- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

বিশ্বকাপ উদ্বোধনের দিনে ব্রাজিলের নৃশংসতার কথন

বিষয়বস্তু: ব্রাজিল, খেলাধুলা, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রতিবাদ
Upper left: Use pepper spray against an immobilized man. Upper right: Injure foreign journalists with shrapnel bombs. Down left: If the military police is not afraid to act when the whole world is watching. Down right: Imagine what it will be like when nobody is watching. Image by Pirikart, free to use. [1]

উপরের বামে:একজন বিক্ষোভকারীকে দমন করতে মরিচের গুঁড়া স্প্রে করা হচ্ছে। উপরের ডানে: বোমার আঘাতে আহত বিদেশী সাংবাদিক। নিচের বামে: ঘটনার দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে থাকলেও মিলিটারি পুলিশদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নিচের ডানে: কল্পনা করুন, কেউ যদি না দেখে তাহলে ব্যাপারটায় কী ঘটবে। পিরিকাট-এর সৌজন্যে ছবিটি নেয়া হয়েছে।

সাও পাওলোর অ্যারেনা করিন্থিয়াস স্টেডিয়াম তখন সঙ্গীতের মূর্চ্ছনায় ডুবে আছে। সেখানে চলছে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের শুভ উদ্বোধন। বর্ণিল হয়ে উঠেছে স্টেডিয়াম ও তার আশপাশ। কিন্তু শহরের রাস্তাঘাট জুড়ে তখন অন্য এক দৃশ্যের উপস্থিতি- প্রতিবাদ মিছিল, লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস আর বোমার বিস্ফোরণ।

বিশ্বকাপ আয়োজন করতে ব্রাজিল বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। নতুন নতুন স্টেডিয়াম বানিয়েছে। হোটেল, অবকাশকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাখাতে বিনিয়োগে একেবারে লবডঙ্কা। আর এর প্রতিবাদ জানাতেই ১২ জুন, ২০১৪ প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন [2] করেছিল বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু ব্রাজিলের মিলিটারি পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নৃশংসভাবে দমন করে। পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭ জন সাংবাদিকও রয়েছেন। তাছাড়া এসময়ে পুলিশ ৪৭ জনকে গ্রেফতার [3] করে।

বিক্ষোভকারীরা যেখানেই পেরেছে, সেখানেই প্রতিবাদ করেছে। প্রতিবাদকারীদের সাথে সাবওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নও ছিল। তারা ন্যায্য মজুরির দাবিতে [4] আন্দোলনে শরিক হয়েছিল। আক্টিভিস্ট লইয়ার্স কালেক্টিভ-এর ভাষ্যমতে [5], পত্রিকার সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি থেকে কিছু সহযোগিতা এসেছিল:

Jornalistas acabaram por ver-se tão acuados quanto os demais atores da manifestação, na medida em que estes os buscavam como um possível “porto seguro”, independentemente do tipo ou nacionalidade dos profissionais envolvidos.

বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা অনেক বিদেশী সাংবাদিক বিক্ষোভ কর্মসূচির খোঁজ নিতে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। এসময়ে মিলিটারি পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে বোমা এবং রাবার বুলেট [6] ছোঁড়ে। এতে করে বেশ কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিকও আহত হন। এদের মধ্যে ব্রাজিলের সিএনএন-এর ব্যুরো প্রধান শাস্টা ডারলিংটন [7] এবং প্রযোজক বারবারা আরভ্যানিটিডিস রয়েছেন। রয়েছেন আর্জেন্টিনার সাংবাদিক রড্রিগো অ্যাবডও। তার পায়ে বোমার আঘাত লেগেছে। এক ফরাসি সাংবাদিকের পায়েও রাবার বুলেট লেগেছে। ব্রাজিলের এসবিটি নেটওয়ার্কের ক্যামেরাম্যানের মাথায় বোমার টুকরো আঘাত করেছে।

ক্যাটালান সাংবাদিক সার্গে আলটাদিল ব্রাজিলে এসেছিলেন মাঠে বসে বিশ্বকাপ ম্যাচ কাভার করতে। কিন্তু ফুটবল মাঠে নয়, তিনি এখন শুয়ে আছেন হাসপাতালের বেডে [8]। কারণ পুলিশ তার পায়ের কাছে টিয়ার গ্যাস বোমার বিস্ফোরণ [9] ঘটায়। বিস্ফোরণের শব্দে তার কানের পর্দা ফেটে গেছে [10]

অ্যাক্টিভিস্ট ড্যানিয়েল লিমা ফেসবুকে ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছেন [11]:

A Tropa de Choque chegou também, batendo seus cassetetes nos escudos e depois na gente de novo. Confusão, fecharam a estação, chamaram a cavalaria, fecharam as ruas em volta.

প্রশিক্ষিত পুলিশ বাহিনী এসে গেছে। তারা আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করেই যাচ্ছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, সাবওয়ে স্টেশন বন্ধ হয়েছে। অশ্বারোহী সৈন্যদের ডাকা হয়েছে। চারদিকের রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

রাফায়েল মারকুইজ লাসভার্ঘির বয়স ২৯ বছর। পেশায় ইংরেজির শিক্ষক। বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে তার ওপর ঘটা পুলিশের ঘৃণ্য অত্যাচার সবার মনোযোগ কাড়ে। বিক্ষোভের সময়ে তার বুকে রাবার বুলেট আঘান হানে। তিনি সেখানেই পড়ে যান। সেসময়ে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। এরপর এক পুলিশ অফিসার তার চোখেমুখে মরিচের গুঁড়া স্প্রে করে।

Manifestante rendido é torturado com spray de pimenta no rosto. Imagem de uso livre. [12]

সাও পাওলোতে বিশ্বকাপ উদ্বোধনের দিন বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ রাফায়েল মারকুইজ লাসভার্ঘির ওপর মরিচের গুঁড়া স্প্রে করে।

অ্যানানোমাস রিও ফেসবুক পোস্টে বিস্তারিত লিখেছেন [13]:

[Ele] estava parado sozinho em frente à tropa ao lado do metrô Carrão quando levou dois tiros de borracha no peito. Em seguida, ele foi imobilizado pelo próprio comandante da operação e ao menos mais cinco PMs. Mesmo algemado e imobilizado, Lusvarghi foi atingido por um jato de spray de pimenta nos olhos.

Por causa da repercussão das imagens, ele perdeu nesta sexta seus dois empregos – em uma escola e em uma multinacional do setor de tecnologia.

সাবওয়ে কারিও'র সামনে একাকি দাঁড়িয়ে ছিলেন রাফায়েল। তার সামনেই ছিল পুলিশ বাহিনী। এ সময়ে পরপর দুটি রাবার বুলেট এসে রাফায়েলের বুকে লাগে। তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময়ে অপারেশন কমান্ডারসহ আরো পাঁচ অফিসার এসে তাকে নিস্তেজ করতে চোখে মরিচের গুঁড়া স্প্রে করে।
এ ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর এর ফলশ্রুতিতে শুক্রবারের মধ্যে তার দুটি চাকরি হারান। এর একটি স্কুলে শিক্ষকতা। অন্যটি প্রযুক্তি খাতের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির।

রিও ডি জেনেরিও-তেও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেও পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। পেদ্রো গিলহার্ম ফ্রেইরি নামের একজন অধ্যাপককে পুলিশ আটক করে টেনেহিঁচড়ে [14] নিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা তাকে আটক করার মুহূর্তটির [15] ছবি তুলে রাখে।

Professor Pedro Freire agredido e arrastado pela PM. Foto de Daniel Fonsêca, usada com permissão. [16]

বিশ্বকাপ বিক্ষোভের সময়ে রিও ডি জেনেরিও'র মিলিটারি পুলিশ প্রেদ্রো ফ্রেইরি নামের একজন অধ্যাপককে গ্রেফতার করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। ছবি তুলেছেন ড্যানিয়েল ফনসেকা। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

বিক্ষোভ চলাকালে ফেসবুকে এ ধরনের আরো কিছু ঘটনার ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। অ্যাক্টিভিস্ট রাফায়েল রেজেনদে ফেসবুকে একটি ভিডিও [17] পোস্ট করেছেন, সেখানে এক পুলিশ অফিসারকে দেখা যাচ্ছে, যিনি একজন বিক্ষোভকারীকে জাপ্টে ধরছেন। আরেক অ্যাক্টিভিস্ট পলা কোসেট আরেকটি ভিডিও [18] ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। রিও ডি জেনেরিও-তে রাতেরবেলা বিক্ষোভকালে পুলিশ কীভাবে বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে, তা উঠে এসেছে।

এদিকে রেভ্যুলেশন নিউজ [19]নামের একটি ওয়েবসাইটেও একটি ভিডিও ছাড়া হয়েছে। ভিডিওটিতে রিও ডি জেনেরিও থেকে অ্যাক্টিভিস্ট মিডিয়া গ্রুপ মারিয়াচি কালেক্টিভ-এর একজন সাংবাদিককে আটক করার দৃশ্য দেখা গেছে:

মিনাস গেরেইস প্রদেশের বেলো হরিজোন্টে শহরে বিক্ষোভ চলাকালে রয়টার্সের ফটো সাংবাদিক স্যামুয়েল কোস্টা মাথায় আঘাত [20]পেয়েছেন। এ সময়ে এখান থেকে ১৮ জন বিক্ষোভকারীকে [21] গ্রেফতার করা হয়।
বিক্ষোভের সময় গাড়িতে ইঁট-পাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগে কালেক্টিভ মিডিয়া নিনজা [22] গ্রুপের সদস্য ক্যারিনি ডি মাগাহেজকে আটক করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, বিক্ষোভস্থল থেকে সরাসরি সংবাদ প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য তাকে ছোটাছুটি করতে দেখা গিয়েছিল।

কালেক্টিভ মিডিয়া নিনজা তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে [23], একটি মিলিটারি ব্যারাকে নিয়ে গিয়ে জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত ৫ জন পুলিশ তাকে মারধর করেছে। জ্ঞান হারানোর পর সেখান থেকে তাকে সিভিল পুলিশ স্টেশনে হস্তান্তর করা হয়। পরের দিন তিনি ছাড়া পান।

বিশ্বকাপেরর বাকিটা সময় জুড়ে ব্রাজিলকে বিক্ষোভ দমন করে রাখতে হবে। সারাদেশ জুড়ে যেসব বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাতে “আমরা বিশ্বকাপ চাই না”, “অধিকার ছাড়া আমরা বিশ্বকাপ চাই না” লেখা ব্যানার দেখা গেছে।