ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল আজ (১০ জুন) ইসলামিক জঙ্গীদের হাতের মুঠোয় চলে গেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরাক এবং সিরিয়ার (আইএসআইএস) ইসলামিক প্রদেশ থেকে আসা এই জঙ্গীরা কুখ্যাত জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার একটি দলছুট গোষ্ঠী। এরা সিরিয়াতেও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
শহর জুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার ইরাকী তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত একজন ইরাকি ব্লগার মারিয়াম আল দাব্বাগ এই অগ্নিপরীক্ষার সময়ে তাঁর পরিবারের সংগ্রামের কথা টুইটারে লিখেছেন।
জুন মাসে লেখা তাঁর টুইটঃ
Mosul under fire. Explosions and firing heard in several areas and almost no mention in intl media. #iraq
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 7, 2014
মসুল আগুনে পুড়ছে। বেশ কিছু এলাকাতে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে এ ঘটনাগুলো একেবারেই প্রচার করা হয়নি। #ইরাক
Several solidarity campaigns can be seen circulating around social media platforms to raise awareness about situation in #mosul
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 7, 2014
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মঞ্চ জুড়ে বেশ কিছু সংহতি প্রচারাভিযান সঞ্চালিত হতে দেখা গেছে। এসব প্রচারাভিযানে মসুল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
দাব্বাগ সদয় চিত্তে বিভিন্ন কাজ নিয়ে লিখেছেনঃ
Reported that hotels in Mosul are opening up their doors to shelter the displaced families in #Nineveh . #iraq
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 7, 2014
প্রতিবেদনে জানা গেছে যে মসুলের #নিনেভেহ অঞ্চলের হোটেলগুলো পালিয়ে বেড়ানো পরিবারগুলোকে আশ্রয় দিতে তাদের দরজা খুঁজে দিয়েছে।
Bakeries in (Adan, Al thubbat and al sukkar) areas distribute bread for free to people in #mosul#Nineveh#iraq
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 7, 2014
(আদান, আল থুব্বাত এবং আল সুক্কার এলাকার) বেকারীগুলো জনগণের মাঝে বিনামূল্যে রুটি বিতরণ করছে। #মসুল #নিনেভেহ #ইরাক
যেহেতু শহর জুড়ে এখনও দাঙ্গা চলছে, তাই দাব্বাগের টুইট গুলো তাঁর পরিবারের কথা চিন্তা করে লেখা হয়েছে। তাঁর পরিবার এখনও ইরাকে অবস্থান করছেঃ
I haven't seen my parents glued to tv like this since 2003 . I pray for the safety of my family and Iraqis in #mosul and #iraq .
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 7, 2014
২০০৩ সাল থেকে আমি আমার বাবা-মা কে কখনও এভাবে টেলিভিশন দেখতে দেখিনি। আমি আমার পরিবার এবং #মসুল এবং #ইরাকে বসবাসকারী ইরাকিদের নিরাপত্তার জন্য পার্থনা করছি।
প্রতিবেশী দেশ সিরিয়াও একই পথে হাঁটছে বলে তিনি মনে করেনঃ
Media narratives are confusing masses now in #iraq. Similar patterns from the Syrian war
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 7, 2014
ইরাকে বর্তমানে প্রচার মাধ্যমের বৃত্তান্তগুলো সাধারণ লোকজনকে বেশ দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলছে। সিরিয়ার যুদ্ধেও একই ঘটনা ঘটেছিল।
তাঁর নিজের শহরকে গ্রাস করে ফেলা সন্ত্রাসকে তুলনা করতে তিনি বর্তমান ইতিহাসের দিকে পিছন ফিরে তাকিয়েছেনঃ
This displacement is a first in #mosul history , even with 2003 the city has not seen such extreme measures. #iraq
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 7, 2014
মসুল এর ইতিহাসে ক্ষমতা দখলের ঘটনা এটাই প্রথম। এমনকি ২০০৩ সালেও এই শহরে এতোটা ভয়াবহতা দেখা যায়নি।
৯ জুন তারিখে তাঁর টুইট গুলো নতুন মোড় নিয়েছে। তিনি রিপোর্ট করেছেনঃ
Reports from family in #mosul that electricity is off . Complete shutdown
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 9, 2014
মসুলে অবস্থানকারী পরিবারগুলোর কাছ থেকে জানা গেছে, সেখানে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন।
শীঘ্রই শহরটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। হাজার হাজার পরিবারের মতো তাঁর পরিবারও শহরটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেঃ
Family is evacuating homes in #mosul . لا حول و لا قوة الا بالله العلي العظيم
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 9, 2014
#মসুল থেকে আমার পরিবার চলে যাচ্ছে।
আর তারপর…
News confirming that the city is hours away from falling completely under the control of the armed militants. Army fled this morning #mosul
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 10, 2014
খবরে নিশ্চিত করা হয়েছে যে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শহরটি পুরোপুরিভাবে সশস্ত্র জঙ্গীদের দখলে চলে যেতে যাচ্ছে। আজ সকালে #মসুল থেকে সামরিক বাহিনী পালিয়ে গেছে।
আজ তাঁর টুইটে দেখা যাচ্ছে, তাঁর পরিবার কুর্দিশ সীমানার কাছাকাছি গিয়ে আঁটকে গেছে। তিনি বর্ননা করেছেনঃ
Family stuck in car on the borders to duhook, no car is given access. Reports that tents are being prepared for the displaced #mosul
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 10, 2014
দুহকে যাওয়ার সীমানায় একটি গাড়িতে আমার পরিবার আঁটকে আছে। সেখানে কোন গাড়ি ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। প্রতিবেদনে জানা গেছে #মসুল থেকে পালিয়ে আসা লোকেদের জন্য সেখানে তাঁবু প্রস্তুত করা হচ্ছে।
Al Kharez area on the borders to #irbil is completely closed. Chaos! Phonelines cut . People are disconnected . #iraq
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 10, 2014
#ইরবিল এ যাওয়ার পথে আল খারিজ এলাকায় অবস্থিত সীমানাটি পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কী বিশৃঙ্খলা! টেলিফোন লাইনগুলোও কেটে দেয়া হয়েছে। লোকেরা একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। #ইরাক
অতঃপর, দাব্বাগ পরষ্পর বিরোধী প্রতিবেদনগুলোতে যুক্তি প্রয়োগ করতে চেষ্টা করেছেনঃ
Kurdish prime minster says #kurdistan is open to refugees from #mosul. But on ground reports from Iraqis there claim the borders are closed
— Maryam Al Dabbagh (@maryamwd) June 10, 2014
কুর্দিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন #মসুল থেকে আগত শরনার্থীদের জন্য #কুর্দিস্তানের দরজা খোলা। কিন্তু সেখানে অবস্থানকারী ইরাকিরা জানিয়েছেন সীমানা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
জাইদ বেনজামিন টেলিভিশন দেখে খুব অবাক হয়েছেন। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর যেখানে জঙ্গীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে বসেছে, সেখানে ইরাক টেলিভিশন গান সম্প্রচার করছে দেখে তিনি হতবাকঃ
التلفزيون العراقي الان مع ورود انباء عن خروج ثاني مدن #العراق عن السيطرة الحكومية بحسب محافظها اثيل النجيفي pic.twitter.com/IjJIb7mmuR
— Zaid Benjamin (@zaidbenjamin) June 10, 2014
সানবাদিক হাসান মন্তব্য করেছেনঃ
Iraqi state TV shows an interview with singer Abdulhusain Allami while Baghdad is losing control over a second city https://t.co/fDTgpWRzae
— Hassan Hassan حسن (@hhassan140) June 10, 2014
দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের উপর থেকে বাগদাদ যখন নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ঠিক সে সময়ে ইরাকি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন শিল্পী আব্দুলহুসেন আলামির সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করছে।
নৈরাজ্য প্রকাশিত হয়ে পরেছে বলে আরব বিশ্ব তা দেখছে।
বাহরাইন থেকে হুদা আল মাহমুদ বিস্ময় [আরবি] প্রকাশ করেছেনঃ
كارثة جديدة تحل بالوطن العربي.. ولا أتصور أن وصول القاعدة الى الموصل سيخدم أحدأ !! يامن تكافحون الإرهاب!! #الموصل
— Huda Al-Mahmood (@Huda_E_AL) June 10, 2014
আরব বিশ্বে একটি নতুন বিপর্যয় ঘটে গেছে। আমি মনে করি না আল কায়েদা মসুল দখল করে নিলে কারও কোন উপকার হবে। সন্ত্রাস বিরোধী সব উদ্যোগ এখন কোথায় গেল?
ফিলিস্তিনের মাথ মুসলেহ প্রশ্ন করেছেনঃ
داعش تطلق 2725 سجين من سجن #الموصل…كم منهم رح ينضم لداعش؟ #العراق
— مَعاذ مصلح (@MaathMusleh) June 10, 2014
আইএসআইএস মসুল কারাগার থেকে ২৭২৫ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছিল। তাদের কতজন আইএসআইএস বাহিনীতে যোগ দিয়েছে?
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি পরিষ্কারভাবে বলেছেনঃ
داعش تسيطر على #الموصل !!! أتوقع ان يكون لهذا الخبر تداعيات حتى خارج العراق .
— جمال خاشقجي (@JKhashoggi) June 10, 2014
আইএসআইএস বাহিনী মসুলের নিয়ন্ত্রণ ভার নিয়ে নিয়েছে। আমি আশা করি ইরাকের বাইরে এই খবরটি প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে।