীদের জন্য এন্টিবায়োটিকের সুবিধা সহজ করে তোলা এবং মালাগাসির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বোঝানো যে  শিকল- সেল রক্তশুন্যতা জাতির গণস্বাস্থ্য অগ্রাধিকারভুক্ত করা উচিতঃ

প্রধানমন্ত্রী মালগাছি কোলো রজার – এর কাছে এক খোলা চিঠিতে এলসিডিএমএফ এ সমস্যাকে বিশেষ করে আধুনিক স্বাস্থ্য সুবিধা বঞ্চিত বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোতে  গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে ঃ

Ce problème crucial de santé publique qui affecte de manière dramatique les plus nécessiteux dans une région avec près de 20% de prévalence où un enfant sur cinq souffrant d’un syndrome drépanocytaire majeur est susceptible de ne pas survivre au-delà de l’âge de 5 ans, ne peut plus souffrir de demi-mesures. Il illustre à lui seul, parce qu’il s’agit d’une maladie transversale intéressant toute les spécialités médicales, l’exigence d’une prise en compte urgente de votre part de ces logiques de santé de proximité.

এই জটিল গণস্বাস্থ্য সমস্যার প্রভাব দেখা যায় দারিদ্র পীড়িত অঞ্চলগুলোতে, ওই অঞ্চলগুলোতে এ রোগের হার ২০ শতাংশ এবং প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন শিকল-সেল রক্তশুন্যতায় তীব্রভাবে আক্রান্ত। পাঁচ বছর পুর্ণ হওয়ার আগেই তাঁরা মৃত্যুবরণ করে। এ সমস্যাকে কোনভাবেই অসম্পুর্নভাবে মোকাবেলা করা উচিত নয়। কারন শিকল- সেল রক্তশুন্যতা একটি ক্রস- ডিসিপ্লিনারি (cross-disciplinary) রোগ এবং এতে সকল ধরণের চিকিৎসা সুবিধার প্রয়োজন। এ রোগটিকে জরুরি ভিত্তিতে আপনার আঙ্গিনায় স্বাস্থ্যসেবা রাখার পরিস্থিতির সাথে তুলনা করা চলে।

করার আছে অনেক কিছুই

 মাদাগাস্কারে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেকারনে গুরুত্ব প্রদানের আরেকটি ক্ষেত্র হল মাতৃস্বাস্থ্য সেবা খাত । উদাহরন স্বরূপ বলা যায় মাদাগাস্কার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিক্স (ইনসাট) জাতিসঙ্ঘ পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) এর তথ্য অনুযায়ী প্রতি পাঁচজন বিবাহিত নারী যারা জন্ম বিলম্বিতকরণ অথবা সীমিত শতাংশ), এছাড়া ১০ টি জীবিত প্রসবের মধ্যে ১ টির গর্ভপাত ঘটানো হয়।

এ ধরণের উদ্যোগ ছাড়াও, মাদাগাস্কারের স্বাস্থ্য সূচকের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। দুর্বল ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা নির্ভর করে পারিবারিক আয় এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সক্ষমতার উপর। প্রায়প্রতি চারজনের একজন  (২৩ শতাংশ) অসুস্থ হলে পরিষেবা ব্যয় মেটানোর অক্ষমতার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারে না।

আরেকটি বাস্তব সমস্যা হল  চিকিৎসার সহজলভ্যতা কারন  নিয়মতান্ত্রিক ঔষধ ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা, ইনভেন্টরি ট্র্যাকিংসহ প্রয়োজনীয় রসদের সঠিক বিতরণের প্রতিবন্ধকতার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যহত হয়। একারনে বিত্তবানরা গরিবদের চাইতে চারগুণ বেশি চিকিৎসা সেবা পায়ঃ বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী  স্বাস্থ্যসেবা খাতের  সামগ্রিক খরচের ৪০∙৯ শনতাংশ আসে বিত্তবানদের একপঞ্চমাংশ থেকে অপরদিকে দরিদ্রদের একপঞ্চমাংশ স্বাস্থ্যসেবা খাতের  সামগ্রিক খরচের ১০∙১ শতাংশ খরচ করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইউনিসেফ বলেছে শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য  এবং সদ্যজাত শিশুদের খাদ্য ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ জরুরি। সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে নিচের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান প্রয়োজন :সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ দলগুলো চিহ্নিত করে পুষ্টিসেবা কার্যকক্রমকে শক্তিশালী করতে হবে এবং তাঁদের পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে;

  • সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ দলগুলো চিহ্নিত করে পুষ্টিসেবা কার্যকক্রমকে শক্তিশালী করতে হবে এবং তাঁদের পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে;বাজেট ব্যয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে;
  • বাজেট ব্যয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে;
  •   স্বাস্থ্যসেবার মানব সম্পদ  ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটাতে হবে;ঝুঁকিমুক্ত প্রসব যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে;ঝুঁকিমুক্ত প্রসব যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে;
  • ঝুঁকিমুক্ত প্রসব যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে;
  •    গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ফিরিয়ে আনতে হবে।

  স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা এখন পর্যন্ত এতটা খারাপ হয় নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে প্রস্তাবিত নীতিসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব। গত ৫০ বছর ধরে মালাগাছির শিশুরা অপেক্ষা করে আছে কবে তাঁদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জাতীয় এজেন্ডার শীর্ষে থাকবে।   বছরে ৪৪০০০ বার এভাবে  নিজেদেরভবিষ্যৎ ধংসের চিন্তা কোন দায়িত্বশীল জাতির কাম্য হতে পারে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .